জনধন প্রকল্পে বাধা জঙ্গলমহল, অভিযোগ কেন্দ্রের

জনধন প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জঙ্গলমহল। পশ্চিমবঙ্গের অন্য এলাকায় নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের জনধন যোজনার কাজ দ্রুত এগোলেও সমস্যা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের মতো যে সব এলাকায় এত দিন মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল, এখন সে সব এলাকাতেই সবার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাঙ্ক কর্তারা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪০
Share:

জনধন প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জঙ্গলমহল।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের অন্য এলাকায় নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের জনধন যোজনার কাজ দ্রুত এগোলেও সমস্যা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের মতো যে সব এলাকায় এত দিন মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল, এখন সে সব এলাকাতেই সবার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাঙ্ক কর্তারা। এমন নয় যে, মাওবাদীরা ফের জঙ্গলমহলে সক্রিয় হয়ে সরকারি প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকা, যোগাযোগের সমস্যা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনবসতি, বাসিন্দার সংখ্যা কম হওয়ায় জনধন প্রকল্পের কাজে বাধা পড়ছে।

জনধন যোজনার প্রাথমিক লক্ষ্য, দেশের সমস্ত পরিবারে অন্তত একটি করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া। আগামী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে এই কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কোন রাজ্যে জনধন প্রকল্প কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে সাংসদদের একটি চিঠি লিখেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে তিনি জানান, ১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের মোট ৮০% পরিবারে অন্তত এক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। কোন জেলায় কতটা কাজ এগিয়েছে, তারও খতিয়ান দিয়েছেন জেটলি। সেই খতিয়ানই বলছে, অন্যা জেলাগুলির তুলনায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া পিছিয়ে রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া বা হুগলি যেখানে প্রায় ৯০% ছুঁয়ে ফেলেছে, সেখানে এই তিনটি জেলা ৭০%-এর আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।

Advertisement

কোথায় সমস্যা তিন জেলায়? পশ্চিমবঙ্গে জনধন যোজনা রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে মূল সমস্যা জঙ্গলমহলকে নিয়ে। ওখানে এখনও সব পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারিনি। ছোট ছোট গ্রামগুলি অনেকটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বেশির ভাগই দেখা যাচ্ছে, একটি গ্রামে হয়তো ১৫ থেকে ২০টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা ১০০-র বেশি নয়।” সমস্যা হল, ব্যাঙ্কের একটি শাখার লোকের পক্ষে গিয়ে সবার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব নয়। এত ছোট গ্রামের জন্য ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি বা ‘ব্যাঙ্ক মিত্র’ নিয়োগ করাও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ মাত্র ১৫টি পরিবারের জন্য কাজ করে ব্যাঙ্ক মিত্রদের যথেষ্ট আয় হবে না। জঙ্গলমহলের মতো একই সমস্যা হচ্ছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতেও।

২৭ নভেম্বর রাজ্য স্তরে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তার পর জেলা স্তরেও পর্যালোচনা হয়। ব্যাঙ্কের শাখাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই সব এলাকায় শিবির খুলে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হোক। তার পর হাট বারের মতো সপ্তাহের বিশেষ কোনও দিনে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা বা টাকা জমা করার মতো পরিষেবা দেওয়া হবে। সকলের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে উদ্যোগী হতে সাংসদদের অনুরোধ করেছেন জেটলি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারা জানাচ্ছেন, ১ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী যে হিসেব দিয়েছেন, জনধন যোজনার কাজ তার থেকে অনেক এগিয়েছে। ৮৭%-এর বেশি পরিবারে কোনও এক জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সারদার মতো লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ঠকার পরে রাজ্যের বহু মানুষই এখন টাকা জমানোর জন্য নিরাপদ আস্তানা খুঁজছেন। আর তাই সবার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদীর জনধন যোজনায় দিদির রাজ্যে বিপুল সাড়া মিলছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৬ জানুয়ারির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ২৭ ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। তাঁদের আশা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেও সব পরিবারে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন