জহিরুলের খোঁজ পেলে থানায় জানান: ইমাম

সন্ত্রাসে জড়ায়নি গ্রাম। নাম জড়িয়েছে গ্রামের বাসিন্দা এক যুবকের। কিন্তু এলাকা ছেড়ে বেরোলেই খাগড়াগড়-কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে উড়ে আসা আলটপকা মন্তব্য, বাঁকা চাউনি আর ফিসফাস—কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রাম আর লাগোয়া এলাকার অনেক বাসিন্দার। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়ি টানতে এগিয়ে এল এক মসজিদ।

Advertisement

গৌরব বিশ্বাস ও কল্লোল প্রামাণিক

থানারপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

এই মসজিদেই জহিরুল সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়। —নিজস্ব চিত্র।

সন্ত্রাসে জড়ায়নি গ্রাম। নাম জড়িয়েছে গ্রামের বাসিন্দা এক যুবকের। কিন্তু এলাকা ছেড়ে বেরোলেই খাগড়াগড়-কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে উড়ে আসা আলটপকা মন্তব্য, বাঁকা চাউনি আর ফিসফাস—কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে নদিয়ার থানারপাড়ার গমাখালি গ্রাম আর লাগোয়া এলাকার অনেক বাসিন্দার। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়ি টানতে এগিয়ে এল এক মসজিদ। শুক্রবার নমাজ পড়ার আগে ‘থানারপাড়া দহপাড়া জুম্মা মসজিদ’-এর ইমাম নমাজ পড়তে আসা বাসিন্দাদের অনুরোধ করলেন জঙ্গি কার্যকলাপে নাম জড়ানো গমাখালি গ্রামের জহিরুল শেখের খোঁজ পেলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে সে খবর জানাতে।

Advertisement

ইমাম জাবের আলির কথায়, “জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস—শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর কোনও ধর্ম সমর্থন করে না। এক জনের জন্য গোটা এলাকার বদনাম আমরা সহ্য করব না।”

২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে হত শাকিল আহমেদের স্ত্রী রাজিয়া বিবির এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জহিরুলের নাম পান গোয়েন্দারা। গমাখালিতে তার বাড়ি থেকে ১০ অক্টোবর ৪১টি জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে সিআইডি। জহিরুল ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। অথচ, তার খোঁজে গমাখালিতে পুলিশ-গোয়েন্দাদের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দারাও সোমবার ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে।

Advertisement

মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, “খাগড়াগড়-কাণ্ডে জহিরুলের নাম জড়িয়েছে শুনে আমরা চমকে উঠেছিলাম। কারণ, যখন এলাকায় ছিল ওর রকমসকম দেখে কারও সন্দেহ হয়নি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জহিরুল বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর থেকে নানা মহলের সন্দেহ বাড়তে থাকে। তবে সে সন্দেহ শুধু জহিরুল বা তার পরিবারের উপরেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দার কথায়, “ট্রেনে-বাসে হয়তো এলাকার কয়েক জন এক সঙ্গে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। সহযাত্রীদের কেউ জানতে চাইলেন ‘বাড়ি কোথায়’? জবাব শুনে অনেকেরই দৃষ্টিটা যেন কেমন বদলে গেল! কেউ-কেউ উল্টোপাল্টা দু’-একটা কথাও শুনিয়ে দিল।” গোটা ব্যাপারটাই অস্বস্তিকর ঠেকছিল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। তাঁদের এই অস্বস্তি অনেককে মনে পড়িয়ে দিয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটার কথা। সেখানে শাহরুখ যে চরিত্রটা করেছিলেন, সে একটা সময় খালি বলত, ‘মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম নট এ টেরোরিস্ট’।

সেলিম জানান, এক দিকে যখন এলাকার বহু বাসিন্দাদের কাছ থেকেই তাঁরা এলাকার বাইরের ‘অস্বস্তিকর’ অভিজ্ঞতা শুনছেন, অন্য দিকে তখন জহিরুলের খোঁজ পেতে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন পুলিশ ও এনআইএ-র গোয়েন্দারা। ইমাম জাবের আলি বলেন, “জহিরুলের জন্য গোটা এলাকার বদনাম হচ্ছে। কী ভাবে ওর সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ রয়েছে তা গোয়েন্দাদের কাছে থেকে জেনে দিন কয়েক আগে ঠিক করা হয়, এলাকাবাসীকে সচেতন করা হবে।”

থানারপাড়ার এই মসজিদে ফি শুক্রবার হাজারখানেক মহিলা-পুরুষ নমাজ পড়তে আসেন। এ দিন নমাজ পাঠ শুরু হওয়ার আগে ইমাম সকলের উদ্দেশে আবেদন করেন, জহিরুল সম্পর্কে কোনও তথ্য বা জহিরুলের খোঁজ পেলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতে। নমাজ শেষে বেরিয়ে এলাকার আব্দুল

কুদ্দুস মণ্ডল, সামসুজ্জোহারা বলছিলেন, “ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের কথাটা হেলাফেলা করার মতো নয়। সতর্ক থাকব।”

জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখও এসেছিলেন নমাজ পড়তে। কোনও মতে বললেন, “ছেলের জন্য আজ সবার সামনে মসজিদের ঘোষণা শুনতে হল! বিশ্বাস করুন, ও কোথায় আছে, জানি না। জানলে আমিই প্রথমে মসজিদ ও থানায় খবর দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন