প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী বাদ দিয়ে টেট প্রাথমিকে

প্রশিক্ষিত আর প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়েই টানাপড়েন চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল, প্রশিক্ষণহীনদের বাদ দিয়েই প্রাথমিক শিক্ষক বাছাইয়ের পরীক্ষা (টেট) হবে। সোমবার এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষার তারিখ, তার নিয়মকানুন শীঘ্রই জানানো হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকতার জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে প্রশিক্ষিত মাত্র ১৯ হাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:২৫
Share:

প্রশিক্ষিত আর প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়েই টানাপড়েন চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল, প্রশিক্ষণহীনদের বাদ দিয়েই প্রাথমিক শিক্ষক বাছাইয়ের পরীক্ষা (টেট) হবে। সোমবার এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

Advertisement

পরীক্ষার তারিখ, তার নিয়মকানুন শীঘ্রই জানানো হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকতার জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে প্রশিক্ষিত মাত্র ১৯ হাজার। তাই প্রশিক্ষণহীনদের বাদ দিয়ে ওই পরীক্ষা নেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে সরকারের অন্দরমহলেই। আর রাজ্য সরকার বলছে, কেন্দ্রের অনমনীয় মনোভাবের জেরেই তারা এই পথ ধরতে বাধ্য হয়েছে।

২০১৪-র ৩১ মার্চের পরে প্রাথমিক শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ (ডিএলএড) ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সে-কথা মাথায় রেখে গত ৩০ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষকতার জন্য টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট-এর দিন ধার্য করে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের জন্য তা পিছিয়ে যায়। তার পরে বহু বার প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগে ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রকে রাজ্য জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে শূন্য আসনের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। তাই সব প্রশিক্ষিত প্রার্থীকে নিয়োগ করলেও অর্ধেক আসন পূরণ হবে না। খোদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কিছুতেই লাভ হয়নি।

Advertisement

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্তারা। সেখানেও ইতিবাচক বার্তা না-মেলায় প্রশিক্ষণহীনদের বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সোমবার জারি করা নির্দেশিকায় পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ডে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগে ছাড়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু এ রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্র তা করেনি। তাই নিরুপায় হয়েই ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নিয়ম মেনে টেট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। পর্ষদকে সেই মর্মেই নির্দেশ দিয়েছে তারা।

এনসিটিই-র নিয়মে প্রাথমিক শিক্ষকতার জন্য প্রার্থীদের অন্তত দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করা এবং দু’বছরের প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক।

রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে নিয়মকানুন বদলে ২০১৩-য় প্রথম টেট নেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ৩৫ হাজার আসনের জন্য সে-বার প্রায় ২৫ লক্ষ আবেদনকারী পরীক্ষায় বসেছিলেন। ওই প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ হাজারকে নিয়োগ করেছিল সরকার। যে-সব প্রার্থী চাকরির সুযোগ পাননি, তাঁরা ২০১৪-র টেট-এ ফি ছাড়াই বসার সুযোগ পাবেন বলে জানায় পর্ষদ। ওই সংস্থার কর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, ২০১৩-র অ্যাডমিট কার্ডেই ২০১৪-র পরীক্ষা দেওয়া যাবে। প্রশ্ন উঠেছে, সেই প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা প্রশিক্ষণহীন, অ্যাডমিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁরা পরীক্ষায় বসতে না-পারলে আবার আইনি জটিলতা তৈরি হবে না কি?

পর্ষদের বক্তব্য, পরীক্ষা সংক্রান্ত যে-সব নির্দেশিকা আগে জারি করা হয়েছিল, তার সবই বাতিল হচ্ছে বলে সোমবার জানানো হয়েছে। তাই এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে না বলেই আশা করছেন সংস্থার কর্তারা।

স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশ অবশ্য এতটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। এক কর্তার কথায়, “বাম আমলের পিটিটিআই-জটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। কেন্দ্র যদি একটু নমনীয় হত, তা হলে ভাল হত।” কেন্দ্র যে রাজ্যকে এ ব্যাপারে আর ছাড় দেবে না, সেই বার্তা গত বছর অগস্টে কলকাতায় এসে দিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। রাজ্যে প্রশিক্ষিত প্রার্থীর অভাব নেই বলেই মনে করেন ওই মন্ত্রকের কর্তারা।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সোমবারেও বলেন, “আমাদের প্রশিক্ষিত প্রার্থীর অভাব আছে। তাই বারবার ছাড়ের আবেদন জানানো হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে।” তবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নির্দেশিকা এবং তার জেরে জটিলতা তৈরি হতে পারে কি না, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন