টাকা ফেরতের দু’লক্ষ আর্জিই ভিন্ রাজ্যের

সারদা কেলেঙ্কারির আওতায় পশ্চিমবঙ্গ এবং তার পড়শি ত্রিপুরা-ওড়িশা-অসম তো আছেই। জাল ছড়িয়েছিল সুদূর উত্তরাখণ্ডেও! রাজ্য সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশন সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে। কমিশন সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোট ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৪৮ আবেদনপত্র এসেছে। তার মধ্যে দু’লক্ষ ১৮ হাজারই ভিন্ রাজ্যের।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

সারদা কেলেঙ্কারির আওতায় পশ্চিমবঙ্গ এবং তার পড়শি ত্রিপুরা-ওড়িশা-অসম তো আছেই। জাল ছড়িয়েছিল সুদূর উত্তরাখণ্ডেও!

Advertisement

রাজ্য সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশন সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে। কমিশন সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোট ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৬৪৮ আবেদনপত্র এসেছে। তার মধ্যে দু’লক্ষ ১৮ হাজারই ভিন্ রাজ্যের। সারদার জাল যে তাদের রাজ্যেও ছড়িয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টে তা স্বীকার করেছে ত্রিপুরা, অসম এবং ওড়িশা সরকার। ওই মামলাতেই জানা যায়, ঝাড়খণ্ডেও বহু মানুষ সারদায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ভিন্ রাজ্যের দু’লক্ষেরও বেশি আবেদনপত্র পরীক্ষা করে কমিশন দেখেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে প্রধানত ছ’টি রাজ্যের বাসিন্দারা রয়েছেন। সেগুলো হল অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় ও উত্তরাখণ্ড। সারদার জাল বিভিন্ন রাজ্যে কতটা ছড়িয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে শীর্ষ আদালত। তারা জানিয়েছে, ওই সব তথ্যের ভিত্তিতেই সিবিআই তদন্ত নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। ওই মামলার এক আইনজীবী জানান, সামগ্রিক তথ্য সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়লে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারত।

Advertisement

ভিন্ রাজ্যের আবেদনকারীদের কাউকেই এখনও শুনানিতে ডাকেনি সারদা কমিশন। নবান্ন সূত্রের খবর, অন্য রাজ্যের প্রায় সওয়া দু’লক্ষ আবেদনকারীকে এখনই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পশ্চিমবঙ্গের আমানতকারীদেরই। বাংলার সব আবেদনকারী টাকা পেয়ে গেলে ভিন্ রাজ্যের আবেদনকারীদের ডাকা হবে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি না-থাকায় রোজই ভিন্ রাজ্য থেকে টাকার খবর জানতে চেয়ে কমিশনে আসছেন অনেকে। অনেকে মেল পাঠিয়ে জানতে চাইছেন, তাঁদের কবে ডাকা হবে, কবে তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু সদুত্তর মিলছে না। কমিশন থেকে ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন ভিন্ রাজ্যের আবেদনকারীরা।

কমিশন সূত্রের খবর, আবেদনপত্র যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দলকে। সেগুলো পরীক্ষা করে সিট দেখেছে, ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে ১৭ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে সাড়ে ১২ লক্ষ আবেদনকারী সারদা সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যান্য রাজ্য থেকে দু’লক্ষ ১৮ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ১৭% আমানতকারী ভিন্ রাজ্যের। বাকি পাঁচ লক্ষ আবেদনকারী টাকা রেখেছিলেন অন্য সংস্থায়।

কমিশন সূত্রের খবর, অন্তত ৯৮ হাজার আবেদনকারীর ক্ষেত্রে পলিসি নম্বর ভুল বলে জিনিয়েছে সিট। ওই আবেদনকারীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, সন্দেহ আছে। সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঠিক না-থাকায় এক লক্ষ ২১ হাজার আবেদন বাতিল হয়েছে। আবেদনে উল্লিখিত লগ্নি টাকার পরিমাণের সঙ্গে সারদার রেকর্ডে থাকা টাকার পরিমাণ না-মেলায় আরও এক লক্ষ ৮৮ হাজার আবেদনের ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

কমিশনে ক্ষতিপূরণ না-মিললে ভিন্ রাজ্যের আবেদনকারীদের কেউ কেউ আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। যেমন ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা সৈয়দ আসিফ আলি। কমিশন থেকে প্রত্যাখ্যাত আসিফ বলেন, “সারদার কাছে আমার পাওনা ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু কমিশন আমলই দিচ্ছে না। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আদালতে যেতে হলে যাব। এক জন আবেদনকারী যদি ক্ষতিপূরণ পান, তা হলে সকলেরই তা প্রাপ্য। এটা কমিশনের মনে রাখা উচিত।”

কমিশনের এক কর্তা জানান, প্রতিটি আবেদন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তথ্য ঠিক থাকলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন