নতুন ভোটার টানতে উদ্যোগী প্রশাসন, আগ্রহ বাড়ছে ‘নোটা’য়

কোথাও চলছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের খোঁজ। কোথাও স্কুল-কলেজে পাঠানো হয়েছে ভোটার হওয়ার আবেদনপত্র। স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হাত দিয়ে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হয়েছে ভোট দেওয়ার সংকল্পপত্র। আবার কোথাও হাটে-বাজারে, রেল স্টেশনে ইভিএম নিয়ে চলছে ‘মক পোলিং’।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

কোথাও চলছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের খোঁজ। কোথাও স্কুল-কলেজে পাঠানো হয়েছে ভোটার হওয়ার আবেদনপত্র। স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হাত দিয়ে অভিভাবকদের কাছে পাঠানো হয়েছে ভোট দেওয়ার সংকল্পপত্র। আবার কোথাও হাটে-বাজারে, রেল স্টেশনে ইভিএম নিয়ে চলছে ‘মক পোলিং’। প্রযুক্তির ব্যবহার করে স্থানীয় কেব্ল চ্যানেলে হচ্ছে ‘ফোন-ইন’ অনুষ্ঠান, সিনেমার ফাঁকে চলছে ছোট ভিডিও। হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে এ ভাবেই নতুন প্রজন্মকে বুথমুখী করতে চাইছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে ‘না-ভোট’ (নোটা) প্রসঙ্গেও।

Advertisement

হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সঞ্জয় বসু বলেন, “এর আগে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এ বার সেটা হচ্ছে। বিশ্বকর্মা পুজোয় নতুন ভোটারদের হাত দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো দিয়ে আমাদের প্রচার শুরু হয়েছিল। সেটা এখনও চলছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। জেলার সিনেমা হলগুলিতে সিনেমার ফাঁকে দেখানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের তথ্যচিত্র।” তাঁর সংযোজন, “নোটা নিয়েও এই প্রজন্মের উৎসাহ রয়েছে। আমরা নতুন ভোটারদের বলছি, প্রার্থী পছন্দ নাই হতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে যোগ দাও।”

প্রতি নির্বাচনের সময়েই রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম লক্ষ্য থাকে আঠারো বছর বয়সের ভোট। এই বয়সেই প্রথম ভোটের লাইনে দাঁড়ায় নতুন প্রজন্ম। যাদের মতের উপরে অনেকাংশে নির্ভর করে ভোটের ফলাফল। হাওড়া-হুগলির অনেকগুলি স্কুল, কলেজেই ইভিএম নিয়ে প্রচার করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। হাওড়া আন্দুল প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজ, উদয়নারায়ণপুরের মাধবীলতা কলেজের মতো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নকল ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা শেখাচ্ছেন কী ভাবে ভোট দিতে হবে।

Advertisement

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিডিও সুরজিৎ ঘোষ বলেন, “ভোটার তালিকায় ছাত্রছাত্রীদের নাম তোলার জন্য আমরা স্কুল ও কলেজে নতুন ভোটার ফর্ম পাঠিয়েছিলাম। তাতে খুব ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও স্কুল, কলেজে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে।” উদয়নারায়ণপুর ব্লক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ৮টি নকল ইভিএম নিয়ে দশ দিন প্রচার চলেছে। সাঁকরাইল ব্লক প্রশাসন নতুন ভোটারদের মধ্যে প্রচারের জন্য ৪টি নকল ইভিএম পেয়েছে। সেগুলি নিয়ে ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় ২৫ থেকে ৩০ মার্চ অবধি প্রচার চলেছে। সাঁকরাইলের বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “নতুন ভোটারদের মধ্যে ভালই উৎসাহ চোখে পড়ছে।” ডোমজুড়ের ব্লক অফিসের উল্টো দিকেই রয়েছে আজাদ হিন্দ ফৌজ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, “ব্লক অফিসের মধ্যেই নকল ইভিএম রাখা রয়েছে। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে এসে কী ভাবে ভোট দিতে হবে সেটি দেখছেন।”

হুগলির পাণ্ডুয়ার বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত জানান, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানো হয়েছে। ভোটারদের বুথমুখী করতে তৈরি হয়েছে গান। স্কুল, কলেজেও প্রচার হয়েছে। হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কল্পেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানান, স্থানীয় কেব্ল চ্যানেলে একদিন ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে জেলাশাসক নতুন ভোটারদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, “নাগরিক অধিকার নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে চেষ্টার কসুর করছে না প্রশাসন। মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়াও পাচ্ছি।”

কী বলছেন নতুন ভোটাররা?

হুগলির বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ রোডের বাসিন্দা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শুভ দে’র কথায়, “এটা ভেবে ভাল লাগছে যে, আমি এ বার দেশের সরকার তৈরিতে ভূমিকা নিতে পারব।” জেলারই শ্রীরামপুরের টিনবাজার এলাকার সাগুন সিংহ, বলাগড়ের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর এলাকার পায়েল কর্মকাররাও এ বারই প্রথম ভোট দেবে।

ভোট দেওয়া নিয়ে তাঁদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। সাগুন বলেন, “রাজনীতিতে শিক্ষিত ছেলেমেয়ের অভাব দেখা যাচ্ছে। তবে, সেই অভাব আমাদেরই পূরণ করতে হবে।” পায়েলের কথায়, “গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। ভাল রাস্তা চাই বলেই ভোট দেব।” হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসুদেবপুরের বাসিন্দা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনুশ্রী পল্ল্যে বলেন, “ছোটবেলায় বাবা-মা যখন ভোট দিতে যেত, তখন আমিও ভোট দেওয়ার বায়না করতাম। এত দিন পরে আমার কাছে সেই সুযোগ এসেছে।” জগাছার কোনা এলাকার বাসিন্দা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনন্যা বর্মনের কথায়, “রাজনীতি ও ভোট দেওয়া দু’টো আলাদা। তাই রাজনীতির অনেক কিছুই পছন্দ না করলেও আমি ভোট দেব।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ভোটাররা অনেকেই ‘নোটা’ বিষয়ে প্রশ্ন করছেন। ‘নোটা’তে ভোট দিলে সেই ভোট নথিভুক্ত হবে কিনা, সেই প্রশ্নও করছেন। দুই জেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নতুন ভোটারই এ বার ‘নোটা’ বোতাম টিপবেন বলে ঠিক করেছেন। শুধু নতুন ভোটার নয়, বহু বছর বুথমুখী হননি এমন অনেক ভোটারও এ বার প্রকাশ্যই ‘নোটা’তে ভোট দেওয়ার জন্য বুথে যাবেন। ডোমজুড়ের মাকড়দহ গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত মল্লিক বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে বুথে যাইনি। তবে এ বার যাব। হয়ত নোটাতেই ভোট দেব।”

নতুন ভোটারদের দলে টানতে রাজনৈতিক দলগুলি পথে নামিয়েছে তাদের ছাত্র সংগঠনগুলিকে। এসএফআই, টিএমসিপি, সিপি, এবিভিপি-নতুন ভোটারদের সামনে রেখে মিছিল করছে সকলেই। মিছিলে উঠছে ‘ভোট দিন’ স্লোগান। নতুন ভোটার ও নোটা, এই দুই-ই হয়ত এ বার দুই জেলায় হারজিতের অনুঘটক হয়ে উঠবে। একান্তে মানছেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন