পচা জল ও দুর্গন্ধ ঠেলে বস্তা টিপে ভাল আলুর খোঁজ

কথায় আছে, ঝুড়ির একটা আলু পচা হলে অন্যগুলো পচতে কত ক্ষণ! মিলনমেলাতেও হচ্ছে সেটাই। তফাত বলতে ঝুড়ি নয়, বস্তা। হ্যাঙারে একটির উপরে একটি আলুর বস্তা রাখা। একেবারে নীচের কিছু বস্তা থেকে চুইয়ে বেরিয়ে আসছে জল। হ্যাঙারে ঢুকলেই ভ্যাপসা গন্ধ ঝাপটা মারছে। আর সেই পচা জল ও গন্ধের মধ্যেই বস্তা টিপে টিপে ভাল আলু খুঁজে চলেছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

মিলনমেলায় সংরক্ষিত আলুর পচা গন্ধ সামলে কাজ করতে ভরসা নাকে কাপড়ই। বুধবার শৌভিক দের তোলা ছবি।

কথায় আছে, ঝুড়ির একটা আলু পচা হলে অন্যগুলো পচতে কত ক্ষণ!

Advertisement

মিলনমেলাতেও হচ্ছে সেটাই। তফাত বলতে ঝুড়ি নয়, বস্তা। হ্যাঙারে একটির উপরে একটি আলুর বস্তা রাখা। একেবারে নীচের কিছু বস্তা থেকে চুইয়ে বেরিয়ে আসছে জল। হ্যাঙারে ঢুকলেই ভ্যাপসা গন্ধ ঝাপটা মারছে। আর সেই পচা জল ও গন্ধের মধ্যেই বস্তা টিপে টিপে ভাল আলু খুঁজে চলেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিশাল তিনটে হ্যাঙ্গারে তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য রয়েছে কয়েকটি দরজা। এই দরজা দিয়ে যৎসামান্য যে-হাওয়া ঢুকছে, তাতে আলু ভাল থাকার কথা নয়। থরে থরে সাজানো সেই সব বস্তার সামনে দাঁড়িয়ে

Advertisement

গেলেন হাতিবাগান থেকে আসা এক আলু ব্যবসায়ী। বললেন, “এ তো পচে জল বেরিয়ে গিয়েছে! কে

কিনবে এই আলু?” পচন কতটা ব্যাপক, যেন সেটা যাচাই করতেই গুদামে ঘুরে ঘুরে আলুর বস্তা টিপে টিপে দেখতে লাগলেন তিনি। ঠাকুরপুকুর থেকে আসা এক ব্যবসায়ী গুদামে ঘুরতে ঘুরতে বলেন, “ভিতরের এই ভ্যাপসা গরমে আলু তো এমনিতেই পচে যাবে!”

বুধবার দুপুরে মিলনমেলায় সরকারি দামে আলু কিনতে হাজির হন বিভিন্ন বাজার কমিটির প্রতিনিধিরা। তাঁরা নিজেরাই ট্রাক ভাড়া করেছেন। হাতিবাগানের ওই ব্যবসায়ী জানালেন, মঙ্গলবার তিনি সরকারের কাছে আলু চেয়েছিলেন। এখান থেকে আলুর ট্রাক বাজারে গিয়েছিল। “কিন্তু ভাল আলু পেয়েছি মাত্র ২৭ বস্তা। বাকি সবই পচাধসা। তাই বেছে বেছে আলুর বস্তা নিয়ে যাব বলে এ বার নিজেই এসেছি,” বললেন ওই ব্যবসায়ী।

কিন্তু নিজেরা বস্তা বাছতে গিয়েও যে বিপত্তি! এক ক্রেতা বলেন, “বস্তা বাছতে গিয়ে তো আর প্রত্যেকটা আলু আলাদা আলাদা করে দেখতে পাচ্ছি না। বাইরে থেকে টিপে বস্তার ভিতরের পুরোটা বোঝা যাচ্ছে না। ভিতরে পচা আলু রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন হ্যাঙার থেকে আলু বাছতে চাইছেন। কিন্তু তাতে আপত্তি করছেন পুরসভার কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, “যে-কোনও একটা হ্যাঙার থেকেই আলু বাছুন।” এই নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই গোলমাল বেধে যাচ্ছে পুরকর্মীদের।

মিলনমেলার বাইরে এখানে-ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে আলু-ভর্তি বেশ কয়েকটি ট্রাক। সেখানেও পচে যাচ্ছে আলু। কয়েক জন চালক জানালেন, গত ৮ অগস্ট থেকে আলুর ট্রাক নিয়ে তাঁরা মিলনমেলায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখনও তাঁদের ট্রাক থেকে আলু নামানো হয়নি। গোরাচাঁদ

ধল নামে এক ট্রাকচালক বলেন, “খড়্গপুর থেকে আমাদের ট্রাক ধরা হয়েছে ৫ অগস্ট। ওখানে তিন দিন থাকার পরে ৮ তারিখে মিলনমেলায় আনা হয়েছে সেই ট্রাক। তখন থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ট্রাকেই ৪৪০ বস্তা আলু পচে গেল।” গোরাচাঁদবাবু জানান, তাঁর ট্রাকে ২২ টন আলু তোলা হয়েছিল। এখন তার কতটুকু আস্ত আছে সন্দেহ। কারণ, আলু পচে জল বেরিয়ে ট্রাকের নীচে গড়িয়ে পড়ছে। যে-ত্রিপল দিয়ে আলুর বস্তা ঢাকা হয়েছে, তা থেকেও পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, “তিন-তিন বার ট্রাকের ত্রিপল পাল্টাতে হয়েছে।” একই অভিযোগ ট্রাকচালক শফিকুল মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, “আমার ট্রাকে প্রায় চার লক্ষ টাকার আলু রয়েছে। পুরো ট্রাকের আলুই মনে হচ্ছে নষ্ট হয়ে গেল। সরকার যদি এই আলু না-নেয়, তা হলে আমাদের ছাড়ছে না কেন?”

রাজ্যের এগ্রিকালচার মার্কেটিং বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান, এ দিন মিলনমেলা থেকে প্রায় ৫০ ট্রাক আলু বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন