চ্যালেঞ্জের পাল্টা তিন মহামিছিল করছে তৃণমূল

রাজ্যে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের উত্থান স্বীকারেই অনীহা তৃণমূলের। আর একটি দলের সম্পর্কে তারা প্রচার করে সেটি সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। অথচ সেই দুই দলের আন্দোলনের মোকাবিলায় পাল্টা কর্মসূচি নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সভা করার অনুমতি না দেওয়ায় মেদিনীপুর শহরে বুধবার বিশাল মিছিল করেছে বিজেপি। সেই মিছিলের পরেই তপসিয়ায় তৃণমূল ভবন থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অভিযোগ করলেন, “বিজেপি বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তারা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২১
Share:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মেদিনীপুর শহরে দলীয় মিছিল। বুধবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

রাজ্যে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের উত্থান স্বীকারেই অনীহা তৃণমূলের। আর একটি দলের সম্পর্কে তারা প্রচার করে সেটি সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। অথচ সেই দুই দলের আন্দোলনের মোকাবিলায় পাল্টা কর্মসূচি নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

সভা করার অনুমতি না দেওয়ায় মেদিনীপুর শহরে বুধবার বিশাল মিছিল করেছে বিজেপি। সেই মিছিলের পরেই তপসিয়ায় তৃণমূল ভবন থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অভিযোগ করলেন, “বিজেপি বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তারা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে।” আর তারই প্রতিবাদ জানাতে আজ, বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর কলেজ ময়দান থেকে তৃণমূলের ‘মহামিছিল’ শহর পরিক্রমা করবে। সেই মিছিলে মুকুলবাবু অবশ্য থাকতে পারবেন না। কিন্তু রাজ্য নেতাদের কয়েক জন থাকবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এ দিন মেদিনীপুরে তাঁদের কর্মসূচিতে মানুষের ঢল দেখে শাসক দল প্রমাদ গুনেছে। তাই ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করছেন। তাঁদের সভা করার অনুমতি না দেওয়ায় জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে তাঁরা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে আজ কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করবে বিজেপি। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “আইনশৃঙ্খলা দেখা পুলিশের কাজ। পুলিশ সেটাই করেছে।”

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলেও উত্তরবঙ্গ ‘উপেক্ষিত ও বঞ্চিত’ বলে অভিযোগ তুলে কাল, শুক্রবার শিলিগুড়িতে ‘উত্তরকন্যা’ অভিযানের ডাক দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের এই কর্মসূচির প্রতিবাদ জানাতে পরশু, শনিবার শিলিগুড়ি ও বহরমপুরে পাল্টা ‘মহামিছিল’ করবে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশেই মুকুলবাবুরা এই দু’টি কর্মসূচি নিয়েছেন। শিলিগুড়ি ও বহরমপুরে কেন তাঁরা মহামিছিল করবেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ দিন মুকুলবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গ বাম আমলে সরকারের মনোযোগ পায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মনোযোগ দিয়েই উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের কাজ করছে। ‘উত্তরকন্যা’ স্থাপন করেছে। আর সেখানে অশুভ শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠছে বলেই আমরা প্রতিবাদ মিছিল করব।”

মুকুলবাবুর সঙ্গে একযোগে দলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কোনও কোনও দল অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা গণতান্ত্রিক পথে তার প্রতিবাদ করব।” কিন্তু বহরমপুরে মিছিল কেন তা জানাতে গিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অধীর-গড় বলে পরিচিত বহরমপুরে বিশাল মিছিল করে আমরা কংগ্রেসকে দেখিয়ে দিতে চাই, বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা হলে মানুষ মেনে নেবে না।”

বহরমপুরের মিছিলকে বিশালাকার করতে তৃণমূল ভবনে মুর্শিদাবাদের সমস্ত নেতাকে জরুরি বৈঠকে ডেকেছিলেন মুকুলবাবু ও পার্থবাবু। কারণ মর্শিদাবাদে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে দলের ‘ঐক্যবদ্ধ’ ছবি তুলে ধরতে চান মুকুলবাবুরা। কিন্তু বৈঠকে হুমায়ুন কবীর, সাগিরুদ্দিনর মতো নেতা, বিধায়ক সুব্রত সাহা-সহ জেলার শীর্ষ নেতারা থাকলেও ছিলেন না জেলার পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেন। তবে দলের অপর জেলা পর্যবেক্ষক আশিস চক্রবর্তী ছিলেন। আশিসবাবুই জানান, জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় ইন্দ্রনীল বৈঠকে থাকতে পারেননি। শিলিগুড়িতে মহামিছিলে রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব এবং বহরমপুরে পার্থবাবুর নেতৃত্ব দেওয়ার কথা।

রাজ্যে দু’টি উপনির্বাচনের আগে তাদের দুই প্রধান প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই শাসক দল মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি এবং বহরমপুরে পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্ব।প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে আমরা একটা কর্মসূচি নিয়েছি। সেটা হওয়ার আগেই পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূল বুঝিয়ে দিল, তারা আমাদের নিয়ে চিন্তিত।” বিজেপি নেতা অসীমবাবু বলেন, “শাসক দল আমাদের মিছিল দেখে উদ্বিগ্ন হয়েই তড়িঘড়ি পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছে।”

মুকুলবাবুদের অবশ্য বক্তব্য, রাজ্যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ দেখে বিরোধী দলগুলি থেকে প্রতিদিন নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। তাই তাদের অভিযোগ অবান্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন