পুলিশ দুষ্কৃতীদের পক্ষে, তোপ বৃন্দার

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে দশ দিন। কিন্তু মূল অভিযুক্ত লঙ্কা ওরফে লঙ্কেশ্বর ঘোষ ছাড়া আর কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজ তীব্র হচ্ছে বিরোধীদেরও। পুলিশের দাবি, বাকি অভিযুক্তরা সকলেই ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছে বলেও জেলা পুলিশের একাংশের অনুমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
Share:

মঙ্গলবার ঘুঘড়াগাছির সভামঞ্চে মৃতা অপর্ণা বাগের ছোট মেয়ে দেবিকা বাগের সঙ্গে কথা বলছেন সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাত। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে দশ দিন। কিন্তু মূল অভিযুক্ত লঙ্কা ওরফে লঙ্কেশ্বর ঘোষ ছাড়া আর কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁজ তীব্র হচ্ছে বিরোধীদেরও। পুলিশের দাবি, বাকি অভিযুক্তরা সকলেই ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে গিয়েছে বলেও জেলা পুলিশের একাংশের অনুমান। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, তদন্তের জাল অনেকটাই গুটিয়েও আনা গিয়েছে।

Advertisement

তবে পুলিশ যাই বলুক না কেন সে কথায় কোনও রকম গুরুত্ব দিতে রাজি নয় বিরোধীরা। মঙ্গলবার ঘুঘড়াগাছিতে গিয়েছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্যা বৃন্দা কারাত। তিনি নিহত অপর্ণা বাগের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সঙ্গে গ্রামে দাঁড়িয়ে তিনি তীব্র ভাষায় শাসক দলের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে আক্রমণ করে বলেন, “এত বড় একটা ঘটনা। অথচ পুলিশ এখনও পর্যন্ত মাত্র এক জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের কেন পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারল না? এতেই বোঝা যায় পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার কী অবস্থা।” তিনি বলেন, “পুলিশ দুষ্কৃতীদের পক্ষে। আমরা বাকী অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে বাধ্য করব।”

এ দিন ঘুঘড়াগাছি গ্রাম থেকে ফিরে তিনি কৃষ্ণগঞ্জ বাজারে একটি প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে তিনি বলেন, “প্রশাসনের একটা দায়িত্ব আছে। কিন্তু এখানে দেখছি পুলিশ অপরাধীদের কী ভাবে বাঁচাতে পারে তার চেষ্টা করছে। অপরাধীরা গ্রেফতার না হওয়ায় গ্রামের মহিলারা এখনও আতঙ্কে আছেন।” তবে বৃন্দা কারাতের এই দাবি যে মিথ্যা নয় তা জানিয়ে দিলেন গ্রামেরই অন্য মহিলারা। ২৩ নভেম্বর ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন অপর্ণা বাগ। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আরও তিন জন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যোগমায়া বিশ্বাস, কালীদাসী বিশ্বাস বলেন, “এখনও ঘুমের মধ্যেও সেদিনের ঘটনাটা দেখতে পাই। ওরা যে এখনও অনেকে গ্রেফতার হয়নি। যদি আবার গ্রামে হানা দেয়?”

Advertisement

ঘটনার দিনই পুলিশের কাছে লঙ্কা-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন গ্রামেরই এক যুবক। পরে নিহতের স্বামী দেবানন্দ বাগও ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যার মধ্যে তিন জনের নাম প্রথম অভিযোগেও ছিল। পুলিশ ২৪ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনা থেকে লঙ্কাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বাকি এগারো জন এখনও পুলিশের নাগালের বাইরেই থেকে গিয়েছে। যদিও কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশের দাবি যে, তারা বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও কেন বাকি অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ? জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে অভিযুক্তদের অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে। আর সেটা কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়।” তাঁর দাবি, “লঙ্কা উত্তর ২৪ পরগনায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষছিল। একেবারে শেষ মুহূর্তে আমরা তাকে ধরে ফেলি। কৃষ্ণগঞ্জের ওই এলাকার একেবারেই কাছে বাংলাদেশ সীমান্ত। সেখানে বেশ কিছু জায়গা-সহ চাপড়ার মহখোলা, মলুয়াপাড়া, রাঙিয়ারপোতা এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাছাড়া অধিকাংশ অভিযুক্ত পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব নয়।” জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আশা করছি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে পারব।”

যদিও এই আশ্বাসে আর ভরসা পাচ্ছে না ঘুঘড়াগাছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন