পিজির গবেষণা সংস্থায় তছরুপ নিয়ে মামলা ঠুকতেই সাত বছর

এক লক্ষ টাকার রাসায়নিক (ব্রমোথাইমল) কেনা হয়েছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকায়! স্টেনোগ্রাফার-টাইপিস্টের দফতরে কেনা হয়েছিল ১৮০০ মিলিলিটার ট্রাইগ্লিসারাইড। স্টেনোগ্রাফার-টাইপিস্টদের দফতরে ওই রাসায়নিক কী কাজে লাগে, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

• এক লক্ষ টাকার রাসায়নিক (ব্রমোথাইমল) কেনা হয়েছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকায়!

Advertisement

• স্টেনোগ্রাফার-টাইপিস্টের দফতরে কেনা হয়েছিল ১৮০০ মিলিলিটার ট্রাইগ্লিসারাইড। স্টেনোগ্রাফার-টাইপিস্টদের দফতরে ওই রাসায়নিক কী কাজে লাগে, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।

রাজ্যের একমাত্র চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ বা আইপিজিএমইআর-এ এ ভাবে প্রায় ৪০ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপ ধরা পড়েছিল ২০০৭ সালে। সাত বছর আগে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব অডিটে এই তথ্য উঠে আসে। পরে স্পেশ্যাল অডিটেও তছরুপের বিষয়টি ধরা পড়ে। আনন্দবাজারে সেই খবর প্রকাশের পরেও তদানীন্তন বাম সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

Advertisement

কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার সাত বছর পরে এ বার ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করল রাজ্যের নতুন সরকার। আইপিজিএমইআরের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণা-সহ বেশ কিছু অভিযোগে মামলা করেছে ভবানীপুর থানা। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ গ্রেফতার হয়নি।

কী ভাবে হয়েছিল তছরুপ?

১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পরীক্ষাগারের রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা হয়েছিল আইপিজিএমইআরে। ২০০৭ সালে সেই কেনাকাটার অডিট করতে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠে রাজ্যের অর্থ দফতরের অফিসারদের। তাঁরা জানান, ওই সব জিনিসপত্র বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনা হয়েছিল। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন, ২০০২ সালে ৩ অক্টোবর একটি সংস্থার কাছ থেকে ব্রমোথাইমল নামে একটি রাসায়নিক কেনা হয়েছিল। ওই রাসায়নিকের তৎকালীন বাজারদর ছিল প্রতি গ্রাম ৩৮ টাকা। অথচ কেনা হয়েছিল গ্রাম প্রতি ২৮৫০ টাকা দিয়ে। ওই রাসায়নিক কিনতে মোট ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে দেখানো হয়। আদতে যা হওয়া উচিত ছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও বলা হয়েছিল, ওই সব জিনিস কেনা হয়েছে কুলগোত্রহীন সংস্থার কাছ থেকে। অডিটে ধরা পড়ে, বহু ক্ষেত্রে টেন্ডার ছাড়াই কেনা হয়েছে জিনিসপত্র।

ওই অডিটেই জানা যায়, স্টেনো-টাইপিস্টের দফতরে ৪৯ হাজার টাকার ট্রাইগ্লিসারাইড কেনা হয়েছিল। স্টেনো-টাইপিস্টের দফতরে ওই রাসায়নিক কী কাজে লাগে, তার সন্ধান করতে গিয়ে অডিটরেরা জানতে পারেন, ওই দফতরের কর্মীরা এমন কোনও রাসায়নিক চোখেই দেখেননি। প্যাথোলজি বিভাগেও দু’দফায় প্রায় দেড় কোটি টাকার রাসায়নিক পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই দফতরও অডিটরদের জানায়, তারা কোনও রাসায়নিক পায়নি।

অর্থ দফতর সূত্রের খবর, বিষয়টি জানাজানির পর স্পেশ্যাল অডিটের ব্যবস্থা করা হয়। তাতেও একই তথ্য উঠে আসে। পরবর্তী কালে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি-র রিপোর্টেও তছরুপের বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু বাম সরকার ওই দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার দু’বছর পরে সিআইডি-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলে। খতিয়ে দেখে সিআইডি যে-রিপোর্ট দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই এত দিনে এফআইআর করা হয়েছে। তাতে অভিযোগ আনা হয়েছে আইপিজিএমইআরের প্রাক্তন অধিকর্তা, দুই স্বাস্থ্যকর্তা-সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে।

গত সেপ্টেম্বরে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তখন মামলা শুরু করা হয়নি। পুলিশি সূত্রের খবর, গত ১৫ জুলাই বিষয়টি নিয়ে ফের চিঠি দিয়েছেন আইপিজিএমইআরের অধিকর্তা প্রদীপবাবু। তার পরেই মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

কিন্তু তছরুপ ধরা পড়ার এত বছর পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?

বাম সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, বিষয়টি সামনে আসার পরেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য বিষয়টি পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনেও। “তার পরে কী হয়েছে, আমার জানা নেই,” বলছেন সূর্যবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন