দুধকুমার ক্ষমা চাইলেও হাত কাটার হুমকি ইদ্রিসের

হাতের বদলে হাত। ফের কুকথার আস্ফালন। আক্রমণকারী তৃণমূলীদের হাত কেটে নেওয়ার কথা বলে পিছিয়ে এসেছেন বীরভূমের বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল। দলের শীর্ষনেতাদের বকুনির পরে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ তৃণমূল তাতে দমবার পাত্র নয়। বিজেপিকে পাল্টা এক হাত নিতে শনিবার খাস কলকাতায় তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলির মন্তব্য, “আমি বলছি, কেউ হাত কাটলে আমরাও হাত কেটে নিতে পারি!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

মঞ্চে তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম। রয়েছেন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম (বাঁ দিকে) এবং তাঁর পাশে তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। শনিবার ধর্মতলায় ইমামদের সভায়। —নিজস্ব চিত্র

হাতের বদলে হাত। ফের কুকথার আস্ফালন।

Advertisement

আক্রমণকারী তৃণমূলীদের হাত কেটে নেওয়ার কথা বলে পিছিয়ে এসেছেন বীরভূমের বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল। দলের শীর্ষনেতাদের বকুনির পরে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ তৃণমূল তাতে দমবার পাত্র নয়। বিজেপিকে পাল্টা এক হাত নিতে শনিবার খাস কলকাতায় তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলির মন্তব্য, “আমি বলছি, কেউ হাত কাটলে আমরাও হাত কেটে নিতে পারি!”

এ দিন ধর্মতলার মোড়ে ওয়াই চ্যানেলে বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সভায় ‘রণং দেহি’ ভঙ্গিতে মুখ খোলেন ইদ্রিস সাহেব। বক্তৃতার শেষ দিকে নাম না-করে দুধকুমারের বক্তৃতার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। এবং তখনই হাত কাটার জবাবে পাল্টা হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের একটি সভায় বীরভূমে বিজেপির জেলা সম্পাদক দুধকুমার তৃণমূলের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি শোনান। তিনি বলেছিলেন, “তৃণমূলের গুণ্ডারা বিজেপি কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে দাপাচ্ছে, শাসাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। সন্ত্রাসের কোনও শিকার যদি বিজেপির কর্মীরা হন, পার্টি করার জন্য যদি আক্রমণ আসে, ওই হাত কিন্তু ঘর থেকে বের করে নিয়ে বিজেপির ছেলেরা কেটে নেবে বন্ধু।”

এ কথা বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য নেতাদের চাপে দুধকুমারকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। তিনি লিখেছেন “এ রূপ বক্তব্যের জন্য আমি সমস্ত স্তরের নাগরিক এবং দলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।” দলের তরফে কুকথার জন্য এত দ্রুত ভৎসর্নার নজির তৃণমূলে নেই। তার পরেও দুধকুমারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে তৃণমূল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের আরও এক নেতা একই কুকথার পুনরাবৃত্তি করলেন।

ইদ্রিস যখন প্রকাশ্য মঞ্চে হাত কেটে নেওয়ার পাল্টা হুমকি দিচ্ছেন, তখন সেখানে উপস্থিত তৃণমূলের আর এক বিতর্কিত সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। সারদা কেলেঙ্কারির পাশাপাশি বাংলাদেশের জঙ্গি-মৌলবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। পরে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতারা ইদ্রিশের মন্তব্যে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা দলের বক্তব্য নয়। কেউ বলে থাকলে অন্যায় করেছে। ইদ্রিস ঠিক কী বলেছেন, তাঁর কাছ থেকে তা জেনে, দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।” রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও ধর্মতলায় ইমামদের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে ইদ্রিস বলতে ওঠার আগেই বক্তৃতা সেরে চলে যান। তিনি বলেন, “আমাদের দল হাত কাটায় বিশ্বাস করে না। আমাদের দল মানুষের সঙ্গে হাত মেলায়। হাত জোড় করে মানুষকে অভিনন্দন জানায়।”

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও বিশ্বহিন্দু পরিষদকে এক হাত নিতেই ইমামদের সভার মঞ্চটি এ দিন ব্যবহার করে তৃণমূল। তবে বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া হুঁশিয়ারি দেন, তাঁদের সংগঠন তৃণমূলকে সমর্থন করলেও, সরকারের খারাপ কাজকে সমর্থন করবে না। তাঁর দাবি, মমতা সরকারকে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও তৎপর হতে হবে।

ধর্মান্তরণ ও বিভাজন তৈরির প্রসঙ্গ তুলে এ দিন বিজেপি-ভিএইচপিকে এক হাত নিতে গিয়েছিলেন ইদ্রিস। কিন্তু পাল্টা হাত কাটার কথা বলতেই বিতর্কের সূত্রপাত। অতীতে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল বিরোধীদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ও পুলিশকে বোমা মারার ডাক দিয়েছিলেন। আর এক বিধায়ক মনিরুল ইসলামও এক কংগ্রেস নেতার মাথা কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন জনসভার মঞ্চ থেকে। সাংসদ তাপস পাল বিরোধীদের বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে মহিলাদের ধর্ষণ করার হুমকি দিতেও কসুর করেননি। এ বার পাল্টা হিংসার বার্তা দিয়ে ইদ্রিস কার্যত প্রমাণ করলেন, তৃণমূল আছে সেই তৃণমূলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন