দক্ষিণের কড়চা

বনবাদাড় আর মাঠঘাট থেকে তিনি তুলে আনেন শুশনি, থানকুনি, কলমি, মানকচু, সজনে, ছোলা, মটর, খেসারি আর হরেক রকমের শাকপাতা। দিনের আলো নিভে এলে ডালা ভর্তি শাকসব্জি নিয়ে পাড়ি দেন শিয়ালদহ। সেখানে বাজারে সে সব বেচে ট্রেন ধরে ঘরে ফেরেন সূর্য ওঠার ঠিক আগে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৩
Share:

নন্দরানির লক্ষ্মীভাঁড়

Advertisement

বনবাদাড় আর মাঠঘাট থেকে তিনি তুলে আনেন শুশনি, থানকুনি, কলমি, মানকচু, সজনে, ছোলা, মটর, খেসারি আর হরেক রকমের শাকপাতা। দিনের আলো নিভে এলে ডালা ভর্তি শাকসব্জি নিয়ে পাড়ি দেন শিয়ালদহ। সেখানে বাজারে সে সব বেচে ট্রেন ধরে ঘরে ফেরেন সূর্য ওঠার ঠিক আগে। ছেলে জন্মানোর কিছু দিন পর নবজাতকের ভার তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে অন্য জনের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন স্বামী, চার দশক আগে। সেই থেকে আজ অবধি এই ভাবেই ক্ষুন্নিবৃত্তি চলছে। বয়স ষাট ছাড়িয়েছে নন্দরানি মণ্ডলের। শিয়ালদহ থেকে দু’শো কিলোমিটার দূরে, মুর্শিদাবাদে ভগবানগোলা থানার সুন্দরপুর পঞ্চায়েত এলাকার উড়াহার গ্রামে আরজিপুর-বৈষ্ণবপাড়ায় তাঁর পাটকাঠির বেড়া আর করোগেটেড শিটের ছাউনি দেওয়া ভাঙাচোরা দু’কামরার ঘর। সেই ঘরেই প্রতি দিন এক টাকা, দু’টাকার কয়েন জমিয়ে নন্দরানি ভরে তুলেছিলেন তাঁর লক্ষ্মীর ভাঁড়। বাড়িতে ‘নীল শৌচালয়’ (ব্লু টয়লেট) গড়তে সেই ভাঁড়া ভাঙা তিন হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন বিডিও-র হাতে। সরকার দশ হাজার টাকা দিয়েছে। তেরো হাজার টাকায় মিলেছে শৌচালয়। কিন্তু পরে তাঁর অদম্য উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়ে সরকারি কোষাগার তিন হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “বৃদ্ধার অনন্য প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাতে ওই তিন হাজার টাকা তাঁর নামেই ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া হয়েছে।” জেলায় তিনিই এখন ‘মিশন নির্মল বাংলা’র মুখ।

আলোর আশায় নন্দরানি তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের নাম দিয়েছিলেন প্রদীপ। সেই প্রদীপ এখন দুই সন্তানের বাবা। পেশা দিনমজুরি। তাঁর স্ত্রীই নন্দরানির শৌচালয় তৈরির চেষ্টার নেপথ্য কারণ। প্রদীপ বলেন, “আমার শ্বশুরবাড়িতে শৌচালয় রয়েছে। তাই বিয়ের পর থেকেই বউ শৌচালয়ের জন্য জিদ করত। আমি টাকা জমিয়ে করব ভেবেও পারিনি। মা করে দেখাল।” লক্ষ্মীদেবী বলেন, “নাতনিও তো বড় হচ্ছে। ক্লাস নাইনে পড়ে। মাঠঘাটে শৌচকর্ম তার পক্ষে আর নিরাপদ নয়। তাই শৌচালয় গড়ার জেদ আরও পেয়ে বসেছিল।”

Advertisement

মাসখানেক আগে পাওয়া সেই নীল শৌচাগারের সঙ্গে আগে থেকে চালু সরকারি প্রকল্পের শৌচালয়ের অনেক ফারাক। আগের প্রকল্পে সরকার দশ হাজার দিলেও উপভোক্তা মাত্র ন’শো টাকা দিতেন। কিন্তু ওই সব শৌচালয়ের ছাদ ও দরজা টিনের, বালতিতে জল নিয়ে ঢুকতে হয়। অন্য দিকে ১৩ নীল শৌচালয়ের ছাদ কংক্রিট ঢালাই, পিভিসি দরজা এবং ভিতরে কলে জল পেতে দু’শো লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জলের ট্যাঙ্কও দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীর ভাঁড়ে টাকা জমিয়ে নন্দরানি অনেককেই সেই সুখ ও সুরক্ষার পথটি দেখিয়ে দিলেন।

ছবির ভোজ

বহরমপুর ফিল্ম সোসাইটির সার্ধশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আট দিনের চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হয়েছে সংস্থার নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ ‘ঋত্বিকসদন’-এ। সংস্থার সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস জানান, ২১ মার্চ উৎসবের উদ্বোধন করবেন চলচ্চিত্র জগতের তিন ব্যক্তিত্ব বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিজিৎ দত্ত ও শঙ্কর পাল। পর দিন সোমনাথ গুপ্ত, ২৫ মার্চ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ২৬ মার্চ অশোক বিশ্বনাথন আলোচনায় যোগ দেবেন। উৎসবে দেখানো হবে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’, রুশ ছবি ‘লেভিয়াথন’, তাইওয়ানের ছবি ‘দ্য ওয়েওয়ার্ড ক্লাউড’, রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘুড়ি’, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘আনোয়ার কি আজব কিস্সা’, অশোক বিশ্বনাথনের ‘1+1=3’, জাপানের ‘স্টিল দ্য ওয়াটার’ ও কেতন মেহতার ‘রং রসিয়া’। উৎসব শেষ হবে ২৮ মার্চ।

লালমাটির লোককথা

লাল মাটির দেশে শৈশব কেটেছে শান্তি সিংহের। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে শুনে এসেছেন রাঢ় বাংলায় প্রচলিত নানা লোককথা। পরে গবেষণা করেন লোকসাহিত্য নিয়ে। তারই সূত্রে সংগৃহীত বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার লোককথাগুলি এ বার দুই মলাটে, তাঁর কথনে, জিজ্ঞাসা পাবলিশিং হাউস থেকে, লাল মাটির লোককথা। ব্যাঙ্গমা পাখির পালক, যমুনাবতী, দুইভাই, রাজার বিচার, বিধিলিপি, রাখালের পিঠেগাছ ইত্যাদি গল্পে আঞ্চলিক ভাষার কাঠামোটিকে বর্জন করেননি শান্তি সিংহ। বিশেষ অঞ্চলের লোককথার এমন সংকলন দুর্লভ বই কী।

কৃষ্ণযাত্রা

বীরভূমের ব্লসম থিয়েটার বরাবরই নানা সাবেক নাট্য বা পালা মঞ্চস্থ করে। রবিবার সন্ধ্যায় ওই নাট্য সংস্থার কর্ণধার পার্থ গুপ্ত তাঁর নিজের গ্রাম, ইলামবাজারের দ্বারন্দায় নিজস্ব থিয়েটার ক্যাম্পাসে মঞ্চস্থ করলেন কৃষ্ণযাত্রা ‘মানভঞ্জন’। শিল্পীরা সবাই নিরক্ষর এবং ইলামবাজার, লাভপুর, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর ও মহম্মদবাজার এলাকার বাসিন্দা। পার্থ বললেন, “আগে কৃষ্ণযাত্রা হত কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে। এক সময়ে যাঁরা কৃষ্ণযাত্রা করেছিলেন, তাঁদের বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়। কিন্তু তাঁদের দিয়েই ফের ‘মানভঞ্জন’ মঞ্চস্থ করানো হয়েছে।” এলাকার বহু গ্রামের মানুষ পালা দেখতে ভিড় জমান।

রাতজাগানিয়া

নাটকের জন্য রাত জাগা। গত এক দশক ধরে এটাই শান্তিপুরের দস্তুর। প্রতি বছর ২৭ মার্চ, বিশ্ব নাট্য দিবসে। এ বারও শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরির নির্মলেন্দু লাহিড়ী মঞ্চে নাট্যমোদীরা এসে জড়ো হবেন। সকালে পদযাত্রা। তার পর সারা রাত ধরে নাটক, নাচ, গান, কবিতা আর ছবি আঁকা। এ বার উদ্বোধনে নাট্যকর্মী অরুণ মুখোপাধ্যায়ের আসার কথা রয়েছে। সংবর্ধনা দেওয়া হবে অভিনেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়, প্রবীণ লেটো, নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দ ও শিল্পী হরকুমার গুপ্তকে। সর্ব অর্থে জেগে ওঠা, জেগে থাকাই যেহেতু পাখির চোখ, শান্তিপুর সাংস্কৃতিক আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের নামও তাই নাট্য কোজাগরী।

সারথি

কোনও আঁকা ছবি নয়, মূলত তথ্যভিত্তিক কবিতা। কবিতার অংশবিশেষ এবং নানা গদ্যের সংকলন তিনি সাজিয়ে দিয়েছিলেন সিমা অ্যাওয়ার্ডস শো-এ। মাত্র ৯ জন পুরস্কৃত হয়েছেন। তার মধ্যে বীরভূম জেলা স্কুলের আঁকার স্যর সারথি দাস তাঁদের অন্যতম। শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে ইন্টার্যাক্টটিভ ইনস্টলেশন নিয়ে স্নাতকোত্তর সারথীর বিষয় ছিল ‘আব্রু’। ১১০টি খাটিয়া ও ৭০টি তালাই ব্যবহার করেছেন তিনি। তালাইয়ের উপরে নানা রংয়ে লেখা বহু কবিতার পঙ্ক্তি ও বিভিন্ন মানুষের বক্তব্যের অংশবিশেষ। সারথীর পছন্দের ধরনটাই এমন, প্রথাগত অঙ্কন ছুঁয়ে থেকেও তার বাইরে ডানা মেলে দেওয়া। শিক্ষা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খল অবস্থা তুলে ধরতে এক বার তিনি নিজের স্কুলে সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ করেছিলেন চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ উল্টোপাল্টা করে সাজিয়ে। পঁচিশ হাজার বাতিল জলের বোতল দিয়ে এক বার গড়েছিলেন ইনস্টলেশন। তাঁর হাতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল’ রূপ পেয়েছিল অজস্র মইয়ের ব্যবহারে। সারথি তাঁর প্রদর্শনীতে ৩০০ পৃষ্ঠার ছ’টি বই প্রকাশ করেছেন। তাতে ১৯৮১ সালে তপন সিংহর আদালত ও একটি মেয়ে চিত্রনাট্য প্রকাশিত হয়।

ভোটের দিনে

উত্তম চৌধুরীর ডুয়ার্সের দৃশ্যকণা একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাব্যগ্রন্থ। কৃশতনু বইটিতে ধরা রয়েছে কবির চোখে কোনও একটি নির্বাচনে ভোটদানের দিন ও তার আগে-পরে। ১০০টি তিন লাইনের কবিতা। এই একশোটি কবিতা নিয়েই গোটা একটি ঘটনা। যাদবপুরের প্রিয়শিল্প প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে রয়েছে ডুয়ার্সের দৃশ্য, ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নানা কথা, নানা লোক, বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং লেখকের মনের অবস্থার এক ধারা বিবরণী। রয়েছে কয়েকটি হাতে আঁকা ছবিও। কবির এটি একাদশতম কাব্যগ্রন্থ।

মায়ের ছবি

মিরা আলফাসার জন্ম প্যারিসে, ১৮৭৮ সালে। অধ্যাত্মের সন্ধানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরে ১৯১৪ সালে তিনি পণ্ডিচেরিতে শ্রীঅরবিন্দ সন্নিধানে আসেন এবং কালক্রমে হয়ে ওঠেন শ্রীমা। তাঁর ভারতে আসার শতবর্ষ উপলক্ষে শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম ট্রাস্টের তরফে পণ্ডিচেরি ও চন্দননগর থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল ছবির অ্যালবাম। বছর ঘোরার আগেই তা নিঃশেষিত হয়ে যাওয়া এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীমার ১৩৭তম জন্মদিনে প্রকাশ করা হল দ্বিতীয় সংস্করণ। সঙ্গের ছবিটি ১৯৩৫ সালে পেন্সিলে আঁকা শ্রীমার আত্মপ্রতিকৃতি।

পুতুল নেবে গো

বেশ বড় গ্রামবাংলার মাটির পুতুলের ঝুড়িটি। তার বৈচিত্র্যও অনেক। সেই সব বৈচিত্র্যের সন্ধানে পায়ে হেঁটে গ্রামান্তরে ঘুরেছেন বিধান বিশ্বাস। নদিয়ায় জন্ম, বেড়ে ওঠা কৃষ্ণনগরে। এর আগে কাজ করেছেন বাংলার শোলাশিল্প নিয়ে। এ বার বাংলার মাটির পুতুলের সামাজিক অনুষঙ্গ, কোন মেলায় মাটির পুতুল পাওয়া যায় তার খোঁজ আর নানা পুতুলের নানা রূপ নিয়ে প্রকাশিত হল তাঁর বই বাংলার মাটির পুতুল (টেরাকোটা)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement