পুলিশকে চড় তৃণমূলের খেলোয়াড় সাংসদ প্রসূনের

ফের পুলিশকে মারধরের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এ বার অভিযোগের তির সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। অভিযোগ, বুধবার লেকটাউনে আইনভঙ্গ করার জন্য এক ট্রাফিক পুলিশ প্রসূনবাবুর গাড়ি আটকালে তিনি উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ওই কনস্টেবলকে ধমকাতে শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

ফের পুলিশকে মারধরের অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এ বার অভিযোগের তির সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। অভিযোগ, বুধবার লেকটাউনে আইনভঙ্গ করার জন্য এক ট্রাফিক পুলিশ প্রসূনবাবুর গাড়ি আটকালে তিনি উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ওই কনস্টেবলকে ধমকাতে শুরু করেন। এর পর ‘এ সিপিএমের লোক’ বলে সপাটে চড় কষিয়ে দেন ওই কনস্টেবলকে। কিছু ক্ষণ পরে ফোন করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারকে ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগও করেন তিনি। প্রসূনবাবুর দাবি, তিনি খেলোয়াড়। তাই মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি। তবে ধমক দিলেও ওই কনস্টেবলকে তিনি মারেননি।

Advertisement

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পুলিশকে মারধর বা আক্রমণের ঘটনা ঘটলে হালে এ রাজ্যে যা ঘটছে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে চড় মারার অভিযোগে তৃণমূল সাংসদকে গ্রেফতার করা দূরের কথা, ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভাঙার মামলা করারও সাহস দেখায়নি পুলিশ। উল্টে সাংসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ওই ট্রাফিক কনস্টেবলকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। রাতে ওই কনস্টেবল বিধাননগরের পুলিশ কমিশারেটের ডিসি (ট্রাফিক ও সদর)-এর কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগেই অবশ্য স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি অতীন রায় ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে লেকটাউন থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ, সুপরিকল্পিত ভাবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে প্রসূনবাবুর নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ জন্য ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি করেছেন অতীনবাবু।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ নিজের গাড়িতে লেকটাউন থেকে বাঙ্গুরের দিকে যাচ্ছিলেন প্রসূনবাবু। অভিযোগ, তাঁর গাড়ির চালক লেকটাউন মোড়ে ‘নো ইউ-টার্ন’ লেখা বোর্ড থাকা সত্ত্বেও আইন ভেঙে ‘ইউ-টার্ন’ নিতে যান। ওই সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল তারাগতি বিশ্বাস গাড়িটি আটকান। প্রসূনবাবুর গাড়ির চালককে তিনি বলেন, “ইউ-টার্ন নেওয়া যাবে না। ট্রাফিক আইন ভাঙা যাবে না।” অভিযোগ, প্রসূনবাবুর গাড়ির চালক তাঁকে বলেন, “এটা সাংসদের গাড়ি।” এতে ওই পুলিশ কনস্টেবল জানান, তিনি সাংসদকে চেনেন না। নিয়ম সবাইকে মানতে হবে। গাড়ির চালক তবু জোর করে গাড়ি ঘোরাতে চেষ্টা করেন। তখন ফের গাড়ি আটকান ওই পুলিশকর্মী। এর পরে তিনি গাড়ির নম্বর নোটবুকে টুকতে শুরু করেন। এতেই রেগে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন প্রসূনবাবু।

বিকেলে তারাগতিবাবু বলেন, “ওই সাংসদ গাড়ি থেকে নেমে বলেন, এত হল্লা কিসের? চিৎকার কিসের? আমাকে তুমি চেন না! আমি সাংসদ।” তারাগতিবাবুর অভিযোগ, “এর পরে তিনি বলেন, এ সিপিএমের লোক। তার পর আমাকে ধাক্কা দিয়ে থাপ্পড় মারেন।”

এ নিয়ে কী বলছেন প্রসূনবাবু?

তাঁর বক্তব্য, “ওই ট্রাফিক পুলিশ সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। আমি ওঁকে চড় মারিনি। তবে এটা ঠিক, আমি খেলোয়াড়। তাই মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। আমার গাড়িটা আটকাতে একটু উত্তেজিত হয়ে ওকে ধমক দিয়েছিলাম। কিন্তু মারিনি।”

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পর ওই পুলিশকর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধান পুলিশ কমিশনারেট অফিসে। পরে পুলিশ মহলেই প্রশ্ন উঠে, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে মারধর করা হল। তা তিনি জানালেনও। তার পরেও ওই সাংসদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ দায়ের করা হল না? বিধাননগরের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “এই বিষয়ে কনস্টেবলের যদি কিছু অভিযোগ করার থাকে তা হলে তাঁকে ডিসি ট্রাফিকের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগ জানানো হলে তবেই আমরা দেখব।”

রাতে বিধাননগরের পুলিশ কমিশারেটের ডিসি (ট্রাফিক ও সদর) রনেন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই ট্রাফিক কনস্টেবল তাঁর কাছে সাংসদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি লেকটাউন থানায় পাঠানো হচ্ছে। থানা তদন্ত করে সেই অভিযোগে কী কী ধারা দেওয়া হবে তা ঠিক করবে। এ দিন রাতে অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে লেকটাউন ট্রাফিক গার্ডের ইনস্পেক্টরের মোটরবাইকে চেপে চলে যান তারাগতিবাবু। জানা গিয়েছে, ওই কনস্টেবল সংবাদমাধ্যমের সামনে যা যা বলেছেন, ডিসির কাছে সেই অভিযোগই দায়ের করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন