চার বছর পরে বারাসতে রাজীব-হত্যার রায় পরশু

দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-র রাতে বারাসত জেলা শহরেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। আগামী বৃহস্পতিবার, আর এক ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দু’দিন আগে সেই মামলার রায় ঘোষণা করবেন বারাসত আদালতের বিচারক। খুনের ঠিক চার বছর পরে। চার বছর আগে, সেই রাতে কলকাতায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন রাজীবের দিদি রিঙ্কু। দিদিকে সঙ্গে করে আনবেন বলে সাইকেল নিয়ে বারাসত স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন রাজীব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
Share:

দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-র রাতে বারাসত জেলা শহরেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। আগামী বৃহস্পতিবার, আর এক ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দু’দিন আগে সেই মামলার রায় ঘোষণা করবেন বারাসত আদালতের বিচারক। খুনের ঠিক চার বছর পরে।

Advertisement

চার বছর আগে, সেই রাতে কলকাতায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন রাজীবের দিদি রিঙ্কু। দিদিকে সঙ্গে করে আনবেন বলে সাইকেল নিয়ে বারাসত স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন রাজীব। অন্যান্য দিনের মতো দিদিকে সাইকেলে বসিয়ে বারাসত স্টেশন থেকে বাড়ির পথ ধরে ওই কিশোর। শহরের যে-এলাকায় জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তার বাস, সেখানকার রাস্তাতেই তিন মদ্যপ যুবক তাদের থামায়। রিঙ্কুকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে তারা, তাঁর গায়ে মদ ঢেলে দেয়। রাজীব রুখে দাঁড়ানোয় তাকে পেটাতে থাকে দুষ্কৃতীরা। চিৎকার করে সাহায্য চেয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের বাংলোর কাছেই প্রশাসনিক কর্তাদের বাসভবনের দরজা ধরে ঝাঁকাতে থাকেন রিঙ্কু। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। রাজীব ইতিমধ্যে কোনও রকমে দুষ্কৃতীদের হাত ছাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাড়া করে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাকে।

সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা রাজ্য। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতানেত্রীরা দফায় দফায় ঘটনাস্থলে গেলেও তাঁদের ফিরিয়ে দেয় জনতা। রাজীবের মৃতদেহ দাহ করার দায়িত্ব নেয় জনতাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এলাকাবাসী। শেষ পর্যন্ত তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে চার্জশিট দেয় সিআইডি। দমদম জেলে শনাক্তকরণের সময় মূল অভিযুক্ত মিঠুনের গালে চড় কষিয়ে দেন রিঙ্কু।

Advertisement

বারাসত আদালতে সেই মামলার বিচার চলছিল। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করবেন প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাসত জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তথা রাজীব হত্যাকাণ্ড মামলার বিশেষ কৌঁসুলি শান্তময় বসু সোমবার বলেন, “তিন জন দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা ঘোষণা করবেন ওই বিচারকই।”

সেই রাতের পরে বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোন না রিঙ্কু। পুত্রহারা মা-বাবাও রয়েছেন দোষীদের শাস্তির নির্দেশের প্রতীক্ষায়। রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হয়েছে শুনে এ দিন কিছু ক্ষণ থমকে থাকেন রিঙ্কু। তার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চার বছর আগের সেই অভিশপ্ত রাতের স্মৃতি আবার যেন টাটকা হয়ে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন