শিল্প থেকে বর্ধমান

নজর ঘোরাতে চাইছেন মমতা, সরব বিরোধীরা

সারদা এবং বর্ধমান, দুই ঘটনাতেই বিপাকে শাসক দল। বেকায়দায় পড়ে দুই ঘটনাতেই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দিকে অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে এ বার সরব হল বিরোধীরা। কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কিছু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

সারদা এবং বর্ধমান, দুই ঘটনাতেই বিপাকে শাসক দল। বেকায়দায় পড়ে দুই ঘটনাতেই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দিকে অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে এ বার সরব হল বিরোধীরা।

Advertisement

কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কিছু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীকে হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের গ্রেফতার করে হয়রান করা হচ্ছে, রাজ্যে বিনিয়োগ করতেও বারণ করা হচ্ছে। সারদা-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনেই ওই অভিযোগের উল্লেখ করে মমতা নিশানা করেছিলেন কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-কে। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলকে পাল্টা তোপ ফিরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। তাদের পাল্টা অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের হেনস্থার অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজ্যে শিল্পের বেহাল দশা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সারদা-কাণ্ডের তদন্ত নিয়েও সংশয় তৈরি করার চেষ্টা করছেন। আবার একই সঙ্গে বর্ধমান-কাণ্ডকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার চেষ্টাও ছাড়ছেন না! কারণ, বুধবার মমতাও বর্ধমান নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার জন্য বিজেপি-কে দুষেছিলেন।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “সিঙ্গাপুর গিয়ে লাভ হয়নি। গত কয়েক মাসে মুখ্যমন্ত্রী এক এক জন করে অনেক শিল্পপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও লগ্নি আসছে না। এই সিন্ডিকেট, তোলাবাজির মধ্যে কে বিনিয়োগ করতে আসবে? এখন বেকায়দায় পড়ে মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন হেনস্থার অভিযোগ তুলে শিল্পপতিদের কাছে টানার। কিন্তু এই চেষ্টাতেও ফল মিলবে না!” অবাঙালি ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের বড় অংশের সমর্থন এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছে। সম্প্রতি বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শিল্পপতি শিশির বাজোরিয়াকে পাশে নিয়েই এ দিন রাহুলবাবু বণিক মহলের প্রতি বার্তা দিতে চেয়েছেন, “এক-দু’জন শিল্পপতিকে গোয়েন্দাদের জেরা করা মানেই তাঁরা দোষী নন। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনীতি করা উচিত নয়।” নবান্ন অভিযান করতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এ দিন শিল্প নিয়ে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। অধীর বলেছেন, “টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে কী লাভ হল? পশ্চিমবঙ্গে শিল্পে অমাবস্যা লেগেছে! সুন্দরবনে পিকনিক করে এখন মুখ্যমন্ত্রী শাড়ির আঁচল দিয়ে শিল্প টানার চেষ্টা করবেন শুনছি! এ রাজ্যে তো এখন বোমা বানানোই একটা শিল্প!”

Advertisement

অধীর যেমন এই সূত্রেই বর্ধমানের ঘটনা টেনেছেন, তেমনই ফের সরব হয়েছেন রাহুলবাবুও। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, “তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন পুলিশকে বোমা মারুন! বর্ধমানে গিয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সভা করে বলল, পুলিশকে তল্লাশি করুন! এ সব সাধারণ কথা নয়। ওই জামাতকে তৃণমূল ব্যবহার করেছিল রাজনীতির স্বার্থে আর এখন জমিয়তেকে ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িকতার জন্য!” জমিয়তের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল নেতৃত্বও রাহুলবাবুর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর মন্তব্য করেছেন, “এনআইএ তদন্ত শেষ করার মুখে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুললেন! এত দিন চুপ করে ছিলেন কেন? কারণ, বোবার কোনও শত্রু নেই!” বর্ধমান-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে যে ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি করেছে প্রদেশ কংগ্রেস।

বিজেপি-তৃণমূলের মেরুকরণের রাজনীতি মোকাবিলায় বসে নেই সিপিএমও। দলের কৃষক সভার আয়োজনে বিনয় কোঙারের স্মরণসভায় গিয়ে এ দিনই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র আহ্বান জানিয়েছেন, “সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে পারে বামপন্থীরাই। তবে এই বিপদের মোকাবিলায় লড়াই করতে হবে একেবারে গ্রাম স্তর থেকে। সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে একেবারে নিচু তলা থেকে প্রয়োজনে ঝান্ডা ছেড়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে একজোট হতে হবে।” বর্ধমান-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি দাবি ও সাম্প্রদায়িকতার আবহ তৈরির প্রতিবাদ করতে গিয়েই এ দিন এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে লড়তে হবে বামপন্থীদেরই। সিপিএম আর যা-ই করুক, কখনও সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেনি। তৃণমূলের কাছ থেকে কিন্তু সে রকম স্পষ্ট বার্তা কখনও দেখিনি।”

হঠাৎ করে ডাকা কংগ্রেসের নবান্ন অভিযানে এ দিন অবশ্য দলের বহু নেতাকেই দেখা যায়নি। তবে প্রদেশ সভাপতি অধীর এবং যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। একটি লরির উপরে দাঁড়িয়ে সভা করেন অধীর। তার পরে মন্দিরতলা থেকে নবান্নের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা রাস্তায় বসে পড়েন। বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। র্যাফও মোতায়েন ছিল। শেষ পর্যন্ত বিধায়ক অসিত মিত্রের নেতৃত্বে চার জনের প্রতিনিধিদল নবান্নে গিয়ে এক জন সহ-সচিবের কাছে দাবিপত্র দিয়ে ফিরে আসার পরে অবস্থান তোলে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন