তিনি কোনও ব্যান্ডেজ করেননি, বললেন নার্স

তৃণমূল বলছে, জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখার আগে তিনিই সজল ঘোষের বুকে ‘ব্যান্ডেজ’ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু খুনের রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা নার্স মঙ্গলবার দাবি করলেন, তিনি এমন কোনও ব্যান্ডেজ বাঁধেননি। নার্সের এই দাবির ফলে তৃণমূল ফের অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কেননা, ওই ব্যান্ডেজ আদৌ হাসপাতালে করা হয়নি বলে সিপিএম গোড়া থেকে দাবি করে আসছে। সজলকে অন্য কোথাও খুন করে হাসপাতালে আনার কারণেই জরুরি বিভাগের ডাক্তার তার বুকে ব্যান্ডেজ দেখতে পেয়েছিলেন বলে তাদের দাবি।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

তৃণমূল বলছে, জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখার আগে তিনিই সজল ঘোষের বুকে ‘ব্যান্ডেজ’ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু খুনের রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা নার্স মঙ্গলবার দাবি করলেন, তিনি এমন কোনও ব্যান্ডেজ বাঁধেননি।

Advertisement

নার্সের এই দাবির ফলে তৃণমূল ফের অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কেননা, ওই ব্যান্ডেজ আদৌ হাসপাতালে করা হয়নি বলে সিপিএম গোড়া থেকে দাবি করে আসছে। সজলকে অন্য কোথাও খুন করে হাসপাতালে আনার কারণেই জরুরি বিভাগের ডাক্তার তার বুকে ব্যান্ডেজ দেখতে পেয়েছিলেন বলে তাদের দাবি। ঘটনার অন্যতম ‘প্রত্যক্ষদশর্ীর্’, তৃণমূল নেতা ফজলুল হক মণ্ডল সোমবারই দাবি করেছিলেন, গুলি খাওয়ার পরে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে নার্স তাঁর বুকের ক্ষতে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে তুলো লাগিয়ে দেন। নার্স তা অস্বীকার করায় তাঁদের উপরে চাপ বাড়ল।

এই মামলায় প্রায় তিন বছর জেল খাটার পরেই সদ্য বেকসুর খালাস পেয়ে বেরিয়ে এসে পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা তথা কুলকামিনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা দাবি করেছিলেন, শাসকদলের নির্দেশে তাঁদের যে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত খুনি কে, তা খুঁজে বের করতে সিবিআই তদন্ত হওয়া জরুরি। তৃণমূল তখন এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু চাপের মুখে এ দিন তারাও সেই একই দাবি তুলল। নার্সের বক্তব্য শোনার পরেই ফজলুল বলেন, “আমিও চাইছি সিবিআই তদন্ত হোক। তাহলেই বেরিয়ে আসবে কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে।”

Advertisement

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি বর্ধমানের পূর্বস্থলী কলেজে সংঘর্ষের জেরে আহত টিএমসিপি ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় নদিয়ার নবদ্বীপ হাসপাতালে। তাদের দেখতে গিয়েই সজল গুলিতে খুন হন বলে অভিযোগ। ফজলুল-সহ পাঁচ তৃণমূল নেতা-কর্মী নিজেদের ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ বলে দাবি করে অভিযোগ করেছিলেন, হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটের ঠিক বাইরেই সজলকে জাপটে ধরেছিল প্রদীপবাবু, তাঁর ঘনিষ্ঠ এসএফআই সমর্থক লোকনাথ বুকে রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরাই সজলকে তুলে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। আদতে ত্রিপুরার বাসিন্দা লোকনাথকে পুলিশ ধরতে পারেনি, কিন্তু প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।

ওই রাতে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ মামলার সাক্ষ্য দিতে এসে জানান, সজলের বুকের ব্যান্ডেজ সরিয়ে তিনি গুলির ক্ষত দেখতে পান। এবং সেই থেকেই সিপিএম প্রশ্ন তুলে আসছে যে, সজলকে যদি তৎক্ষণাৎ গুলি করা হয়ে থাকে, তাঁর বুকে ব্যান্ডেজ এল কোথা থেকে? পুলিশের তদন্ত থেকে আদালতের শুনানি তথা সাক্ষ্যগ্রহণ, কোনও পর্বেই এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। সোমবার ফজলুল দাবি করেছিলেন, “কর্তব্যরত নার্স প্রথমেই ওর (সজলের) বুকে ক্ষতস্থানে খানিকটা তুলো লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে লাগিয়ে দেন। পরে ডাক্তারবাবু এসে ওই তুলো সরিয়ে দেখেছিলেন।”

এ দিন সেই নার্স বললেন, “রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। তাঁকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাঁকে সরাসরি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারবাবুও সঙ্গে-সঙ্গেই ওয়ার্ডে ঢোকেন। তার পরে কী হয়েছে বলতে পারব না।” ফজলুলের প্রতিক্রিয়া, “আমি যা বলেছি, সবটাই চোখে দেখা। অন্যরা কী বলছে, তার দায় আমার নয়।” চিকিৎসক পবিত্রবাবু শুধু বলেন, “যা বলার, আদালতে বলে দিয়েছি, আর কিছু বলব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন