বর্ধমান ও মঙ্গলকোটে শাসক দলের বেশ কয়েক জন নেতার সঙ্গে তার ভালই ‘দোস্তি’ গড়ে উঠেছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে জানাল খাগড়াগড় বিস্ফোরণে আহত আব্দুল হাকিম।
হাকিম আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার সেখানেই তাকে দীর্ঘ জেরা করেছিল এনআইএ। মঙ্গলবার হাকিমের সঙ্গে কথা বলেন এনআইএ-র এসপি বিক্রম খালাটে। সিসিইউ-তে থাকাকালীন গত শুক্রবার আনন্দবাজারের প্রতিনিধিকে হাকিম জানিয়েছিল, মেহবুব রহমান-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। একই কথা সে কবুল করেছে এনআইএ-র কাছেও। এক কর্তা জানান, এ বার হাকিমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই নেতাদের সঙ্গে খুব শীঘ্রই কথা বলার চেষ্টা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে।
এনআইএ-কে হাকিম জানিয়েছে, বছর তিনেক আগে শিমুলিয়ার ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে শাকিল আহমেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার পর আরও অনেকের সঙ্গে। এই শাকিলই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত হয়। খাগড়াগড়ের বাড়িটি শাকিল ও সে একসঙ্গে ভাড়া নিয়েছিল বলে জানায় হাকিম। তবে এ ক্ষেত্রে হাকিমের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
কী রকম? তদন্তকারীরা জেনেছেন, বিস্ফোরণের বহুদিন আগে থেকেই স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল হাকিম। গোয়েন্দাদের হাকিম বলেছে, খাগড়াগড়ে একটি মোবাইল রিচার্জের গুমটি তৈরি করেছিল সে। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেরই নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। এ ভাবেই আলাপ জমে ওঠে। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা হলে ওই নেতারাই তা সামলে দিতেন। এনআইএ-র দাবি, হাকিম জানিয়েছে, নিরুপদ্রবে নিজেদের কাজ সারতেই শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের হাতে রাখার চেষ্টা করত তারা। বিস্ফোরক তৈরি করা থেকে শিমুলিয়ায় জেহাদি তৈরির কাজেও হাকিম যুক্ত ছিল বলে এনআইএ-র ধারণা। যদিও হাকিম সে কথা সে মানতে চায়নি।
শুধু হাকিম নয়, শাকিল কী ভাবে নিজের কাজকর্ম বিস্তার করেছিল, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছে এনআইএ। গত রবিবার এই সূত্রেই কলকাতার মেটিয়াবুরুজে গিয়ে স্থানীয় কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এনআইএ। ২০১২-র ৮ এপ্রিল মেটিয়াবুরুজের লোহাগলির মসজিদ তালাওয়ের একটি বাড়িতে খাগড়াগড়ের মতোই বিস্ফোরণে দু’জন মারা যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে মেটিয়াবুরুজের যোগ রয়েছে ও শাকিলই এই যোগসূত্র। দোকানের জন্য পোশাক সেলাই করানোর অছিলায় মাঝে-মধ্যেই মেটিয়াবুরুজে আসত শাকিল। এনআইএ-র এক অফিসারের বক্তব্য, “পোশাকের কাজের আড়ালে শাকিল মেটিয়াবুরুজে বিস্ফোরক পাচারের কাজ করত বলেই আমাদের ধারণা। শাকিল যে মেটিয়াবুরুজ থেকে তৈরি বোমা নিয়ে যেত, তারও কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।”
এনআইএ-র মতে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী হাকিম। তাই হাসপাতালে তার নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সোমবারই আদালতে আবেদন করেছিল তারা। ওই আর্জির ভিত্তিতে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) এবং এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে হাকিমের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পরেই এ দিন পুলিশের ২৩ জনের একটি দলকে হাকিমের নিরাপত্তায় রাখা হয়।
এ দিন রিউম্যাটোলজির নতুন ভবনের একটি কেবিনে হাকিমকে স্থানান্তরিত করা হয়। তার আগে এনআইএ-র অফিসাররা গিয়ে কেবিন দেখে আসেন। সকালে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা হাকিমকে পরীক্ষা করে জানান, হাকিমের ক্ষতস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং দরকার। তবে তাকে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাকিমের অবস্থার অবনতি না হলে বুধ বা বৃহস্পতিবার তাকে ছাড়া হতে পারে।