ঘূর্ণাবর্ত নেই, অক্ষরেখাও দুর্বল, আবার মন্দা বৃষ্টিতে

শনিবার তার ঝোড়ো ইনিংস দেখেছিল তামাম দক্ষিণবঙ্গ। রবিবার বৃষ্টি কিন্তু নেহাতই ঝিমিয়ে পড়ল। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা করলেও কলকাতায় বৃষ্টির দেখা মিলল না। বর্ষণমুখর ছুটির রাতে বাড়িতে বসে জমিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখার আশা মাঠে মারা গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

শনিবার তার ঝোড়ো ইনিংস দেখেছিল তামাম দক্ষিণবঙ্গ। রবিবার বৃষ্টি কিন্তু নেহাতই ঝিমিয়ে পড়ল। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা করলেও কলকাতায় বৃষ্টির দেখা মিলল না। বর্ষণমুখর ছুটির রাতে বাড়িতে বসে জমিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখার আশা মাঠে মারা গেল। হাওয়া অফিস আজ, সোমবার দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে।

Advertisement

শনিবার একটি নিম্নচাপ-অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণে সরে এসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা এক শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে জোট বাঁধে। পরিণামে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে জোরালো বর্ষণ। বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়ে ঘন ঘন বাজও পড়ে। সেই নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত এ দিন মুখ লুকোল কোথায়?

আলিপুর অফিসের ব্যাখ্যা, দক্ষিণবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ-অক্ষরেখাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণাবর্তটি সরে গিয়েছে বাংলাদেশের দিকে। অতএব বৃষ্টির বাজার মন্দা। আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও সে জল ঝরাতে পারেনি।

Advertisement

বস্তুত চলতি মরসুমে দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্য খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। মার্চ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঘাটতি তো ৪৯ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল! দুঃসহ শুকনো গরমে ভাজা-পোড়া হতে হচ্ছিল মানুষকে। গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা নিম্নচাপ, এবং শনিবার অক্ষরেখা-ঘূর্ণাবর্তের যুগলবন্দির দৌলতে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হলেও আবহ-বিজ্ঞানীরা একে সাময়িক স্বস্তির চেয়ে বেশি কিছু বলতে এখনই নারাজ। ওঁদের অনুমান, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকতে এ বছর কিছুটা দেরিই হবে। অক্ষরেখা-ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব কাটলে বৃষ্টির ঘাটতি ফের মাথাচাড়া দিতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেরও কপালে ভাঁজ। কারণ, ওই তল্লাটে বর্ষা নির্ভর করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপরে। ও সেখানেও বর্ষার ট্রেন লেট করছে। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী এ দিনই (১ জুন) অসমে বর্ষা ঢোকার কথা ছিল, যা ৫ জুন নাগাদ কোচবিহার হয়ে উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যেত। কিন্তু মৌসুমি বায়ু এ বার সেই নির্ঘণ্ট মানেনি। কী রকম?

মৌসম ভবনের খবর, মৌসুমি বায়ুর যে আন্দামান-মায়ানমার বাহুটি অসম হয়ে উত্তর-পূর্বে ঢোকে, ২৩ মে সেটি মায়ানমারে পৌঁছেছে। “ন’দিন ধরে সে ওখানেই দাঁড়িয়ে।” জানাচ্ছেন এক আবহ-বিজ্ঞানী। তাই উত্তর-পূর্বে বর্ষা ঢুকতে দেরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

বর্ষার মতি-গতি এমন বেখাপ্পা কেন? আবহ-বিজ্ঞানীদের একাংশের মত, প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু উপকূলে সমুদ্রতলের উষ্ণতা বেড়ে ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ষা-নির্ঘণ্ট ওলটপালট হচ্ছে। মৌসম ভবন তা মানে না। যদিও তারাও জানিয়েছে, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে এ বার বর্ষা ঢুকতে দেরি হতে পারে। মৌসম ভবনের ব্যাখ্যা: উত্তর ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে আপাতত মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি নেই। “তা না-থাকাতেই মৌসুমি বায়ু কিছুটা দুর্বল হয়েছে।” এ দিন বলেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।

গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। অক্ষরেখা-ঘূর্ণাবর্তে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও উত্তর-পূর্বের কপাল তত ভাল নয়। মৌসম ভবনের তথ্য: অসম, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে এই মুহূর্তে বৃষ্টির ঘাটতি ৩০%-৫০%। বর্ষা ঢুকতে যত দেরি হবে, ঘাটতির বহর ততই চড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement