জঙ্গি নয়, ঘরের ছেলে ফিরে এল উত্তরবাড়ে

ছেলে গেল কোথায়? সে-ই কি সুবহান ওরফে স্বপন? কেন ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না? গত কয়েক দিন প্রশ্নে-প্রশ্নে জেরবার উত্তরবাড়ের পরিবারটি। কখনও পুলিশ, কখনও সংবাদমাধ্যম, কখনও কৌতূহলী পরিচিত জন। গোয়েন্দারা আঁচ করতে চাইছিলেন, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে মৃত সুবহান মণ্ডল আসলে এই বাড়িরই ‘নিখোঁজ’ মেজো ছেলে গৌতম কি না।

Advertisement

কৌশিক মিশ্র

ভগবানপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

ভগবানপুর থানার সামনে বাবা ও মায়ের সঙ্গে গৌতম মণ্ডল।

ছেলে গেল কোথায়?

Advertisement

সে-ই কি সুবহান ওরফে স্বপন?

কেন ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না?

Advertisement

গত কয়েক দিন প্রশ্নে-প্রশ্নে জেরবার উত্তরবাড়ের পরিবারটি। কখনও পুলিশ, কখনও সংবাদমাধ্যম, কখনও কৌতূহলী পরিচিত জন। গোয়েন্দারা আঁচ করতে চাইছিলেন, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে মৃত সুবহান মণ্ডল আসলে এই বাড়িরই ‘নিখোঁজ’ মেজো ছেলে গৌতম কি না।

সব জল্পনায় জল ঢেলে অবশেষে পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরবাড়ের বাড়িতে ফিরলেন গৌতম মণ্ডল। জঙ্গি-তকমা ঘোচাতে বাড়ির লোকেরাই আঁতিপাঁতি করে খুঁজে তাঁর সন্ধান পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরেন দাদা গৌরহরি ও খুড়তুতো ভাই বিশ্বজিৎ। শুক্রবার সকালে তাঁকে নিয়ে ভগবানপুর থানাতে যান। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে ভগবানপুর থানার ওসি শম্ভু রুইদাস বলেন, “পরিবার লোকেরা যখন বলছেন এই যুবকই গৌতম, আমাদের আপত্তির কারণ নেই। তবে ওঁকে বলেছি, এলাকা ছাড়ার আগে পুলিশকে জানাতে।”

গোলযোগ বেধেছিল বিস্ফোরক তৈরির পান্ডা সুবহানের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি থেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত্যুর আগে জড়ানো গলায় সে যা বলে, তাতে মনে হয়েছিল, তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়ায়। ওই নামে কোনও গ্রামের হদিস না পেয়ে জেলা পুলিশ ধরে নেয়, সুবহান ‘উত্তরবাড়’ কথাটি বলতে চেয়েছিল। ওই গ্রামে গোপাল মণ্ডলের বছর চব্বিশের ছেলে নিখোঁজ জেনে পুলিশ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মৃতের ছবিও তাঁদের কাছে পাঠানো হয়।

সেই থেকেই বিভ্রান্তির শুরু।

গোপালবাবু অবশ্য গোড়া থেকেই বলছিলেন, তাঁর ছেলের নাম স্বপন কিংবা সুবহান নয়। গত বারো বছর ছেলে বাড়িতে থাকে না, কলকাতায় কাজ করে। মৃতের ছবি তাঁর ছেলের সঙ্গে মিলছে না। কিন্তু পুলিশি জেরায় অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই পেতেই তাঁরা গৌতমকে খুঁজতে শুরু করেন।

গোপালবাবুর কথায়, “আমার ভাইপো বিশ্বজিৎ কলকাতার সিঁথিতে থাকে। ওকেই বলি গৌতমের খোঁজ করতে। গৌরহরিও কলকাতা রওনা হয়।” মাস ছয়েক আগে শেষ বাড়ি এসে গৌতম বলেন, শ্যামবাজারের কাছে চাউমিনের দোকানে রান্নার কাজ করেন। সেই সূত্র ধরে শুরু হয় খোঁজা। বিশ্বজিৎ বলেন, “গৌতমকে যিনি কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই একাদশী মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরে ক্যাটারারের কাছে ও কাজ করে। বৃহস্পতিবার সকালে সেই মতো আমরা শ্যামপুকুরে যাই।”

কিন্তু শ্যামপুকুরে গিয়ে দেখা যায়, সে অন্য লোক। গৌরহরি বলেন, “মনটা দমে গিয়েছিল। ভাইকে কী করে খুঁজে পাব, বুঝতে পারছিলাম না।” এই যখন অবস্থা, হঠাৎই এক চায়ের দোকানি গৌতমের চেহারার বর্ণনা শুনে জানান, তেমন এক জন ওই এলাকায় ক্যাটারারের কাছেই কাজ করে। সন্ধে নাগাদ দেখা মিলবে। সেই মতো গৌরহরি, বিশ্বজিৎ, একাদশী ও তাঁর ছেলে সঞ্জিত অপেক্ষা করতে থাকেন। গৌরহরি বলেন, “সন্ধে ৭টা নাগাদ ভাই ফেরে। ওকে দেখে ধড়ে প্রাণ আসে। রাতেই গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিই।”

এ দিন দুপুরে গৌতমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিদের ভিড়। প্রতিবেশী ছবি মণ্ডল বলেন, “অনেক দিন পরে দেখছি। তবে এ যে আমাদের গৌতম, তাতে সন্দেহ নেই।” গৌতমের সম্পর্কিত কাকা সুবল মণ্ডল বলেন, “সন্দেহের জেরে শুধু আমাদের পরিবার নয়, গোটা এলাকারই বদনাম হচ্ছিল।” গোপালবাবু ও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্নাবালা বলেন, “হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার ছেলে জঙ্গি নয়, তা তো প্রমাণ হল!”

আর গৌতম?

সাদাসিধে ছেলেটি বলেন, “রোজগারপাতি বিশেষ করি না বলে বাড়ি আসা হয় না। মোবাইলও নেই। আমাকে নিয়ে যে এত কাণ্ড হচ্ছে, জানব কী করে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন