জঙ্গলমহল নিয়ে বৈঠক, শহরে ডিজি

জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হল মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি জি এম পি রেড্ডি, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-এর পদস্থ কর্তারা। ছিলেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপাররা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০১:২৮
Share:

মেদিনীপুরে ডিজি (বাঁ দিকে), পুলিশ সুপার।

জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হল মেদিনীপুরে। বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি জি এম পি রেড্ডি, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-এর পদস্থ কর্তারা। ছিলেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপাররা।
পুলিশের এক সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদীদের প্রভাব বাড়ার আশঙ্কা এ দিনের বৈঠকে উড়িয়ে দেননি রাজ্য পুলিশের কর্তারা। বরং তাঁদের পরামর্শ, কোনও সূত্র থেকে খবর এলেই সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখতে হবে। মাওবাদীরা যেখানে যেখানে আশ্রয় নিতে পারে, সেখানে নজরদারি বাড়াতে হবে। বৈঠক শেষে ডিজি বলেন, ‘‘পর্যালোচনা বৈঠক হল। দু’মাস আগেও এখানে এসে বৈঠক করেছি। জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু তথ্য আসছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তবে কি ফের সক্রিয় হচ্ছে মাওবাদীরা? এ বার অবশ্য ডিজির জবাব, ‘‘উদ্বেগজনক কিছু নয়।’’ তবে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি তোলা চেয়ে মাওবাদীরা ব্যসায়ীদের হুমকি-চিঠি দেওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।
জঙ্গলমহল সত্যিই হাসছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে খোদ রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা-রিপোর্টই। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, মাওবাদীরা ফের তোলা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। মাওবাদী স্কোয়াডের সদস্যরা দল বেঁধে এসে এই এলাকায় থেকেও যাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে মাওবাদীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইবি। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে তল্লাশিতে ফাঁক রাখতে চাইছে না পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরে গত কয়েক মাসে কয়েকটি এলাকা থেকে মাওবাদীদের নাম লেখা পোস্টার মিলেছে। ছত্রধর মাহাতোদের সাজা হওয়ার পরপরই শালবনির বাগমারির জঙ্গল থেকে বেশ কিছু পোস্টার উদ্ধার হয়। সাদা কাগজের লাল কালিতে কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ছত্রধর মাহাতোদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হল কেন বাংলার দিদি জবাব দাও’, কোনওটিতে লেখা ছিল, ‘কিষেনজিকে আলোচনার নাম করে মারা হল কেন বাংলার দিদি জবাব দাও,’ আবার কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, ‘লালগড় বিদ্রোহের পথে সমস্ত মানুষ এক হও’। বেলপাহাড়ি, ধেড়ুয়া, গোয়ালতোড় থেকেও এমন পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ অবশ্য পোস্টার উদ্ধারের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতেই নারাজ। পুলিশের দাবি, এগুলো মাওবাদীদের কাজ নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কথায়, “এগুলো মাওবাদীদের পোস্টার নয়।” এক সোর্সের খবরের ভিত্তিতে বুধবারও গোয়ালতোড়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর অবশ্য দাবি, “এটা রুটিন তল্লাশি। এমন তল্লাশি চলেই।”

Advertisement

পুলিশের একাংশ অবশ্য এই সময়টাকে খুব হালকা ভাবে দেখতে নারাজ। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ছত্রধরদের সাজা হল। তার পরপরই পোস্টার উদ্ধার হল। কয়েকটি এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আনাগোনার খবরও মিলছে। তারা এলাকায় থেকেও যাচ্ছে। বিষয়টিকে খুব হালকা ভাবে নিতে ভুল হবে।” রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় শীর্ষ মাওবাদী নেতার কিষেণজির। কিষেনজির মৃত্যুর পর অবশ্য রাজ্যে কোনও মাওবাদী-নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে ‘কিষেনজির বদলা আমরা নেবোই’ এমন লেখা পোস্টারও জঙ্গলমহল থেকে উদ্ধার হয়েছে। মাস কয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ঘাটশিলার চেকাম জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এক কোবরা জওয়ান প্রাণ হারান। ঘটনাস্থল থেকে বেলপাহাড়ির দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। ঝাড়খণ্ডের এই ঘটনায় চিন্তা বাড়ে জেলা পুলিশের। পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড সীমান্ত থেকে মাঝেমধ্যে এ জেলার কিছু এলাকায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। নতুন করে ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা চলছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, সীমানাবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা রয়েছে। কোন কোন এলাকায় মাওবাদীরা নতুন করে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। চার জেলার পুলিশ সুপারই নিজ নিজ জেলার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা মানছেন, “মাওবাদীরা হয়তো সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রত্যাঘাতের পথ খুঁজছে। এক সময় জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের প্রভাব ছিল। ফলে, পথঘাট সবই ওদের চেনা।’’ বৈঠকে জঙ্গলমহল এলাকার প্রতিটি থানাকে আরও সতর্ক করে দেওয়ারও নির্দেশ দেন রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন