খুনের মামলায় অর্ধযুগেরও বেশি জেল খাটা সত্ত্বেও এক যুবককে ক্রমাগত নিম্ন আদালতে টানাহেঁচড়া করতে থাকায় প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের কোপে পড়েছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার। সম্প্রতি ওই সুপার সাসপেন্ড হওয়ায় এই মামলায় এ বার খোদ ডিআইজি (কারা)-কে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত।
নিম্ন আদালত খুনের দায়ে ওই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সাত বছর আগে। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ওই যুবককে প্রতি মাসে নিম্ন আদালতে হাজির করানো হচ্ছে কেন, জেল সুপারকে তার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ বার একই নির্দেশ দেওয়া হল ডিআইজি (কারা)-কে। বিচারপতি অসীম রায় মঙ্গলবার ওই কারাকর্তাকে নির্দেশ দেন, হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করে জানাতে হবে, দণ্ডিত আসামিকে ফি-মাসে নিম্ন আদালতে তুলে হয়রান করা হচ্ছে কেন? এই ব্যাপারে হাওড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতেও রিপোর্ট জমা দিতে হবে। শুক্রবার ডিআইজি-র ওই হলফনামা দাখিল করার কথা।
দণ্ডিত যুবকের নাম রাজীব দত্ত। হাওড়ার জগাছা থানা এলাকার একটি খুনের ঘটনায় ২০০৭ সালে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। হাইকোর্টে আবেদন করে ২০০৯ সালে জামিন পান রাজীব। জামিনের বিরোধিতা করে সরকার পক্ষ পাল্টা মামলা করে। সেই মামলায় ২০১০ সালে তাঁর জামিন খারিজ হয়ে যায়। তার পর থেকে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলেই রয়েছেন। কিন্তু মাসে এক বার তাঁকে হাওড়া আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে গিয়ে ওই যুবককে নিয়মিত পরিশ্রম করতে হয়। তা সত্ত্বেও জেল থেকে তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। গত ২২ জানুয়ারি বিচারপতি রায় প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ দিন আদালতে হাজির হয়ে তাঁকে তারও কারণ দর্শাতে হবে।
কারা দফতরের ডিআইজি সুদীপ্ত চক্রবর্তী এ দিন সকালে বিচারপতি রায়ের আদালতে হাজির হয়ে জানান, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে কিছু দিন আগে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওই জেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব এখন তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। তবে তিনি বন্দি রাজীবের বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানেন না। প্রাথমিক ভাবে শুধু জেনেছেন, ওই বন্দি প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন ২০১২ সাল থেকে। বিচারপতি এই ব্যাপারে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিচারপতি জানিয়ে দেন, কী কারণে ওই বন্দিকে প্রতি মাসে হাওড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হচ্ছে, হলফনামার সঙ্গে সেই রিপোর্টও পেশ করতে হবে ডিআইজি-কে।