প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

জট কাটালেন উপাচার্যই, উঠল অনশন

যাদবপুরের পুনরাবৃত্তি হল না। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেই অনশন-জট কাটালেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। গত সোমবার রাত থেকে অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ ০ জন ছাত্রছাত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরে অনশন তুলে নেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ৬০ শতাংশ উপস্থিতির হার ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। তার বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছিল অনশন আন্দোলন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share:

পড়ুয়াদের মুখোমুখি উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। ছবি: রণজিৎ নন্দী

যাদবপুরের পুনরাবৃত্তি হল না। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেই অনশন-জট কাটালেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। গত সোমবার রাত থেকে অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ ০ জন ছাত্রছাত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরে অনশন তুলে নেন তাঁরা।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ৬০ শতাংশ উপস্থিতির হার ছাড়া ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। তার বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছিল অনশন আন্দোলন। রফাসূত্রে ঠিক হয়েছে, উপস্থিতির হার কম থাকায় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৮০ জন পড়ুয়াকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু ওই ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচনে লড়তে পারবেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা বজায় থাকবে।

আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে নমনীয়তা এবং অনমনীয়তার মিশেলে উপাচার্য যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত অনেকেরই মত। তবে অনশন তুললেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে সকলের মত জানতে গণভোটের পথে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা। তাঁদের মতে, ১৮০ জন নির্বাচনে লড়তে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। গণভোটের ফল জানানো হবে কাল, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

Advertisement

প্রেসিডেন্সির আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক হোক-কলরবের প্রসঙ্গ এ দিন আলোচনায় উঠে এসেছে। আট দিনের মাথায় যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের অনশন মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হস্তক্ষেপে পদত্যাগ করেন উপাচার্য। কিন্তু প্রেসিডেন্সির ছাত্র আন্দোলনে অনুরাধাদেবীর ভূমিকা অনেক সদর্থক বলে মনে করছে রাজ্য সরকারই। যদিও সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি সরকারের কেউ।

যাদবপুরের আন্দোলন ছিল উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে। প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীরা তেমন দাবি জানাচ্ছেন না। তবে যাদবপুরের মতো পরিস্থিতি হলে তিনি যে আগেই সরে যাবেন এ দিন সে কথাও জানিয়েছেন অনুরাধাদেবী। তাঁর কথায়, “ছাত্র-শিক্ষকদের সাহায্য ছাড়া তো আমি কাজ করতে পারব না। যে দিন বুঝতে পারব, তাঁরা আমাকে সাহায্য করতে চাইছেন না, সেদিনই পদ ছেড়ে দেব। কারও বলার অপেক্ষায় থাকব না।”

পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সকলকে যুক্ত করার দাবিতে আমরণ অনশনকে আন্দোলনকে ‘ব্ল্যাকমেল’-এর সামিল বলে মম্তব্য করেন অনুরাধাদেবী। তিনি জানিয়েছেন, এ বার নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হলেও আগামী বছর থেকে অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা না থাকলে কোনও পড়ুয়াকেই ভোটে যুক্ত করা হবে না। এ দিন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পরে উপাচার্য বলেন, “অনশন হল জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরের খুব বড় কোনও ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ। তাকে এত ছোট না করার আবেদন জানাচ্ছি ছাত্রছাত্রীদের কাছে।” ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য দাবি, সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের দাবির কথা শুনে উপাচার্য জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কিছু করার নেই। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা অনশনে বসেন। আন্দোলনকারী ছাত্রী শ্রীমতী ঘোষাল বলেন, “উপাচার্য আলোচনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অন্য কোনও উপায় না থাকায় সাধারণ সভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেই অনশনের সিদ্ধান্ত হয়।”

এ কি ‘হোক কলরবে’র প্রভাব? উপাচার্য তেমন মনে করেন না। বরং তিনি বলেন, “আমার ছাত্রছাত্রীরা বিচক্ষণ। ওরা বাইরের লোকেদের থেকে বেশি বুদ্ধি ধরে। তাই বাইরের কারও দ্বারা প্রভাবিত হবে না।” তিনি যে ছাত্রছাত্রীদের পাশেই আছেন, তা বোঝাতে অনুরাধাদেবীর মন্তব্য, “ওরা আমার কথা শোনে, তারপরে তর্ক করে। আমিও করি। আসলে আমরা সবাই প্রেসিডেন্সিরই পড়ুয়া। কিন্তু বয়স ও সারল্যের কারণে ওরা কখনও কখনও একটু জেদ করে, আমি এই পদে থেকে সেটা করতে পারি না।” তবে ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে সটান অনশনের পথে চলে গিয়েছে, তাতে যে তিনি খুশি হননি, তা স্পষ্ট করে দেন উপাচার্য। এ ভাবে জোর জবরদস্তি করে কিছু আদায় করা উচিত নয় বলেও তাঁর মত।

সাধ্যের বাইরে গিয়েই যে তিনি নিয়ম শিথিল করছেন, তা বোঝাতে অনুরাধাদেবী মঙ্গলবার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, ক্লাসে অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা না থাকলে নির্বাচনে যুক্ত হওয়া যাবে না। সেই নিয়ম কিছুটা শিথিল করেই আমরা ন্যূনতম হাজিরার হার ৬০ শতাংশ করেছিলাম।” নিয়ম শিথিল করলেন কেন? উপাচার্য বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে, তারা হাজিরার কথা জানত না। তা ছাড়া, আগের সেমেস্টারে পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রেও উপস্থিতির ন্যূনতম হারে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সে কথা মাথায় রেখেই কেবল এই বছরের জন্য নির্বাচনের নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।” তিনি জানান, এ বছর নিয়ম ভাঙার জন্য যদি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়কে শাস্তি দেয়, তা তাঁরা মেনে নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন