জনতা ক্ষিপ্ত হলে এ বার বল ছুড়বে পুলিশ

এক পুলিশ-কর্তার ব্যাখ্যা: পাম্প অ্যাকশনের ক্ষেত্রে নলের (ব্যারেল) নীচে থাকা ‘পাম্প হ্যান্ডল’ টেনে চেম্বারে বাতাস পোরা হয়। ট্রিগার টিপলে সেই বাতাস কার্তুজকে ঠেলে বাইরে পাঠায়। অন্য বন্দুকে ট্রিগার দাবালে ‘হ্যামার’ গিয়ে বুলেট ক্যাপ-এ ধাক্কা মেরে গুলি বার করে। ১২ বোরের পাম্প অ্যাকশনে সিসের বুলেট ব্যবহার করলে সেটিও অবশ্য মারণাস্ত্রে পরিণত হবে। ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর বরাত পেয়ে বছর দুয়েক আগে ওই শটগানকে রবার-বল ছোড়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

ট্রিগার টিপলেই ফটাফট শব্দে বেরিয়ে আসছে রংবেরঙের প্লাস্টিক বল। কখনও সঙ্গে আলোর ফুলকিও!

Advertisement

এমন খেলনা বন্দুক বাচ্চাদের হাতে আকছার ঘুরছে। কলকাতার পুলিশও ঠিক করেছে, এ বার তারা বন্দুক থেকে বুলেটের বদলে বল ছুড়বে। এবং সিসের নয়, সে বল হবে পুরোদস্তুর রবারের তৈরি!

বল ‘ফায়ার’ করে পুলিশও কি বাচ্চাদের মতো কোনও খেলায় নামতে চলেছে?

Advertisement

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এখানে খেলাধুলোর প্রশ্ন নেই। বরং ব্যাপারটা ঘোরতর গুরুতর। উত্তেজিত, মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতেই বন্দুক থেকে রবার-বল ছোড়ার পরিকল্পনা, যাতে প্রাণহানির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পুলিশ-কর্তারা আশাবাদী, লোকসভা নির্বাচনের মুখে তপ্ত পরিস্থিতির মোকাবিলায় নতুন অস্ত্রটি যথেষ্ট কার্যকর হবে।

রবারের বল ছোড়ার জন্য দু’টো ১২ বোরের পাম্প অ্যাকশন গান (এক ধরনের শটগান) সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের হাতে এসেও গিয়েছে। অন্য বন্দুকের সঙ্গে তার ফারাকটা কী?

এক পুলিশ-কর্তার ব্যাখ্যা: পাম্প অ্যাকশনের ক্ষেত্রে নলের (ব্যারেল) নীচে থাকা ‘পাম্প হ্যান্ডল’ টেনে চেম্বারে বাতাস পোরা হয়। ট্রিগার টিপলে সেই বাতাস কার্তুজকে ঠেলে বাইরে পাঠায়। অন্য বন্দুকে ট্রিগার দাবালে ‘হ্যামার’ গিয়ে বুলেট ক্যাপ-এ ধাক্কা মেরে গুলি বার করে।

১২ বোরের পাম্প অ্যাকশনে সিসের বুলেট ব্যবহার করলে সেটিও অবশ্য মারণাস্ত্রে পরিণত হবে। ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর বরাত পেয়ে বছর দুয়েক আগে ওই শটগানকে রবার-বল ছোড়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। বছরখানেক আগে কলকাতা পুলিশ তা কিনতে চেয়ে আবেদন করেছিল। “প্রাণঘাতী নয়, এমন বিশেষ বন্দুক আমাদের হাতে এসেছে। তা থেকে রবারের বল ছোড়া যাবে। এর সাহায্যে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যাবে, প্রাণনাশের ঝুঁকিও তেমন থাকবে না। এখানেই এটির কার্যকারিতা।” বলছেন কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) দেবাশিস রায়।

পাম্প অ্যাকশন গান যখন এ হেন ‘ছত্রভঙ্গকারী’র ভূমিকা নেয়, তখন তার ৩০ মিলিমিটারের এক-একটা কার্তুজে ভরা থাকে ছ’টি রবারের বল। এক বার ট্রিগার টিপলে কার্তুজ থেকে বল ছ’টি বেরিয়ে আসে ছররার মতো। মিনিটে দশটা কার্তুজ ছোড়া যায়। এক বার ‘ফায়ার’ করার পরে আবার নতুন করে কার্তুজ ভরতে হয়। বন্দুকের কার্যকর পাল্লা ১২০ মিটার। আর গুলি, থুড়ি বল বেরোয় সেকেন্ডে ৩৬.৫ মিটার গতিবেগে। যা লোকজনকে সে ভাবে জখম না-করলেও হটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে ঘটনা হল, কলকাতা পুলিশ দু’টো বন্দুক পেলেও রবারের বল ভরা কার্তুজ এখনও হাতে পায়নি। কার্তুজ আসবে পুণে থেকে। লালবাজারের চেয়েছে দেড় হাজার কার্তুজ। কর্তাদের অনুমান, জোগান আসতে আসতে আরও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক। কার্তুজ এলে এক সপ্তাহের জন্য কয়েক জন পুলিশকর্মীকে নয়া বন্দুক ব্যবহারের তালিম দেওয়া হবে। লালবাজারের এক শীর্ষ অফিসারের কথায়, “কলকাতায় ভোট ১২ মে। আশা করছি, সে দিন বন্দুক দু’টো নিয়ে আমরা বেরোতে পারব।”

কিন্তু প্রাণনাশের ঝুঁকি এড়িয়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সিসের বুলেটের পরিবর্তে রবার-বুলেটের চল তো এ দেশে শুরু হয়েছে সেই নব্বইয়ের দশকের গোড়ায়! লালবাজার তো বটেই, কলকাতার প্রতিটি থানায় রবার-বুলেট মজুত। তা হলে আবার রবার-বলের দরকার পড়ল কেন?

এক পুলিশ-কর্তার যুক্তি, রবার-বুলেটের অসুবিধে অনেক। এক-একটার ওজন প্রায় পাঁচশো গ্রাম। বেকায়দায় লাগলে তাতে মৃত্যুও হতে পারে। উপরন্তু রবার-বুলেট ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলবর্ষণের বন্দুক দিয়ে। তাতেও সমস্যা তৈরি হয়। হামেশা দেখা যায়, লক্ষ্যভ্রষ্ট রবার-বুলেট কুড়িয়ে সেটা পুলিশের দিকে পাল্টা ছুড়ে দিচ্ছে জনতা। “পাম্প অ্যাকশন গান দিয়ে ছোড়া রবারের বল হবে অনেক ছোট আকারের। মৃত্যু বা পাল্টা ছুড়ে পুলিশকে জখম করার আশঙ্কা নেই” মন্তব্য অফিসারটির।

রবার-বুলেটের পাশাপাশি কলকাতার থানায়-থানায় প্লাস্টিকের বুলেটও দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছুড়তে হয় থ্রিনটথ্রি রাইফেল দিয়ে। যদিও কলকাতা পুলিশ সে ভাবে তা ব্যবহার করছে না। কারণ হিসেবে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “কলকাতার মতো শহরে প্লাস্টিকের গুলি ব্যবহারের ঝুঁকি আছে। কোনও ভাবে বাড়ির দেওয়ালে ধাক্কা খেলে বুমেরাংয়ের মতো এসে পুলিশের গায়েই লাগতে পারে।”

উত্তেজনা প্রশমণে তাই রবার-বলই এখন পুলিশের অন্যতম বলভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন