খোদ রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের উপরে আস্থা খানখান হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়ে পাড়ুই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার সেই হাইকোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগ উঠল, বীরভূমের পাড়ুই গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মীকে খুনের ষড়যন্ত্রে পুলিশের একাংশও জড়িত। শুক্রবার উচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ করেন পাড়ুই মামলার অন্যতম আবেদনকারী নেপালকৃষ্ণ রায়ের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
২০১৩ সালের ২১ জুলাই রাতে পাড়ুইয়ের প্রাক্তন স্কুলকর্মী সাগর ঘোষকে গুলি করে মারা হয়। সেই ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে বিশেষ দল (সিট) গড়ে দিয়েছিল হাইকোর্টই। কিন্তু সেই বিশেষ দলের তদন্ত উচ্চ আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পুলিশের উপরে অনাস্থা প্রকাশ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পাড়ুই মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-কে দেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। তাঁর মন্তব্য ছিল, মূল অভিযুক্তকে বাঁচাতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে। ওই মামলার যাবতীয় নথি অবিলম্বে সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার জন্য সিট-কে নির্দেশ দেন বিচারপতি। তার পরেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে রাজ্য সরকার। এ দিন সেই মামলারই শুনানি ছিল।
সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই তাঁর সওয়ালে বলেছেন, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি টন্ডন নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করেছেন। তার পরে ডিভিশন বেঞ্চ মামলার আবেদনকারীকে নির্দেশ দেয়, সিটের তদন্তে কী কী ফাঁক রয়েছে এবং কী কী কারণে পুনরায় ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চাওয়া হচ্ছে, তা লিখিত ভাবে জানানো হোক।
মামলার তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়া কেন দরকার, আদালতে এ দিন তা ব্যাখ্যা করেন আবেদনকারীর কৌঁসুলি বিকাশবাবু। তিনি জানান, রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে সাগরবাবুকে খুন করা হয়েছে। এবং পুলিশের একাংশও সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নিহত প্রাক্তন স্কুলকর্মীর স্ত্রী সরস্বতীদেবী এবং পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ অভিযোগ করেছেন, সাগরবাবু গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশ তাঁদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্রথম এফআইআর নিখিয়ে নিয়েছিল। কেন বন্দুক ঠেকিয়ে এফআইআর লেখানো হয়েছিল, পুলিশ তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
ওই আইনজীবী আদালতে আরও জানান, সাগরবাবু গুলিবিদ্ধ হন ২১ জুলাই রাতে। আর তাঁর মৃত্যু হয় ২৩ জুলাই। হাতে দু’দিন সময় পেয়েও পুলিশ তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করেনি। সেই জন্যই পুলিশের একাংশকে ষড়যন্ত্রের অংশীদার বলে সন্দেহ করছেন তাঁরা।
বিশেষ তদন্ত দলকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন আইনজীবী বিকাশবাবু। তাঁর অভিযোগ উচ্চ আদালত ওই বিশেষ তদন্ত দল গড়ে দেওয়া সত্ত্বেও তারা সাগর-হত্যা ষড়যন্ত্রের কোনও তদন্তই করেনি। তা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের বীরভূম জেলার নেতা অনুব্রত মণ্ডল প্ররোচনামূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করেন। সেই বক্তব্যের সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তারও তদন্ত হয়নি বলে ওই আইনজীবীর অভিযোগ।