যানজটে অচল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ।
দুই শহরের রাজপথ জুড়ে দু’টি ধর্মীয় কর্মসূচি। আর তার জেরেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রইল কলকাতা ও হাওড়া। মঙ্গলবার মাঘী পূর্ণিমায় শীতলা ঠাকুরের পুজোর স্নানযাত্রা উপলক্ষে ভক্তেরা দল বেঁধে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন উত্তর হাওড়ায়। আর শহর কলকাতায় ছিল সন্ত রবিদাস জয়ন্তী উপলক্ষে শোভাযাত্রা। দুপুর থেকে পরিস্থিতি এমনই হয়ে ওঠে যে, নবান্ন থেকে বেরিয়ে সালকিয়ার নিহত প্রতিবাদী যুবক অরূপ ভাণ্ডারীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েও মাঝপথ থেকেই ফিরে আসতে হয় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, মাঘী পূর্ণিমার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ দিন দুপুর থেকেই বেনারস রোডের দু’দিকের ও সালকিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বেরোয়। কাতারে কাতারে মানুষ জে এন মুখার্জি রোড, বাবুডাঙা, রাম ঢ্যাং রোড, অরবিন্দ রোড-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দল বেঁধে রাস্তায় নামেন। দুপুর থেকে বন্ধ ছিল উত্তর হাওড়ার জিটি রোড, বেনারস রোড-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। ফলে উত্তর হাওড়ার সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিম হাওড়ার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী যখন সালকিয়ায় যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন সিটি পুলিশের হাতে উত্তর হাওড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আর নেই।
এ দিকে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ তিলজলা থেকে হাজার দশেক মানুষ ধর্মীয় শোভাযাত্রায় বার হন। দরগা রোড, মৌলালি, লেনিন সরণি, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস মোড় পেরিয়ে শোভাযাত্রা যখন চার নম্বর ব্রিজে পৌঁছয়, তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী কয়েক হাজার ভক্ত হেঁটে এবং ছোটবড় গাড়িতে এই লম্বা পথ পেরোন।
পুলিশ জানায়, এর জেরে আমহার্স্ট স্ট্রিট, বিবেকানন্দ রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড, শিয়ালদহ উড়ালপুল, এজেসি বোস রোড, এপিসি রোড, সিআইটি রোড, বেলেঘাটা রোড-সহ বির্স্তীণ এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা থমকে পড়ে। রাস্তায় আটকে থাকে অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্রাম, ট্যাক্সি, অ্যাম্বুল্যান্স।
ট্রাফিক সার্জেন্ট এবং পুলিশের দাবি, রাজনৈতিক মিছিলের চেয়ে ধর্মীয় মিছিল বা শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত গন্তব্যের দিকে জোরে হেঁটে চলেন। কিন্তু ধর্মীয় শোভাযাত্রা গন্তব্যে পৌঁছতে তুলনায় অনেক বেশি সময় নেয়। রাস্তার মাঝখানে বার বার থেমেও যায় তা। এ দিনও তেমনই হয়েছে।
হাওড়ার পথে মানুষের ঢল। মঙ্গলবার।
ট্রাফিক পুলিশের দাবি, এ দিনের শোভাযাত্রায় বাজনদারদের সংখ্যা ছিল বেশি। লম্বা পথে বার বার থেমে থেমে জোরে বাজনা বাজাচ্ছিলেন তাঁরা। আর তাঁদের ঘিরে নেচে চলছিলেন ভক্তেরা। কোনও ভাবেই জোর খাটিয়েও শোভাযাত্রার গতি বাড়ানো যায়নি। ফলে এক একটি রাস্তা পেরোতে অনেক সময় লেগেছে। আর তাতেই বাড়ে বিপত্তি। লালবাজারের এক কর্তা জানান, শোভাযাত্রা মৌলালির মোড় পেরোনোর সময়ে কনভেন্ট রোড, এজেসি বোস রোড, এপিসি রোডে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। লেনিন সরণিতে শোভাযাত্রার গতি আরও কমে যায়। এর জেরে কলেজ স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে যানজট হয়। আবার ওই মিছিল নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ধরে চলায় সময়ে আটকে যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক দিকের রাস্তাও।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ অফিস ছুটির সময়ে পার্ক স্ট্রিট, নিউ পার্ক স্ট্রিট দিয়ে শোভাযাত্রা যখন তিলজলা রোডের দিকে এগোতে থাকে, সেই সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, পার্ক সার্কাস-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তৈরি হয় যানজট। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে লণ্ডভণ্ড করে ওই শোভাযাত্রা যখন তিলজলায় শেষ হয়, ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র