তাপস-মামলা

ডায়েরির কথা আগে কেন বলেননি: কোর্ট

তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিতর্কিত বক্তৃতা নিয়ে নাকাশিপাড়া থানা যদি জেনারেল ডায়েরি করেই থাকে, তা হলে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে তা জানানো হয়নি কেন? প্রশ্ন তুলল ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২০
Share:

তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিতর্কিত বক্তৃতা নিয়ে নাকাশিপাড়া থানা যদি জেনারেল ডায়েরি করেই থাকে, তা হলে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের আদালতে তা জানানো হয়নি কেন? প্রশ্ন তুলল ডিভিশন বেঞ্চ।

Advertisement

শুক্রবার বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করে, “জেনারেল ডায়েরি দায়ের করে তদন্ত শুরুর কথা এখানে বলছেন। সিঙ্গল বেঞ্চে বলেননি কেন?”

সোমবার বিচারপতি দত্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার দায়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাপসের বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর করতে হবে। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বুধবার ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য সরকার। তাপসও পৃথক আপিল করেন। এ দিন মামলা দু’টির শুনানির সময় রাজ্য সরকার আদালতে জানায়, তাপসের ওই বক্তব্যের ব্যাপারে স্থানীয় এক মহিলা নাকাশিপাড়া থানায় ৩০ জুন অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করে ১ জুলাই (নম্বর: ৮৯)। ২ জুলাই উত্তর দমদম পুরসভা এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব চৌধুরী পৃথক একটি অভিযোগ জানান। সেই দিনই তার ভিত্তিতে অন্য একটি জেনারেল ডায়েরি (নম্বর: ১০৯) দায়ের করে পুলিশ।

Advertisement

কল্যাণবাবু জানান, ৩ জুলাই নাকাশিপাড়া থানার এসআই একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, তাপসের ওই বক্তব্যের আগাগোড়া ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হয়। আদালতে কল্যাণবাবুর দাবি, ওই সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে ফুটেজ পাঠানো হয়নি।

বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত তখন কল্যাণবাবুর কাছে জানতে চান, “সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলার শুনানি কবে হয়েছিল?” কল্যাণবাবু বলেন, “২১ ও ২৩ জুলাই।” বিচারপতি গুপ্ত জিজ্ঞাসা করেন, “পুলিশ যে ৩ জুলাই ভিডিও ফুটেজ চেয়ে তদন্ত শুরু করেছে, সেই তথ্য ২১ ও ২৩ জুলাইয়ের শুনানির সময় আদালতে পেশ করা হয়নি কেন? এই তথ্য আমাকে জানানো হচ্ছে। সিঙ্গল বেঞ্চে জানানো হয়নি কেন? শুনানি তো একাধিক বার হয়েছে!”

কল্যাণবাবু এর সরাসরি উত্তর দেননি। বরং তিনি অভিযোগ করেছেন, মামলাকারী তড়িঘড়ি হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা করেছেন। কল্যাণবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, এক জন সাংসদের আচরণ কী হবে, তা এক জন বিচারপতি ঠিক করে দিতে পারেন কি না। বিচারপতি গুপ্ত তা শুনে মন্তব্য করেন, “ধান ভানতে শিবের গীত হয়েছে বলতে চান? সবাই এ নিয়ে কথা কেন বলছে! পুলিশ তার কাজ করেনি বলেই তো।”

অভিযোগকারীর আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় তখন বলেন, “৩ জুলাই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কাছে ভিডিও ফুটেজ চেয়ে চিঠি পাঠানো ছাড়া পুলিশ তদন্তের স্বার্থে আর কিছুই করেনি। শুধু অপেক্ষা করছে।” তা শুনে বিচারপতি হেসে বলেন, “পুলিশ অপেক্ষা করছে না, পুলিশ দেখছে!” অনিরুদ্ধবাবু এ দিন বলেছিলেন, “সিআইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দত্ত।”

তার উত্তরে বিচারপতি গুপ্ত বলেন, “সিআইডি-কে দিয়েই তদন্ত করাতে হবে? পুলিশ তদন্ত করতে পারবে না? সিবিআই তদন্ত চাইলে অন্য কথা ছিল।”

অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “তাপসের উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনে তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকেরা হাততালি দিয়েছেন। তাপস বলেছেন, ছেলেদের পাঠিয়ে দিয়ে রেপ করিয়ে দেব...। সাংসদের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা তৈরির চেষ্টার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারাও প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।” বিচারপতি গুপ্ত তা শুনে বলেন, “ছেলেরা তো এখানে অভিযুক্ত নয়। তাপস পাল বলেছেন, পাঠিয়ে দেব। ছেলেরা কি বলেছে, যাব? তারা গিয়েছে কি?”

এ দিনই সব পক্ষের শুনানি শেষ হয়। বিচারপতি গুপ্ত জানান, ১৩ অগস্ট রায় দেবেন তিনি। ১৪ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশের এফআইআর করার বিষয়টি স্থগিত থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন