প্রাথমিক পূর্বাভাসে আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টি-ঘাটতির কথা বলা হয়েছিল। চূড়ান্ত পূর্বাভাসেও এ বার দেশে স্বাভাবিক বর্ষার সুলুক-সন্ধান দিতে পারল না মৌসম ভবন।
সোমবার বর্ষার চূড়ান্ত পূর্বাভাসে দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৯৩ শতাংশ বৃষ্টি হতে পারে। আবহবিদদের হিসেব অনুযায়ী যেটা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। এপ্রিলে বর্ষার প্রাথমিক পূর্বাভাসে মৌসম ভবন জানিয়েছিল, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে দেশের স্বাভাবিক বর্ষার ৯৫ শতাংশ বৃষ্টি হতে পারে। চূড়ান্ত পূর্বাভাসে সম্ভাব্য বর্ষণের মাত্রা তার থেকেও দু’শতাংশ কমে গিয়েছে।
এ বার বর্ষা যে খারাপ হবে, তা বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ আগেই আঁচ করেছিলেন। কারণ, এ বছরই পেরু উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বেড়ে গিয়েছে। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাই ‘এল নিনো’। এবং তার প্রভাবেই বর্ষার হাল এ বার খারাপ হবে বলে জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। এ দিন মৌসম ভবনের বিজ্ঞানী ব্রহ্মপ্রকাশ যাদবও বলেন, “বর্ষার খারাপ দশার জন্য এল নিনো অন্যতম দায়ী। তবে এর সঙ্গে আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে।”
বর্ষণ-ঘাটতির পরিণাম মালুম হবে পরে এবং ধীরে ধীরে। কিন্তু ইতিমধ্যে বর্ষা যে-দেরি করে ফেলেছে, তাতে নাছোড়বান্দা আচরণ করছে গরম। উত্তর ভারতে চোখ রাঙাচ্ছে শুকনো তাপপ্রবাহ। রবিবার দিল্লির তাপমাত্রা ৪৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছয়। সোমবারেও সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় একই ছিল (৪৬.৬)। রাজধানীতে পারদের এমন উত্থান এর আগে কত বার দেখা গিয়েছে, মৌসম ভবন সেটা অবশ্য জানাতে পারেনি। তবে তাদের নথি বলছে, ১৯৪৪ সালের ২৯ জুন দিল্লির তাপমাত্রা ৪৭.২ ডিগ্রিতে উঠেছিল। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাসে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা বায়ুপ্রবাহ)-র দাপটে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছিল। তার জেরে তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি। এখন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসা বন্ধ হওয়াতেই তরতরিয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। “তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজস্থান থেকে বয়ে আসা গরম হাওয়াও,” মন্তব্য মৌসম ভবনের এক আবহবিদের।
বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণবঙ্গে জোলো হাওয়া না-ঢোকায় এপ্রিল-মে মাসে শুকনো গরমের কবলে পড়েছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। এখন চলছে ভ্যাপসা গরম। তীব্র আর্দ্রতায় ঘরে বসেও ঘামতে হচ্ছে কুলকুলিয়ে। “দখিনা হাওয়ায় ভর করে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। তার ফলেই এই অবস্থা,” বললেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
দখিনা হাওয়া জোরালো হলেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আশা কিন্তু দূর অস্ৎ। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, আরবসাগরে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে। তা আরও শক্তি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার জেরে বর্ষা দক্ষিণ ভারত ছেড়ে কয়েক দিন নড়তে পারবে না।
তা হলে মৌসুমি বায়ু কত দিনে দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছবে? আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নিম্নচাপটি শক্তিশালী হওয়ার পরে কোন দিকে বয়ে যায়, তার উপরেই বর্ষার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করছে। “তবে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসতে এ বার বেশ দেরিই হবে,” মন্তব্য গোকুলবাবুর।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে দখিনা বাতাস সক্রিয় থাকায় মৌসুমি বায়ুর মায়ানমার শাখাটি অবশ্য কিছুটা জোর পেয়েছে। আজ, মঙ্গলবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দু’-একটি রাজ্যে বর্ষা ঢুকতে পারে। সেই মৌসুমি বায়ুর হাত ধরে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির একাংশে বর্ষা ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে। হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী বলেন, “উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ এলাকায় বর্ষা অবশ্য দক্ষিণবঙ্গের মতোই অনিশ্চিত।”