টুইটারে তৃণমূলের ৪২, তৈরি কারাটেরাও

যুগের ধর্ম বুঝে আগেই সক্রিয় হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বুঝছেন প্রকাশ কারাটও! তরুণ প্রজন্মের জীবনচর্যার সঙ্গে এখন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া। একটু দেরিতে শুরু করেও সেই মঞ্চে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। ফেসবুকে তাঁর সক্রিয়তা এখন বিপুল।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৩৮
Share:

যুগের ধর্ম বুঝে আগেই সক্রিয় হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বুঝছেন প্রকাশ কারাটও!

Advertisement

তরুণ প্রজন্মের জীবনচর্যার সঙ্গে এখন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়া। একটু দেরিতে শুরু করেও সেই মঞ্চে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। ফেসবুকে তাঁর সক্রিয়তা এখন বিপুল। দলনেত্রীর প্রদর্শিত পথেই এ বার লোকসভায় প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনব কৌশল নিতে চলেছে তৃণমূল। দলের ৪২ জন প্রার্থীই ওয়েব-মাধ্যমে মুখোমুখি হবেন নানা প্রশ্নের। তৃণমূলের এমন সক্রিয়তার আবহে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না সিপিএম-ও। লোকসভা ভোটের প্রচারকে উপলক্ষ করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ইউনিট গড়তে নির্দেশ জারি করেছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

লোকসভায় দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুকে বাছাই-করা প্রশ্নের উত্তর দিতে টিভি চ্যানেলের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। তাঁর ওই প্রশ্নোত্তর-আসরের যে মূল ভাবনা ছিল, সেটাকেই লোকসভায় দলের সমস্ত প্রার্থীর জন্য ব্যবহার করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের পরিকল্পনা, এ বারের ৪২ জন প্রার্থী ট্যুইটারে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেবেন। প্রত্যেক প্রার্থী এক এক দিনে এক ঘণ্টা করে প্রশ্নোত্তর চালাবেন। অর্থাৎ সব মিলে ৪২ জনের জন্য ৪২ দিন। সময় বাছা হয়েছে বিকাল ৪টে থেকে ৫টা। কারণ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ওই সময়টা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রাইম টাইম। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, দীনেশ ত্রিবেদী-সহ তৃণমূলের বর্তমান সাংসদদের মধ্যে যাঁরা শহুরে এলাকা থেকে প্রার্থী, তাঁরা দু’ঘণ্টার প্রশ্নোত্তরে থাকবেন। বাকিরা এক ঘণ্টার। প্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের নিজস্ব ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁরা তার মাধ্যমেই উত্তর দেবেন। না-থাকলে তৃণমূলের দলীয় ট্যুইটার হ্যান্ডল (@AITCofficial) থেকেই তাঁরা কাজ সারবেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বাইরে আরও যাঁরা এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের প্রশ্নোত্তরে সাহায্য করার জন্য পাশে থাকবেন দলের দুই মুখপাত্র অমিত মিত্র ও ডেরেক ও’ব্রায়েন।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রার্থীরা বসবেন তৃণমূল ভবনেই। কোনও কারণে তা সম্ভব না-হলে অন্যত্রও ব্যবস্থা করা হতে পারে। ডেরেকের কথায়, “আমরা যে ৩৬০ ডিগ্রি যোগাযোগ পদ্ধতির কথা বলছি, এটা তারই অঙ্গ। মিটিং-মিছিল, পোস্টার, সভা এ সবই থাকবে। তার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের যথাসম্ভব কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন আমাদের প্রার্থীরা।” পরিচিত তৃণমূল মুখের বাইরে এ বার দেব, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায় বা ভাইচুং ভুটিয়ার মতো তারকারা লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন। তৃণমূলের রাজনৈতিক বক্তব্য সংক্রান্ত প্রশ্ন সামলাতে যাঁতে তাঁরা সমস্যায় না-পড়েন, তার জন্য দলের তরফে তাঁদের আগাম প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনাও হচ্ছে। দলের এক সাংসদের বক্তব্য, “নিত্য দিনের কাজে জড়িত থাকার ফলে দলের রাজনৈতিক ভাবনা আমাদের জানাই আছে। যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁদেরও এই বিষয়ে সড়গড় করে নিতে হবে। ভোটের সময় সকলের এক সুরে কথা বলাই কাঙ্খিত।” ঘটনাচক্রে, কালীঘাটে আজ, শুক্রবারই দলের ৪২ জন প্রার্থীকে নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূল নেত্রী। যেখানে দলের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বাম সমর্থকেরা অবশ্য বহু দিন ধরেই তৎপর। কিন্তু বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে এখন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার জন্যও সক্রিয় হয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সদ্যই শুরু হয়েছে সিপিএমের দলীয় ট্যুইটার হ্যান্ডল (@CPIMspeak)। যার মাধ্যমে প্রকাশ, বৃন্দা কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, মায় কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নও নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। দলের বক্তব্য তুলে ধরছেন সংক্ষেপে। এরই পাশাপাশি, সিপিএমের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নোট দিয়ে জানানো হয়েছে,দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ দেখভালের জন্য ৬ সদস্যের একটি দল গড়া হবে। তার জন্য রাজ্য কমিটিগুলির কাছে দক্ষ কর্মীদের নাম চাওয়া হয়েছে। লোকসভা ভোটের প্রচার চলাকালীন তাঁরা ভিডিও, অডিও-সহ নানা উপকরণ নিয়মিত আপলোড করবেন। দলের প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্য কমিটিগুলিকেও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে ওই নোটে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভি শ্রীনিবাস রাওয়ের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও দক্ষ ভাবে ব্যবহার করতে চেয়েই দলের সব রাজ্য কমিটি ও গণ সংগঠনকে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। যাতে তথ্য আদানপ্রদানের মাধ্যমে আরও কার্যকরী জনসংযোগ জারি রাখা যায়।

রাজনৈতিক ময়দানে দুই শিবির যুযুধান। ভোটের বাজারে লড়াইয়ের তীব্রতা স্বাভাবিক ভাবেই আরও বাড়বে। বোঝাই যাচ্ছে, সেই উত্তাপের বাইরে থাকবে না সোশ্যাল মিডিয়াও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন