গ্রেফতার হওয়া রাজু তিওয়ারি। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
সালকিয়ার প্রতিবাদী যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর খুনের ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিল সিআইডি। শুক্রবারই হাওড়া সিটি পুলিশ সিআইডির হাতে তদন্তভার তুলে দেয়। যদিও এই ঘটনায় সিটি পুলিশ ইতিমধ্যেই এক অভিযুক্তকে ধরেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজীব তিওয়ারী ওরফে রাজু নামে যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জেরায় প্রাথমিক ভাবে অরূপকে মারধরের ঘটনায় সে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। পাশাপাশি পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক এ-ও স্বীকার করেছে যে তরুণীদের উত্যক্ত করা নিয়েই তাদের সঙ্গে অরূপদের গোলমাল বেধেছিল। তার জেরেই অরূপকে মারধর করা হয়।
সালকিয়ার ওই প্রতিবাদী যুবকের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার পিছনে দু’টি গোষ্ঠীর গোলমালের তত্ত্ব তুলে ধরে দাবি করেছিলেন, যে মহিলাদের কটূক্তি করা হয়েছে, তাঁদের তো খুঁজে বার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এমনটা বললেও অভিযুক্ত যুবক মেনে নিয়েছেন যে, মহিলাদের ঘিরেই বাধে বচসা।
এক অভিযুক্ত গ্রেফতারের পাশাপাশি অরূপ খুনের ঘটনার তদন্তভার এ দিন সিআইডির হাতে যাওয়ায় খুশি নিহতের পরিবার। অরূপের ভাই অমর ভাণ্ডারী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস-ভরসা দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কথা রেখেছেন। এক জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরাও ধরা পড়বে আশা করি। আরও ভাল করে তদন্ত করার জন্যই সিআইডিকে ভার দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে।”
এ দিকে, ঘটনার ৯ দিন পরে বৃহস্পতিবার বারাণসীর গাজিপুর থেকে অরূপের খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজুকে গ্রেফতার করে শুক্রবার দুপুরে হাওড়ায় নিয়ে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরের দিনই পরিবারের সকলকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশে দেশের বাড়িতে পালিয়ে যায় রাজু। পরে সেখান থেকে বারাণসীর গাজিপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখান থেকে হাওড়ায় এক বন্ধুর এসটিডি বুথে ফোন করে এলাকার খবর নেওয়ার চেষ্টা করতেই পুলিশের কাছে খবর চলে যায়। সেই ফোনের সূত্র ধরেই বারাণসী রওনা দেয় গোয়েন্দাদের দল। এর পরে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে রাজুকে গ্রেফতার করে হাওড়ায় নিয়ে আসে। ধৃতকে এ দিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে তার ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।
এ দিন সালকিয়ার বিবিবাগানে অরূপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনও খুব অসুস্থ ওই যুবকের মা মেনকা ভাণ্ডারী। পরিবারের লোকেরা জানান, সকালেও চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে গিয়েছেন। টালির চালের ছোট ঘরের সামনে বসে রয়েছেন কয়েক জন প্রতিবেশী। তাঁরা জানালেন এ দিন অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অরূপের বাড়িতে আসেননি। প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা ক’দিন ধরে সালকিয়ার বিবিবাগান এলাকায় যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, এ দিন তা অনেকটাই শান্ত হয়েছে। যদিও বিবিবাগানে অরূপদের বাড়িতে ঢোকার গলির সামনে এ দিনও ছিল পুলিশ পিকেট।