পুজোর আগে ঘূর্ণাবর্তের ভ্রুকুটি, চিন্তায় উদ্যোক্তারা

দেবীপক্ষের শুরুতেই হাজির বৃষ্টি-অসুর। অক্টোবরের একেবারে শেষে গিয়ে পুজো। তাই বৃষ্টি অসুরের ভয় আর থাকবে না বলে ধরেই নিয়েছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। সেই ভাবনা থেকেই এবার মণ্ডপ অনেকটা খোলামেলা। কিন্তু প্রকৃতি যে এ ভাবে উল্টোপথে হাঁটবে তা কে ভেবেছিল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ২০:১৫
Share:

দেবীপক্ষের শুরুতেই হাজির বৃষ্টি-অসুর।

Advertisement

অক্টোবরের একেবারে শেষে গিয়ে পুজো। তাই বৃষ্টি অসুরের ভয় আর থাকবে না বলে ধরেই নিয়েছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। সেই ভাবনা থেকেই এবার মণ্ডপ অনেকটা খোলামেলা। কিন্তু প্রকৃতি যে এ ভাবে উল্টোপথে হাঁটবে তা কে ভেবেছিল? এত দেরিতে পুজো হয়েও তা বৃষ্টির কুদৃষ্টি থেকে রেহাই পেল না।

আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে, দেবীপক্ষে উপকূল এলাকায় হানা দিয়েছে নতুন এক অসুর। তার নাম ঘূর্ণাবর্ত। ওই ঘূর্ণাবর্তের জেরে পরিমণ্ডলে ঢুকছে প্রচুর মেঘ। সেই মেঘ থেকে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগামী দুই দিন হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময়টা হল ৮ অক্টোবর। কিন্তু ওই ঘূর্ণাবর্ত বর্ষা বিদায়ের লগ্নকে পিছিয়ে দিয়েছে। ওই ঘূর্ণাবর্ত যতদিন সক্রিয় থাকবে, ততদিন বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে থেকে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

Advertisement

দেশের কয়েকটি রাজ্যে এ বার অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু ভরপুর বৃষ্টি পেয়েছে। জুলাই মাসের প্রথম থেকে অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে এ রাজ্যে। মাঝের ক’টা দিন বৃষ্টি না হলেও, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অক্ষরেখা ফের বৃষ্টি নামায় রাজ্যে। অক্টোবরে এসে বৃষ্টিতে রাশ টানে বর্ষা। পুজোর উদ্যোক্তারা ভেবেছিলেন, বর্ষায় দক্ষিণবঙ্গে যা বৃষ্টি হওয়ার কথা তার থেকেও বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই পুজোর সময়টায় আর ভোগাবে না বৃষ্টি। এক উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘৮ অক্টোবর আমাদের রাজ্য থেকে বর্ষা বিদায় নেয়। পুজো এবার ২০ তারিখ। তাই বৃষ্টির ভয় থাকবে না বলে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। কিন্তু এমন সময়ে বর্ষাটা এল যাতে এখন ঘাটে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা।’’

আলিপুর হাওয়া অফিসের এক আবহবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, গত দিন দশেক ধরে আবহাওয়ার কিন্তু একটা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছিল। ভোরে শিশির পড়ছে। বাতাসের গতিপথটাও বদলাতে শুরু করেছিল একটু একটু করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত আর্দ্রতা অন্য কিছুর সঙ্কেত দিচ্ছিল। মায়ানমার উপকূলে একটা নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল ক’দিন আগে। তার জেরে সেখানে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাব এখানে পড়েনি। এ তল্লাটে আবহাওয়ায় কোনও অস্বাভাবিকতাও ছিল না দিন দুই আগে পর্যন্ত। সোমবার বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে নতুন করে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায় দক্ষিণ বঙ্গের পরিস্থিতির আমিল পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।

কলকাতায় প্রতিমার উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে। মহালয়ায় চক্ষুদানের পরে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা যাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। এতদিন গোটা মণ্ডপ ঢাকা ছিল বৃষ্টির ভয়ে। উদ্বোধনের ঘণ্টা বেজে যাওয়ায় সেই ঢাকনা খোলাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেঁকে বসল আবহাওয়া। কেউ ঠাকুর আনার দিনটা পিছিয়ে দিয়েছেন। আলিপুর হাওয়া অফিসে ঘন ঘন ফোন করছেন উদ্যোক্তারা। বৃষ্টি ঠিক কেমন হবে, হাল্কা না মাঝারি। কতদিন বৃষ্টি হবে। ঘূর্ণাবর্ত কী নিম্নচাপে পরিণত হবে- এই সব প্রশ্ন নিয়ে উদ্যোক্তারা মঙ্গলবার সারাদিনটা ব্যস্ত রেখেছেন আবহবিদদের।

ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব কতদিন থকবে?

গোকুলবাবুর জবাব, ‘‘ঘূর্ণাবর্তটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যে অবস্থায় রয়েছে তাতে আরও তিনদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছি আমরা। তিন দিনের মাথায় সেটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা। তবুও ঘূর্ণাবর্তটির গতিপ্রকৃতির দিকে আমাদের নজর রয়েছে। তার চারিদিকের বায়ুপ্রবাহের গতি কেমন থাকে তার উপরেই সব কিন্তু নির্ভর করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন