টাকা বাজেয়াপ্তের পথে ইডি, সঙ্কটে দুই প্রধান

পুজোর ঠিক আগে কলকাতা ময়দানের দুই প্রধান ক্লাবের অ্যাকাউন্ট সিল করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল আরও দুই ক্লাবকে। এ বার ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করল এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে যে টাকা রয়েছে, এর পরে তা আদালতের নির্দেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা করতে পারবে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫৫
Share:

পুজোর ঠিক আগে কলকাতা ময়দানের দুই প্রধান ক্লাবের অ্যাকাউন্ট সিল করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল আরও দুই ক্লাবকে। এ বার ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করল এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে যে টাকা রয়েছে, এর পরে তা আদালতের নির্দেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা করতে পারবে তারা। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফুটবলারদের মাইনে থেকে শুরু করে যাবতীয় দৈনন্দিন কাজ চালাত দুই প্রধান। এখন ইডি সেই টাকা বাজেয়াপ্ত করার পথে এগোতে শুরু করায় ঘোর সঙ্কটে পড়েছে তারা। দু’দলই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।

Advertisement

গত পঞ্চমীর দিন ইস্টবেঙ্গলের অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করেছিল ইডি। পর দিন মোহনবাগান, কালীঘাট এবং ভবানীপুর ক্লাবের অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করা হয়। এর পরে সারদার লগ্নিকারীদের টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে যারা ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে টাকা পেয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ইডি। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করা তারই প্রথম ধাপ। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে এক বার ওই টাকা জমা করতে পারলে নিজেদের লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ইডি।

কেন দুই ক্লাবের অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করল ইডি? ইডি সূত্রে বলা হয়েছে, ফুটবলারদের টাকা মেটানোর জন্য দুই ক্লাবকে স্পনসর হিসেবে অর্থ দিয়েছিল সারদা। কিন্তু সেই টাকা ফুটবলারদের হাতে যায়নি। উল্টে অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। এর প্রমাণ তাদের হাতে আছে বলে জানিয়েছে ইডি। যদিও দুই প্রধানের কর্তারাই দাবি করেছেন, সারদা থেকে পাওয়া টাকা নির্দিষ্ট খাতেই খরচ করা হয়েছে।

Advertisement

অ্যাকাউন্ট সিল হওয়ায় এর আগেই বিপদে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। কারণ, ফুটবলারদের টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে অনেক খরচপাতি করাই তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাও দুই ক্লাবের কর্তাদের আশা ছিল, অনুরোধ-উপরোধ করে যদি এই সিদ্ধান্ত বদল করানো যায়। কিন্তু এ বারে অ্যাকাউন্ট ‘অ্যাটাচ’ করে দেওয়ায় ঘোর সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে তারা। কারণ, এর পরে টাকা কেন্দ্রের কোষাগারে জমা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সেটা যদি এক বার হয়, তা হলে সেই অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। দুই ক্লাবের মোট চারটি অ্যাকাউন্ট অ্যাটাচ করা হয়। তার মধ্যে মোহনবাগানের ‘অ্যাটাচ’ করা একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৩২ লক্ষ টাকা এবং ইস্টবেঙ্গলের দু’টি অ্যাকাউন্টে মোট ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। দুই ক্লাবের কর্তাদেরই বক্তব্য, আইএসএল শেষ হলে সামনেই ফেডারেশন কাপ এবং আইলিগের মতো দু’টি বড় টুর্নামেন্ট রয়েছে। সে জন্য ৩ নভেম্বর থেকে অনুশীলনও শুরু হওয়ার কথা। এখন টাকার অভাবে দেশের সব থেকে বড় দুই টুর্নামেন্টে শুধু যে দল পাঠানোই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল, তা-ই নয়। রোজকার অনুশীলন চালানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রকাশ্যে না বললেও কর্তাদের বক্তব্য, দীর্ঘ ইতিহাস তো বটেই, এই দুই ক্লাবের সঙ্গে লাখ লাখ সমর্থকের আবেগও জড়িয়ে রয়েছে। ইডি-র সিদ্ধান্তে দুই ক্লাবের সমর্থকদের মনেই আঘাত লাগবে।

এই পরিস্থিতিতে আইনজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার কথাই ভাবছে দু’দল। ইস্টবেঙ্গলের সচিব কল্যাণ মজুমদার এ দিন বললেন, “আমরা আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” আর মোহনবাগানের অর্থসচিব দেবাশিস দত্তর মন্তব্য, “এখনও অ্যাটাচ সংক্রান্ত কোনও কাগজ হাতে পাইনি। ইডির চিঠি পেলে কর্মসমিতির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেব।” এর বেশি কিছু তাঁরা বলতে নারাজ। কেন?

দুই ক্লাবের ঘরোয়া আলোচনাতেই বলা হচ্ছে, যে হেতু শীর্ষ কর্তারা হয় সিবিআই হেফাজতে বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছে, তাই এই নিয়ে হইচই করতে চাইছে না কেউ। ইস্টবেঙ্গলের সর্বময় কর্তা দেবব্রত সরকার জেলে রয়েছেন বহু দিন। মোহনবাগানের সহসচিব সৃঞ্জয় বসুকে বেশ কয়েক বার জেরা করেছে সিবিআই এবং ইডি। ক্লাব আদালতে গেলে সমস্যা বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় কেউই তাই ঝুঁকি নেয়নি। এবং সে কারণেই পুজোর আগে অ্যাকাউন্ট সিল হওয়া সত্ত্বেও ইডি-র কাছে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু করেনি দুই ক্লাব।

ময়দানের একটি অংশ অবশ্য বলছে, এটা দুর্বল যুক্তি। আসলে পুজো পড়ে যাওয়ায় একটা গা ছাড়া ভাব এসে গিয়েছিল দুই ক্লাবেই। অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, এত লক্ষ মানুষের সমর্থন এবং আবেগ যে ক্লাব দু’টির সঙ্গে যুক্ত, তাদের অ্যাকাউন্ট বেশি দিন সিল করে রাখতে পারবে না ইডি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সিল খোলার বদলে তা অ্যাটাচ করে টাকা বাজেয়াপ্ত করার দিকেই এগোতে শুরু করল ইডি।

এই অবস্থায় ক্লাবকর্তাদের কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে, এর পরে তো ক্লাব চালানোই মুশকিল হবে। এই সঙ্কট নিয়ে মঙ্গলবার আইএফএ সচিব উত্‌পল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুই ক্লাবের কর্তারা বৈঠক করেন। সেখানে ঠিক হয়েছিল, সিল করা অ্যাকাউন্টগুলি ফের চালু করতে আইএফএ ইডিকে চিঠি দেবে। একই চিঠি দেওয়া হবে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকেও। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগেই ইডির এই পদক্ষেপ।

তবে এমন বিপদেও মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল একসঙ্গে লড়াই করবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যৌথ ভাবে লড়লে যতটা শক্তি মিলত, আলাদা লড়ার ফলে তা পাওয়া যাবে না।

এ দিনই ইডি-র তরফে সারদার আরও কিছু সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বাঁকুড়ায় রাজ্যের ল্যান্ডমার্ক সিমেন্ট কারখানাটিও। যে কারখানাটি বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় এক সময়ে সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করেছিলেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় তা কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল সুদীপ্তকে। এ দিন ইডি-র তরফে শিলিগুড়ির একটি স্কুল, লাটাগুড়ি ও ডুয়ার্সের দু’টি রিসর্ট, শিলিগুড়ির একটি ফ্ল্যাট, মালদহ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু জমিও অ্যাটাচ করা হয়েছে। ওড়িশাতেও কিছু সম্পত্তি অ্যাটাচ করেছে ইডি। এক অফিসারের কথায়, “প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু, এটা আজকের বাজার দর নয়। এখন এই সম্পত্তি বিক্রি করলে প্রায় চার-গুণ টাকা পাওয়া যাবে।” মুম্বইয়ে সেবি-র অফিসে গিয়ে সেখানকার কয়েক জন কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারদা সম্পর্কে নানা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় তাঁদের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন