গত বছর পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজিয়া আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এ বার তাদের দ্বৈরথ শুরু হল পুরসভার নির্বাচন নিয়ে। পঞ্চায়েতের মতোই পুরভোট নিয়ে সরকার ও কমিশনের মতপার্থক্য গড়াল হাইকোর্টে।
রাজ্যের ১৭টি পুরসভার নির্বাচন যাতে নির্ধারিত সময়ে হয়, সেই আর্জি জানিয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেখানেই থেমে না-থেকে অবিলম্বে ওই মামলার শুনানি শুরু করার জন্য আজ, বুধবার বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে আবেদন জানাতে চলেছেন কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি।
এই ব্যাপারে কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে আইনজীবী বিয়ানি মঙ্গলবার জানান, ১৭টি পুরসভার নির্বাচন যাতে ঠিক সময়ে হয়, তার জন্য কমিশন সব দিক থেকে প্রস্তুত। তারা রাজ্য সরকারকে বারবার চিঠি দিয়েছে, আলোচনা করেছে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনও সদর্থক বার্তা মেলেনি। তাই শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টেরই দ্বারস্থ হতে হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ওই সব পুরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। সরকার যদি ভোটের ব্যাপারে এখনই সক্রিয় না-হয়, তা হলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা যাবে না। সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন বিয়ানি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা এ দিন জানান, ওই ১৭টি পুরসভার নির্বাচন যাতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের মধ্যে করা যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে আদালতের কাছে আর্জি জানাবে কমিশন। ওই সব পুরসভার নির্বাচন ঠিক সময়ে করার জন্য কমিশন গত জানুয়ারি থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে রাজ্য এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি। পুরসচিব বি পি গোপালিকা নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে এক বার দেখা করেছিলেন। কিন্তু তখনও তিনি জানান, পুর নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার কোনও সিদ্ধান্তের কথা তাঁকে জানায়নি। তার আগে অবশ্য সরকারের তরফে কমিশনকে জানানো হয়েছিল, লোকসভার নির্বাচন সামনে। তাই সরকার এখনই পুরভোট নিয়ে ভাবছে না। লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরেও কমিশন নির্ধারিত সময়ে পুরভোট করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সেই চিঠির উত্তর মেলেনি।
কমিশনের ওই কর্তা জানান, সংবিধানের ২৪৩ (ইউ) ধারায় বলা রয়েছে, নির্বাচিত পুরসভার প্রথম বৈঠকের পরে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হলে সেই পুরবোর্ড আর এক দিনও কাজ চালাতে পারবে না। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী পুরবোর্ড গঠনের জন্য নির্বাচন করতে হবে। কমিশন সংবিধানের নির্দেশ মেনেই পুরভোট করতে চায়। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনও সহায়তা না-পেয়েই কমিশন বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে মীরা পাণ্ডের কার্যকাল শেষ হচ্ছে আগামী ২১ জুলাই। কমিশনের ওই কর্তা বলেন, কমিশনার বদল হলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া কোনও ভাবেই বিঘ্নিত হওয়ার কথা নয়। কারণ, পুরভোট করতে কমিশনের দিক থেকে যে-ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলা হয়েছে।
২০১৩ সালের মে মাসে নির্ধারিত সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একই ভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। তখনও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার তাঁর রায়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আর্জি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে নির্বাচন করার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
এ বার রাজ্য সরকার জানিয়েছে, পুজোর পরে তারা নভেম্বর নাগাদ ১৭টি পুরসভার নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, সে-ক্ষেত্রে অনেক পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত তার আগেই।