দলের কাজ দেখাতে নির্বাচন কমিশনে মুকুল

সিবিআইয়ের কাছ থেকে সময় কিনে কেন দিল্লি এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়? সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারির আশঙ্কা করে আইনি রক্ষাকবচের খোঁজে, না কি তাঁর নিজের কথায় ‘দলের কাজে’? বস্তুত ‘দলের কাজ’ দেখাতে আজ যে ভাবে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে অতিসক্রিয়তা দেখালেন মুকুল, তা তাঁর চরিত্রবিরুদ্ধ বলেই সকলে বলছেন। সাংবাদিক-আলোকচিত্রীদের ডেকে নির্বাচন কমিশনে গেলেও দরজায় গাড়ি পৌঁছনোর বেশ খানিকটা আগেই নেমে পড়লেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২
Share:

সিবিআইয়ের কাছ থেকে সময় কিনে কেন দিল্লি এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়? সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারির আশঙ্কা করে আইনি রক্ষাকবচের খোঁজে, না কি তাঁর নিজের কথায় ‘দলের কাজে’?

Advertisement

বস্তুত ‘দলের কাজ’ দেখাতে আজ যে ভাবে সংবাদমাধ্যমকে ডেকে অতিসক্রিয়তা দেখালেন মুকুল, তা তাঁর চরিত্রবিরুদ্ধ বলেই সকলে বলছেন। সাংবাদিক-আলোকচিত্রীদের ডেকে নির্বাচন কমিশনে গেলেও দরজায় গাড়ি পৌঁছনোর বেশ খানিকটা আগেই নেমে পড়লেন। ক্যামেরার দিকে চোখ রেখে হেঁটে চললেন, তার পরে দলের তরফে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দিলেন নবনিযুক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের হাতে। তিনি যে গ্রেফতারের ভয়ে দিল্লি চলে এসে দুঁদে উকিলদের সঙ্গে গোপনে শলা-পরামর্শ করছেন না সেটা প্রমাণের জন্যই যে দলের কাজের বিষয়টা এতটা সাজানো, তা যেন আরও প্রকট হয়েছে আজ। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের ঠিক পরেই পশ্চিমবঙ্গের দুটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ফলে আগের নির্বাচনের ফলাফলে পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, এই যুক্তি তুলেই দলের পক্ষে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

কিন্তু তার পরেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, মুকুলের দিল্লি আসা আসলে সিবিআই-এর হাতে সম্ভাব্য গ্রেফতারি ঠেকাতে রাজনৈতিক এবং আইনি রাস্তাগুলি খতিয়ে দেখাই। কিন্তু সেই বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রাখতে চেয়েছেন তিনি। আইনজীবী কপিল সিব্বলের সঙ্গে যে তিনি গোপনে যোগাযোগ রেখে চলছেন তবু তাঁর কথাতেই তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় মুকুলবাবু বলেন, “কপিল সিব্বল মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা এমন কি নতুন ব্যাপার!” তবে সেই সাক্ষাৎকার কতটা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি মুকুল। কালই কলকাতায় ফেরার কথা তাঁর।

Advertisement

মুকুল যে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন, সে কথা আগেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। সাধারণ ভাবে আগে থেকে সময় নেওয়া থাকলে রাজনৈতিক নেতাদের গাড়ি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ভিতরে ঢুকে যায়। কিন্তু আজ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুকুলবাবু বেশ কিছুটা আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। আগে থেকে তাঁর সংবাদমাধ্যমকে বলা থাকায় ক্যামেরা যে প্রস্তুত থাকবে, তা তিনি জানতেন। ছবি তোলার সুযোগ দিয়ে অনেকটা রাস্তা হেঁটে ভিতরে ঢোকেন মুকুল। একটি প্রতিবাদপত্র জমা দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। ঘটনাচক্রে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আজই দায়িত্বভার নিয়েছেন এইচ এস ব্রহ্ম। তাঁর জন্য গোলাপও নিতে ভোলেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

পরে বেরিয়ে মুকুল বলেন, “ভারতে তিন মাস ধরেও নির্বাচন হয়। কিন্তু ফলাফল প্রকাশিত হয় এক দিনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে আগামী মাসের ১০ তারিখ। আর পশ্চিমবঙ্গের ভোটের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ফলাফল ১৬ তারিখ। এ ঘটনা অভূতপূর্ব। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফলাফল দু’দিনে করা হয়েছে। যাতে একটি ফলাফলের প্রভাব অন্য নির্বাচনে পড়ে। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।” নির্বাচন কমিশনের কর্তা ধীরেন্দ্র ওঝা বলেন, “আমরা তৃণমূলের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন