পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের পর ফের এক মঞ্চে। বোলপুরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাড়ুই-কাণ্ডে ও লাভপুর-কাণ্ডে অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও মনিরুল ইসলাম। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পাড়ুই হত্যাকাণ্ডে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। এবং সিটের প্রধান হিসেবে রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে নিয়োগ করেছে হাইকোর্টই। এই পরিপ্রেক্ষিতে দু’টি প্রশ্ন উঠছে:
• ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ডিজি এখন সরাসরি হাইকোর্টের অধীনে কি না?
• ডিজি হাইকোর্টের অধীনে থাকলে গভর্নমেন্ট প্লিডার বা জিপি এই মামলায় তাঁর হয়ে আদৌ সওয়াল করতে পারেন কি না?
দু’টি প্রশ্নই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এবং এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন যাঁর আদালতে এখন মামলাটি চলছে, সেই বিচারপতি হরিশ টন্ডন। জিপি এই মামলায় ডিজি না রাজ্য সরকার, কার প্রতিনিধিত্ব করছেন, বৃহস্পতিবার বিচারপতি তাঁর কাছে সেটা পরিষ্কার ভাবে জানতে চান। বিচারপতি টন্ডন জিপি-কে বলেন, “আপনি এই মামলায় রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিত্ব করলে একই সঙ্গে ডিজি-র হয়ে সওয়াল করতে পারেন কি না, তা বলুন। আমি এ ব্যাপারে আইনের ব্যাখ্যা চাই।” তাঁর এজলাসে এসে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য জিপি-কে ১২ দিন সময় দিয়েছেন বিচারপতি টন্ডন। ২২ জুলাই জিপি-কে আদালতে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
পাড়ুইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের (বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং বীরভূম জেলা সভাধিপতি বিকাশ চৌধুরী) গ্রেফতার করা হল না কেন, সেটা খোদ ডিজি-রই হাইকোর্টে এসে জানানো উচিত বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন বিচারপতি টন্ডন। এই ব্যাপারে কেন ডিজি-কে তলব করা হবে না, রাজ্য সরকারকে এ দিন আদালতে এসে তা জানাতে বলেছিলেন তিনি। বিচারপতি টন্ডন মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টে ডিজি-র হাজিরার ব্যাপারে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বৃহস্পতিবারেই।
বিচারপতি টন্ডন এ দিন বলেন, এই মামলা অনেক দূর গড়িয়েছে। অনেক নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। সব কাগজপত্র পড়ে তাঁর মনে হয়েছে, সিট পাড়ুই কাণ্ড নিয়ে আদালতে যে-রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই সিট আরও সক্রিয় হয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু সিট তা করেনি। তার পরেই বিচারপতি টন্ডন এই মামলায় জিপি-কে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করার প্রসঙ্গ তোলেন।
জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতিকে জানান, তিনি ফৌজদারি মামলায় বিশেষজ্ঞ নন। সেই জন্য পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনজিৎ সিংহ এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানাবেন। তার পরে মনজিৎ বলেন, এই মামলার মূল আবেদনকারীরা জামিনে মুক্ত দুই অভিযুক্ত। মামলার আবেদনে পৃথক কোনও সংস্থাকে দিয়ে পাড়ুই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করানোর আর্জি জানানো হয়েছে। অভিযুক্তেরা কী ভাবে এই আবেদন করতে পারেন, সেই প্রশ্ন তোলেন পিপি। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও।
ওই সময় পাড়ুইয়ে নিহত প্রাক্তন স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের বৌমা শিবানী ঘোষের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে পৃথক একটি আবেদন পেশ করে জানান, তাঁর মক্কেলও পৃথক কোনও সংস্থাকে দিয়ে পাড়ুই কাণ্ডের তদন্ত করাতে চান। বিচারপতি জানান, দু’টি আবেদন তিনি একসঙ্গে শুনবেন।
২০১৩ সালের ২১ জুলাই রাতে বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকায় খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূলকর্মী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরবাবু। ওই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তেরা কেন ধরা পড়ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে মামলা হয়।
হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ওই খুনের তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে সিট গড়ে দেন। তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে আদালতে তলব করে জানতে চেয়েছিলেন, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অনুব্রতকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না কেন। বিচারপতি দত্তের নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার সেই মামলা হাইকোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চে নিয়ে যায়।
কোর্টে ডিজি-র হাজিরার বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিত হয়ে যায়। তার জেরে বিচারপতি দত্ত শেষ পর্যন্ত মামলাটিই ছেড়ে দেন। পরে বিষয়টি বিচারের জন্য যায় বিচারপতি হরিশ টন্ডনের কাছে। সেই আদালতে ২২ জুলাই ফের এই মামলার শুনানি হবে।