দার্জিলিঙে পর্যটকের ভিড়, জলকষ্টে দুর্ভোগ

ভরা গ্রীষ্মে জমজমাট দার্জিলিং। কিন্তু জলকষ্টে দুর্ভোগে পড়ছেন পর্যটকেরা। তৃণমূলের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দূরত্ব বাড়লেও আপাতত বন্ধ, অবরোধের পথে হাঁটবেন না বলে ঘোষণা করেছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। তাই সমতলে তীব্র গরমে দার্জিলিং পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসাঠাসি।

Advertisement

রেজা প্রধান

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০২:৫৬
Share:

পানীয় জলের জন্য লম্বা লাইন। বৃহস্পতিবার দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই।

ভরা গ্রীষ্মে জমজমাট দার্জিলিং। কিন্তু জলকষ্টে দুর্ভোগে পড়ছেন পর্যটকেরা।

Advertisement

তৃণমূলের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দূরত্ব বাড়লেও আপাতত বন্ধ, অবরোধের পথে হাঁটবেন না বলে ঘোষণা করেছেন জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। তাই সমতলে তীব্র গরমে দার্জিলিং পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসাঠাসি। এমন অবস্থা যে, ম্যাল চৌরাস্তায় পা রাখার জায়গা নেই। চিড়িয়াখানার সামনে টিকিটের লম্বা লাইন। ভাড়ায় গাড়ি নিতে গেলেও লাইন। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও গাড়ি পাওয়া মুশকিল হচ্ছে। হোটেলে, সরকারি-বেসরকারি অতিথি নিবাসে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত কোনও জায়গা নেই।

কিন্তু বেশিরভাগ হোটেলেই কমবেশি জলকষ্ট চলছে। খাবার জল থাকলেও স্নানের জলের অভাব রয়েছে অনেক হোটেলে। রাজ্য পর্যটন দফতরের এক কর্তা জানান, জিটিএ-র পর্যটন বিভাগ পর্যটকদের সমস্যার দিকগুলি দেখছে। মোর্চা নেতা তথা দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান অমর রাই স্বীকার করেছেন, জলকষ্টে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকেরা। সিঞ্চল লেক থেকে জল আসে দার্জিলিঙে। তিনি বলেন, “এখন সুখা মরসুম চলছে। সে জন্য জলের জোগান কম। অধিকাংশ ঝোরায় তেমন জল নেই। সিঞ্চল লেকেও জল কম। তাই পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।” হোটেল মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, গড়ে প্রতিটি হোটেলকে কয়েক হাজার টাকার জল কিনতে হচ্ছে। তাতেও কুলোচ্ছে না।

Advertisement

তা সত্ত্বেও পর্যটকেরা কিন্তু খুশি। যেমন গুজরাত থেকে আসা রমেশ পটেল বলেন, “দার্জিলিঙে প্রথম এলাম। চমৎকার আবহাওয়া। গরমের দেশ থেকে এসে আরও ভাল লাগছে। সমস্যা একটাই, সেটা হল জল ঠিকঠাক মিলছে না। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ যে ভাবেই হোক ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।” হোটেল মালিকদের সংগঠনের সূত্রে জানা যাচ্ছে, সারা বছরই দার্জিলিঙে কমবেশি জলকষ্ট থাকে। এ বার পর্যটকের সংখ্যা প্রচুর হওয়ায় সেই কষ্ট বেড়েছে।

পর্যটকদের অবশ্য সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গাড়ি ভাড়া নিয়ে। দার্জিলিংয়ের আশেপাশে ঘোরাঘুরির জন্য গাড়ি মেলাই মুশকিল। দ্বিগুণ, তিন গুণ ভাড়া চাইছেন গাড়ির চালকদের একাংশ। এনজেপি, শিলিগুড়ি জংশন এলাকা থেকে পাহাড়ে যাতায়াতকারী গাড়ির চালকদের একাংশও দ্বিগুণ ভাড়া চাইছেন বলে অভিযোগ। দার্জিলিঙের আপার ক্লাবসাইড গাড়ি মালিক সংগঠনের সদস্য সাঙ্গে তামাঙ্গ বলেন, “আমাদের সংগঠনে সদস্য ৮৭ জন। ১৫ জুন পর্যন্ত সব ভাড়া হয়ে গিয়েছে। সে সব ভাড়ার হার ঠিকই আছে।”

তা হলে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ হল কেন? ক্লাব সাইড গাড়ির মালিক সংগঠনের সদস্যদের একাংশ জানান, চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। তবে তাঁদের দাবি, “সমতল থেকে পাহাড়ে যাতায়াতকারী গাড়ির একাংশ সুযোগ বুঝে চড়া হারে ভাড়া আদায় করছে।” গাড়ি ভাড়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন অমর রাই।

পর্যটন মরসুমে পুলিশ-প্রশাসন-জিটিএ তৎপর হোক, তা চাইছেন ট্যুর অপারেটরদের অনেকেও। দার্জিলিঙের ট্যুর অপারেটর প্রদীপ লামা জানান, কলকাতা সহ গোটা রাজ্য থেকে তো বটেই, গুজরাত সহ ভিন রাজ্য থেকে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। তিনি বলেন, “গত বছরের গরমের তুলনায় এ বার দার্জিলিঙে দ্বিগুণেরও বেশি পর্যটক এসেছেন।” যে কারণে হোটেলে জায়গা নেই। গাড়ি ভাড়ার হার চড়া। তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষ নজরদারি বাড়াক। না হলে পর্যটকদের কাছে দার্জিলিঙের সুনামহানি হবে।”

হোটেল মালিকরাও চান জিটিএ দ্রুত হাল ধরুক। ক্লাবসাইড রোড, ম্যাল চৌরাস্তা, চকবাজার, রাজভবনের অদূরের একাধিক হোটেলের অফিসার-কর্মীদের গলায় উদ্বেগের সুর। বেশির ভাগ হোটেলেই রোজ ঘরের জন্য পর্যটকদের ঢল নামছে। সকলকেই প্রায় হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন