নেত্রীর নজর ফিরতেই ফের আলোয় অধিকারী-রাজ

ফের পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পদে একাধিক রদবদল। আর এ বার পাল্লা ভারী অধিকারী পরিবারের দিকেই। জেলায় অধিকারী পরিবারের আধিপত্য খর্ব করতে গত লোকসভা ভোটের পরই তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য তৃণমূল যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

ফের পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পদে একাধিক রদবদল। আর এ বার পাল্লা ভারী অধিকারী পরিবারের দিকেই।

Advertisement

জেলায় অধিকারী পরিবারের আধিপত্য খর্ব করতে গত লোকসভা ভোটের পরই তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য তৃণমূল যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবীণ নেতা শিশির অধিকারীকে জেলা সভাপতি পদে রেখেও জেলা কার্যকরী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অধিকারী পরিবারের বিরোধী বলে পরিচিত, রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে। দুই শিবিরের সংঘাত তাতে আরও বেড়েছিল। শেষমেশ খোদ দলনেত্রীর হস্তক্ষেপে সম্প্রতি তমলুকে একটি বেসরকারি অতিথিশালায় মুখোমুখি বৈঠকে বসে বিরোধ মেটাতে উদ্যোগী হন শিশিরবাবু। রাজ্য স্তরেও আবার তৃণমূলের পরিবর্তিত সমীকরণে এখন দলনেত্রীর ‘কাছের মানুষ’ শুভেন্দু। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে একঘরে করে দিতে শুভেন্দুকে নতুন করে কাছে টেনেছেন তৃণমূল নেত্রী। পূর্ব মেদিনীপুরে সাংগঠনিক রদবদলে শুভেন্দু-শিবিরের আবার আলোয় ফেরাকে এই সমীকরণের অঙ্গ হিসাবেই দেখা হচ্ছে দলের অন্দরে।

জেলার ২৫টি গ্রামীণ ও ৫টি টাউন ব্লকের মধ্যে বেশ কয়েকটির সভাপতি পদে পরিবর্তন করা হয়েছে। জেলা স্তরে পাঁচ থেকে সাধারণ সম্পাদকের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ জন। দলের অন্দরের ব্যাখ্যায়, অখিলবাবুর নিজের বিধানসভা এলাকায় দলের দুই ব্লক সভাপতি পদে তাঁর অনুগামীরা রয়েছেন। বাকি জেলার অধিকাংশ ব্লক সভাপতি পদে অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠেরাই স্থান পেয়েছেন।

Advertisement

দলের জেলা সহ-সভাপতি হিসাবে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান, কোলাঘাটের বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী, এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস, খেজুরির নেতা বিমান নায়ক, সুতাহাটার কমলেশ চক্রবর্তী, কাঁথির ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র এবং হরিসাধন দাস অধিকারীকে। এঁদের মধ্যে একমাত্র বিপ্লববাবুই অধিকারী-বিরোধী শিবিরের নেতা হিসাবে জেলায় পরিচিত। জেলার নন্দীগ্রামের দু’টি, খেজুরির দু’টি, তমলুক, পাঁশকুড়া, কাঁথির তিনটি ব্লকে সভাপতি পদে আগের মতোই অধিকারী পরিবার-ঘনিষ্ঠেরাই রয়েছেন।

অন্য দিকে, কোলাঘাটে দলের সভাপতি মদন মিশ্রের পাশে ওই ব্লকে নতুন কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মদনবাবু অধিকারী-বিরোধী শিবিরের এবং অসিতবাবু অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। হলদিয়া শহরের ব্লক সভাপতি সাধন জানাকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক তুষার মণ্ডলকে (অধিকারী-ঘনিষ্ঠ)। কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডলকে (অধিকারী-ঘনিষ্ঠ)। নন্দকুমার, ময়না, সুতাহাটা, পটাশপুর ১ ও ২ ব্লক, এগরা টাউন, কাঁথি টাউন ব্লকেও অধিকারী-ঘনিষ্ঠরা শীর্ষে রয়েছে।

অধিকারী-শিবির প্রত্যাশিত ভাবেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই রদবদল নিয়ে হইচই করতে নারাজ। জেলা সভাপতি শিশিরবাবুর বক্তব্য, “দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশিকা অনুযায়ী সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। এটা দলের রুটিন কার্যক্রম।” আর শুভেন্দু বলেছেন, “সাংগঠনিক পদের জন্য জেলা কমিটির তরফে রাজ্য সভাপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তিনি অনুমোদন করেছেন। এটা রুটিন সাংগঠনিক পরিবর্তন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন