আদালতের নির্দেশ

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে গড়া যাবে না ইটভাটা

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে কোনও সাবেক ইটভাটা থাকা চলবে না। মাটি নয়, ওই এলাকায় ইট তৈরির জন্য ব্যবহার করতে হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের মণ্ড। সম্প্রতি এমনই একটি নির্দেশ জারি করেছে পরিবেশ ট্রাইবুন্যাল। নিছক নির্দেশ নয়, তা কতটা কার্যকর করা গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে সে ব্যাপারে আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে।

Advertisement

রাহুল রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে কোনও সাবেক ইটভাটা থাকা চলবে না। মাটি নয়, ওই এলাকায় ইট তৈরির জন্য ব্যবহার করতে হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের মণ্ড। সম্প্রতি এমনই একটি নির্দেশ জারি করেছে পরিবেশ ট্রাইবুন্যাল।

Advertisement

নিছক নির্দেশ নয়, তা কতটা কার্যকর করা গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে সে ব্যাপারে আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে।

এ দেশের শীর্ষ আদালত বছর কয়েক আগে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে নির্গত ছাই-দূষণ রুখতে এবং একই সঙ্গে তা ফের ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে এমনই নির্দেশ জারি করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশে কতটা কার্যকর করা গিয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। পরিবেশ ট্রাইবুন্যাল তাই এ ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়ে সরকারি উদ্যোগ যাচাই করে নিতে চাইছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।

Advertisement

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পরিবেশ ট্রাইবুন্যাল তাদের এই নির্দেশ কার্যকর করার ব্যপারে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহারকেও সতর্ক করেছে। এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকেও। তাদের প্রতি নির্দেশ বড় কোনও নির্মাণ ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার সময়ে শর্ত আরোপ করতে হবে--সাবেক ইট নয়, ব্যবহার করতে হবে ফ্লাই অ্যাশ থেকে নির্মিত ইট।

ইট ভাটার দখলে ক্রমান্বয়ে কমছে রাজ্যের কৃষিজমি। সুপ্রিম কোর্ট তার নির্দেশে সে কথাও স্পষ্টই উল্লেখ করে ছিল। মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বর্ধমান, পাঁচ জেলাকে এই ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ সচিব। তবে প্রশাসনের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, “তবে সে নির্দেশ নিছকই ‘নিয়মরক্ষার’ খাতিরে কিছুটা মানা হয়েছিল। তার পরে অবস্থা যে কে সেই!” প্রশাসন সূত্রেও জানা গিয়েছে, ওই জেলাগুলিতে নতুন ইটভাটা চালু হওয়ার খবর মিলেছে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন-অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। তাঁর উদ্যোগেই হুগলির একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা গ্রিন ট্রাইবুন্যালের কাছে পিটিশন দাখিল করে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে অন্তত তিন হাজার ইটভাটা রয়েছে যাদের কাঁচামাল কৃষিজমির মাটি। প্রতিটি ইটভাটায় বছরে অন্তত ১০ লক্ষ ইট তৈরি হয়। এবং প্রতিটি ইটের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ কেজি মাটি। অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছরে কৃষি জমি থেকে অন্তত সাড়ে সাতশো কেজি মাটি হারিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার চুল্লির আগুনে।”

সরকারি এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশো কোটি কেজি মাটি নিশ্চুপে ট্রাক-বন্দি হয়ে পাড়ি দিচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন ইটভাটায়। পাশাপাশি, সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ মেনে উল্লেখিত জেলাগুলিতে ফ্লাই-অ্যাশ বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাইয়ের ব্যবহারের বিশেষ কোনও সদগতি হয়নি। ফলে মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূম কিংবা পুরুলিয়া জেলাতে অন্তত ৬৪টি ছাই-ইট তৈরির কারখানা থাকা সত্ত্বেও এখনও তাদের লাভজনক বাজার তৈরি হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন