সূক্ষ্ম খোঁচা দিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়!
যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর পরে বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেববাবু দলে দুর্বৃত্তায়নের কথা স্বীকার করে তৃণমূলের বিড়ম্বনা আরও বাড়ালেন। আইএনটিটিইউসি-র ডাকে শনিবার ধর্মতলায় মিছিলের শেষে শোভনদেববাবু বলেন, “সুগতর সঙ্গে আমি একমত। দুর্বৃত্ত সমাজেরই একটা অংশ। সব রাজনৈতিক দলেই দুর্বৃত্ত রয়েছে। শাসক দলে একটু বেশি থাকবে।”
ক্ষমতাসীন দলে খারাপ লোকের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দিন দুয়েক আগেই মুখ খুলেছিলেন সুগতবাবুু। দুর্বৃত্তদের দল থেকে বিতাড়নের দাবি তুলেছিলেন হার্ভার্ডের এই অধ্যাপক। তাঁর ‘জাগ্রত বিবেকে’র প্রতিধ্বনিই শোভনদেববাবুর এ দিনের বক্তব্যে, “সব দল থেকেই দুর্বৃত্ত চলে যাবে কংগ্রেস, সিপিএম কেউই সে কথা বলতে পারবে না। তবে সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে দুর্বৃত্তদের সরাতে হবে, নয়তো পিছনের দিকে ঠেলে দিতে হবে।” বিজেপি সিবিআইকে ব্যবহার করছে এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসার প্রতিবাদে মিছিল শেষে শোভনদেববাবুও ভাল ও সৎ লোকেদের রাজনীতির সামনের সারিতে আনার দাবি জানানোয় তৃণমূলের অস্বস্তি বেড়েছে।
প্রবীণ এই বিধায়কের বক্তব্যের সঙ্গে তৃণমূল যে সহমত নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শোভনদেব কোন প্রেক্ষাপটে কী বোঝাতে চেয়েছেন, জানি না। তবে যা বলেছেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া। দলের প্রতিক্রিয়া নয়।” সরকারি মুখ্য সচেতকের এ দিনের মন্তব্যের কথা জেনে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব শোভনদেবের সঙ্গে কথা বলেন। বর্ষীয়ান বিধায়ক দলীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন, তিনি নিজের দলকে আক্রমণ করে কিছু
বলেননি। সুগতবাবুর পাশেও দাঁড়াননি। তিনি যা বলেছেন, সেটা নেহাতই চারপাশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর মতামত।
সুগতবাবুর আগে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাধন পাণ্ডে ‘বিবেক’-এর ডাকে দলের নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এ বার শোভনদেববাবুরও ‘উপলব্ধি’ প্রকাশ্যে আসায় সিপিএম সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, “শোভনদেববাবুর মতো অভিজ্ঞ নেতার অনেক আগেই এ ব্যাপারে মুখ খোলা উচিত ছিল। পরে হলেও শোভনদেববাবু যে মুখ খুলেছেন সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।” তাঁর বক্তব্য, “সব দলেই কিছু দুর্বৃত্ত থাকতে পারে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দল তৃণমূলে কিছু ভদ্রলোক ঢুকেছেন। আমার মনে হয়, সেই ভদ্রলোকেরা বেশি দিন ওই দলে থাকতে পারবেন না।” বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়ও বলেছেন, “শোভনদেববাবু তৃণমূলে ব্যতিক্রমী মানুষ। যতদূর জানি, তিনি সৎ। তাই বিবেক তাড়িত হয়েই নিজের দলকে এ ভাবে খোঁচা দিয়েছেন।’’
দলের অন্দরের ত্রুটি নিয়ে শোভনদেববাবু মুখ খুলেছেন ঠিকই। একইসঙ্গে আবার বিতর্ক এড়াতে দলে শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়াও বহাল রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। কোনও দল দুর্বৃত্ত-মুক্ত বলে দাবি করলে তিনি সেই দলে যোগ দেবেন বলেও মন্তব্য করেছেন। এমনকী, সারদা-কাণ্ডে দলের বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার ঝড়কে ঠেকানোরও চেষ্টা করেছেন। দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে সিবিআইয়ের জেরার প্রসঙ্গ টেনে শোভনদেববাবুর সাফাই, “কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সে চোর হয়ে যায় না!”