ঠকে শেখা, জনধন প্রকল্পে সাড়া বাংলার

হাওড়ার এক ঢালাই কারখানার ঠিকা শ্রমিক নিতাই কুণ্ডু তিন বছর ধরে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা জমাচ্ছিলেন। পাঁচ বছরেই দ্বিগুণ অর্থ ফেরতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল এজেন্ট। কিন্তু এখন সেই সংস্থার অফিসে তালা। সর্বস্বান্ত নিতাইবাবু তাই সরকারি ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনধন প্রকল্প’।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

হাওড়ার এক ঢালাই কারখানার ঠিকা শ্রমিক নিতাই কুণ্ডু তিন বছর ধরে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা জমাচ্ছিলেন। পাঁচ বছরেই দ্বিগুণ অর্থ ফেরতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল এজেন্ট। কিন্তু এখন সেই সংস্থার অফিসে তালা। সর্বস্বান্ত নিতাইবাবু তাই সরকারি ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনধন প্রকল্প’।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষই এখন সঞ্চয়ের নিরাপদ আস্তানা খুঁজছেন। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্তিস্ক প্রসূত এই প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া মিলেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির হিসেব, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ৮৮% পরিবারেই কারও না কারও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

জনধন প্রকল্প সফল করতে গুজরাতের আইএএস অফিসার হাসমুখ আঢিয়াকে আর্থিক পরিষেবা সচিবের পদে নিয়ে এসেছেন মোদী। সবার জন্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। সেই কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই আগামিকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন হাসমুখ। থাকবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের রিপোর্টে জানানো হবে, ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৫৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৭৫টি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কোনও টাকা জমা না করেই এই প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। তা সত্ত্বেও রাজ্য থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা জমা পড়েছে বলে দাবি ব্যাঙ্ক কর্তাদের। এই প্রকল্পে সারা দেশে প্রায় সাড়ে সাত কোটি নতুন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের সাড়া যথেষ্টই তাত্‌পর্যপূর্ণ বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রক।

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১১ সালের নথি অনুযায়ী, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় থাকা মানুষের হিসেবে এ রাজ্যের অবস্থান ছিল পিছনের সারিতে। তা হলে তিন বছরেই ছবিটা বদলাল কী ভাবে? অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রাখতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ। সেই কারণেই সরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলায় তাঁদের এখন বাড়তি আগ্রহ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্তারা বলছেন, প্রাথমিক ভাবে শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, বর্ধমানের মতো শহরের বস্তি এলাকায় বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ চিন্তা ছিল মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়ার মতো বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে নিয়ে। কোন পরিবারের এক জনেরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তা জানতে ভোটার তালিকা ও জাতীয় জীবনপঞ্জি ধরে ধরে সমীক্ষা চালানো হয়। ব্যাঙ্ক কর্তাদের দাবি, চিন্তা ছিল উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সুন্দরবন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও। রাজ্যের বেশির ভাগ প্রত্যন্ত এলাকাতেই ব্রডব্যান্ড পরিষেবার করুণ দশা। বহু জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকেই ব্যাঙ্কের কাজ চালানো হচ্ছে। তার পরেও এই সাফল্যে উত্‌সাহিত ব্যাঙ্ক কর্তাদের বড় অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন