এখন তিন কোটির কিছু বেশি মানুষ স্বল্পমূল্যে চাল পান বলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের আরও তিন কোটি মানুষকে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর। খাদ্যমন্ত্রী জানান, সব মিলিয়ে কম দামে চাল প্রাপকের সংখ্যা এ বার ছ’কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
আগামী আর্থিক বছরের শুরু থেকেই আরও তিন কোটি বাসিন্দাকে সস্তার চাল দিতে চাইছে রাজ্য। প্রশাসনেরই একটি অংশের মতে, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন ধরে নিয়ে এখন থেকেই ডোল বিলি শুরু করে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার।
খাদ্য দফতরের খবর, কম দামের চাল প্রাপকদের নতুন তালিকা তৈরি করছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং পুর দফতর। ২০১৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ছ’কোটি মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনাই সরকারের লক্ষ্য। সরকার তাঁদের সকলকে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার কার্ড দেবে। খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার অন্ত্যোদয় প্রকল্পে বাংলার এক লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে কার্ড দেবে না। তাই রাজ্যকেই বাড়তি আর্থিক বোঝা বহন করতে হবে।
বাড়তি বোঝা কতটা হবে?
এখন তিন কোটি ২১ লক্ষ মানুষকে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল সরবরাহ করার জন্য রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ৯০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। আরও তিন কোটি মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনলে মাসিক ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে হবে ১৮০ কোটি টাকারও বেশি।
খাদ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানান, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত খাদ্য সুরক্ষা আইনে এ রাজ্যের ছ’কোটিরও বেশি মানুষকে সস্তায় চাল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর রাজ্য সরকারের দাবি, যাঁদের রেশন কার্ড আছে, তাঁদের প্রত্যেককে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আনতে হবে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “খাদ্য সুরক্ষা আইন রূপায়ণে কেন্দ্র এখন আর তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। তাই তারা এই ব্যাপারে নতুন করে আমাদের কিছু জানায়নি।” খাদ্যমন্ত্রীর মতে, ওই আইন রূপায়ণ করতে হলে প্রতিটি রাজ্যকে যে-পরিমাণ চাল ও গম সরবরাহ করতে হবে, দিল্লির পক্ষে তা জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।
সম্ভব নয় কেন? পরিসংখ্যান দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জানান, ছ’কোটির বেশি লোককে সস্তায় চাল দিতে হলে কেন্দ্রকে বছরে বছরে ৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন চাল জোগাতে হবে। অথচ চলতি মাস থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত তারা রেশন গ্রাহকদের জন্য চাল বরাদ্দ করেছে মাত্র প্রায় সাত লক্ষ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। বাস্তবে এই বরাদ্দটুকুও ঠিকমতো পাচ্ছে না বিভিন্ন জেলা। “এই যেখানে অবস্থা, সেখানে ওরা বছরে ৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন চাল দেবে কী করে,” প্রশ্ন খাদ্যমন্ত্রীর।