বহরমপুরের পর এ বার নন্দীগ্রাম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সভার জন্য অনুমতি দিল না পুলিশ-প্রশাসন। যে জমিতে কংগ্রেস সভা করার জন্য অনুমতি চেয়েছে সেখানে সভা হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে-এই আশঙ্কাতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘যে জমিতে সভা হওয়ার কথা ছিল, সেই জমি নিয়ে একজন থানায় ডায়েরি করেছেন। যে জমি নিয়ে বিতর্ক থাকে সেখানে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয় না।’’
আগামী ২৮ নভেম্বর নন্দীগ্রামে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর সভা নিয়ে জেলা জুড়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল কংগ্রেস। চলছে প্রস্তুতি সভাও। আর সেই সভার জন্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের কিছু দূরে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সেখ আসরাফুলতুল্লার পরিবারের নিজস্ব জমি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আনোয়ার আলির অভিযোগ, ‘‘গত ১৮ নভেম্বর হলদিয়া মহকুমা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। মঙ্গলবার রাতে মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয় আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সম্ভবনা থাকায় ওই জায়গাতেও সভার অনুমতি মিলবে না।’’
কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত?
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, যে জায়গায় সভার জন্য অনুমতি চেয়েছেন সেই জমির মালিকদের মধ্যে একজন নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন। অভিযোগকারী আসরাফুলতুল্লার দাবি, ‘‘ওই জমিতে সভা হবে কি না জানি না। জানতে পেরেছি আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করতে লোকজন জড়ো হবে। তাই থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম।’’ ওই জমিতে সভা হলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের তরফে গত ২২ নভেম্বর হলদিয়ার মহকুমাশাসককে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়। নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার হলদিয়া মহকুমা প্রশাসনরের তরফে সভা করার আবেদন বাতিলের কথা জানানো হয়। হলদিয়ার মহকুমাশাসক মলয় রায় বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে যে জমিতে সভা করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল সেই জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ওখানে সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
এর আগে সভার জন্য নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সভা করার জন্য জায়গা চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল কংগ্রেসের তরফে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির তরফে জানানো হয়েছিল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কোন রাজনৈতিক দলকেই সভা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। তারপর নন্দীগ্রাম বাজার সংলগ্ন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্মৃতিরক্ষা কমিটির মঞ্চ ও সংলগ্ন এলাকা এলাকায় সভা করার জন্য আবেদন জানানো হয়। সেখানেও অনুমতি মেলেনি। তৃণমূল পরিচালিত নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহেরের কথায়, ‘‘নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কোন রাজনৈতিক দলকেই সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাত বছর আগেই এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’
আর খোদ অধীরের অভিযোগ, প্রথমে নন্দীগ্রামের যে কোনও জায়গায় সভার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছিল কোনও জায়গাতেই অনুমতি মিলবে না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ব্লক সভাপতির জমিতে সভা করতে চাইলাম। ৩৫জন শরিক জানিয়েছিল কোনও আপত্তি নেই। কেবলমাত্র একজনের আপত্তিতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে তৃণমূল সরকার আমাদের সভার অনুমতি দিল না। কিন্তু এভাবে আমাদের সভা বন্ধ করা যাবে না। আমরা হাইকোর্টে মামলা করছি।’’ আদালতের কাছে জরুরি ভিত্তিতে মামলা ফয়সলার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সময় লাগলে হয়তো সভার দিন পরবর্তিত হতে পারে। তবে নন্দীগ্রামে সভা থেকে বিরত হবেন না বলেই জানিয়েছেন অধীর।
তাঁর কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামে তৃণমূল মনে করে তারা ছাড়া আর কেউ নেই। সেখানে কংগ্রেসের সভাকেও তারা ভয় পায়। এটা লজ্জার।’’