তাজপুরের সৈকতে লাল কাঁকড়ার ভিড়। সোহম গুহর তোলা ছবি।
তাজপুর সৈকতে বিলুপ্ত প্রায় লাল কাঁকড়া বাঁচাতে উদ্যোগী হল রামনগর-১ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি।
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের জেরে তাজপুরের সমুদ্র সৈকতের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র প্রায় ভেঙে পড়তে চলেছে। পর্যটনের দাপটে সৈকতে অবাধ যান চলাচলে ইতিমধ্যেই সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়েছে লাল কাঁকড়া। ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাইচরণ সর বলেন, “দিঘা শঙ্করপুরের সৈকতে লাল কাঁকড়া প্রজাতির অস্তিত্ব এখনও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী লাল কাঁকড়া দেখা যেত উদয়পুর-তাজপুর সৈকতেই। বছর কয়েক আগেও তাদের টানেই ভিড় করতেন পর্যটকেরা। এখন সেই আকর্ষণই হারিয়েছে।’’
আর এর জন্য ভুগছে সমুদ্র উপকূলের জীববৈচিত্র্যও। ইতিমধ্যেই একাধিক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ সৈকতের উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু চেহারা ও লাল কাঁকড়ার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের এই উদ্বেগ দেখে নড়েচড়ে বসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর, মন্দারমণি-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত পর্যটনকেন্দ্রগুলির ক্ষয়িষ্ণু হতে বসা সৈকত ও সৈকতে বিপন্ন লাল কাঁকড়া প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সমুদ্র সৈকতগুলিতে সমস্ত প্রকারের যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকার স্কুল-শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, স্থানীয় হোটেল কর্মী থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সবুজ বাহিনী’। তাঁদের কাজ হবে— উপকূল আইন ভাঙা হচ্ছে কি না সে দিকে নদর রাখা। চালানো হবে প্রচারও।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলছেন, “তাজপুর-সহ সমুদ্র সৈকতের লাল কাঁকড়া শুধু সৈকতের সৌন্দর্য্যই বাড়ায় না, একই সঙ্গে সমুদ্রের সঙ্গে উপকূলের প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। সমুদ্রের জোয়ার ভাঁটা, সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝার আগাম বার্তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’