ফের কোর্টের দ্বারস্থ হতে চান অশোক

দশম শ্রেণির নিহত ছাত্রীর পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিতে, ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল সেভ ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি দল। সব কিছু ঠিক থাকলে, দ্রুত কলকাতা হাইকোর্টে ধূপগুড়ির মামলাটির তদন্ত নিয়ে ‘রিভিউ’ আবেদন করতে চলেছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫২
Share:

দশম শ্রেণির নিহত ছাত্রীর পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিতে, ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল সেভ ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি দল। সব কিছু ঠিক থাকলে, দ্রুত কলকাতা হাইকোর্টে ধূপগুড়ির মামলাটির তদন্ত নিয়ে ‘রিভিউ’ আবেদন করতে চলেছেন তাঁরা। বুধবার ধূপগুড়িতে এসে ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। ছাত্রীর বাবার কাছ থেকে মামলা সংক্রান্ত সব কাগজ চেয়ে পাঠিয়েছেন অশোকবাবু। ধূপগুড়ি প্রতিবাদী মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সেই নথিপত্র অশোকবাবুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ দিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দিও। অভিযুক্তদের জামিনের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে আবেদনও করেছিলেন ভারতীদেবী। সে বার জামিন নাকচ হয়ে যায়। পরে অবশ্য সকলে জামিন পান। এ দিন ভারতীদেবীও বলেন, ‘‘আইনি লড়াইয়ে আমরা প্রথমে পারিনি। পুলিশ তো কিছুই তদন্ত করেনি। আমরা নথিপত্র খতিয়ে দেখে আবার আবেদন করব।’’

Advertisement

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তৃণমূল নেতার ডাকা গভীর রাতের একটি সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। ওই সভাতেই ছাত্রীকে মারধর করে, থুতু চাটানোর নির্দেশ দেন সভার মাতব্বররা। ছাত্রীর বাবা-মায়ের অভিযোগ, ছাত্রীটি সে সময় সভা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং তাঁদের আটকে রাখা হয়। সারা রাত ছাত্রীর খোঁজ মেলেনি, পর দিন ভোরে লাগোয়া রেললাইন থেকে ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। সে দিন সন্ধেতেই ১৩ জনের বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা। অভিযুক্তরা সকলেই তৃণমূলের নেতা-সমর্থক হওয়ায়, প্রথমে অভিযোগ নিতেই চাওয়া হয়নি বলে দাবি, তারপরে মামলার তদন্ত নিয়ে জেলা পুলিশ এবং রেল পুলিশ ঠেলাঠেলি করে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের দু’একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও, ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা পুলিশি তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে কলকাতা রওনা দেওয়ার পরে মূল অভিযুক্তরা ধরা পড়ে। ময়নাতদন্তে রিপোর্টে ধর্ষণ বা খুনের কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করা হয়। পুলিশও চার্জশিটে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উল্লেখ করে। তার জেরেই অভিযুক্তদের জামিন পেতে সুবিধে হয় বলে সেভ ডেমোক্রেসিকর প্রতিনিধিদের দাবি।

প্রাক্তন বিচারপতি অশোকবাবু জানিয়েছেন, মামলার নথিপত্র সব খতিয়ে দেখবেন। নতুন করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিতে হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানানো হবে। মামলায় খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগ থাকলে কড়া শাস্তির নির্দেশ মিলবে তাতেই ছাত্রীর পরিবার সুবিচার পাবে বলে অশোকবাবুরা মনে করছেন। এ দিন অশোকবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তো চার্জশিটে কিছুই লেখেনি। আমরা সকলে মিলে নতুন করে আদালতের দ্বারস্থ হব। তবে তার আগে মামলার সব নথিপত্র চেয়েছি।’’

Advertisement

হুমকির জেরে টানা দেড় সপ্তাহ ধরে ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছে ধুপগুড়ির নিহত দশম শ্রেণির ছাত্রীর পরিবার। ওই পরিবারকে দ্রুত বাড়িতে ফেরানোর দাবিও জানানো হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারকে। এ দিন ধূপগুড়ি থেকে বিকেলে জলপাইগুড়ি গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতীদেবী এবং সেভ ডেমোক্রেসির সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীরা। চঞ্চলবাবু জানিয়েছে, পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ করে ছাত্রীর পরিবারকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, ‘‘ছাত্রীর বাড়ির কাছাকাছি পুলিশ টহলদারি চালায়। ওই পরিবার যদি বাড়ি ফিরতে চায়, আমরা নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করব।’’

এ দিন, ছাত্রীর মামাবাড়িতে ডেভ ডেমোক্রেসি সদস্যদের সভায় ভিড় দেখে ভরসা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রীর বাবা-মা। ভিড়ে উপস্থিত ছিল রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরাও। কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও সভায় ছবি তুলতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। ধূপগুড়ি প্রতিবাদী মঞ্চের দাবি, পরিবারের গতিবিধির মতো সভাতেও নজরদারি চলেছে। তৃণমূলের তরফে অবশ্য সভায় রাজনীতির করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক গুড্ডু সিংহের অভিযোগ, ‘‘অরাজনৈতিক মঞ্চের নাম করে এসে সকলে রাজনীতির কথা বলেছেন। পরীক্ষা চলাকালীন সাউন্ডবক্স ব্যবহার করে সভায় বিধি ভঙ্গ হয়েছে।’’ উদ্যোক্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, এক জনের বাড়ির উঠোনে দশ মিনিটের জন্য সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা হয়েছে, প্রকাশ্যে কোনও সভা হয়নি।

অশোকবাবুদের সঙ্গে আর আগে দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন ছাত্রীর বাবা। এ দিন অশোকবাবুকে শ্বশুরবাড়ির উঠোনে দেখেই কেঁদে ফেলেন ছাত্রীর বাবা। বলেন, ‘‘দেখুন স্যার, কী অবস্থা হয়েছে আমাদের। নিজেদের বাড়িতেও থাকতে পারছি না।’’ ছাত্রীর বাবার আবেগ ছুঁয়ে যায় প্রাক্তন বিচারপতিকে। তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে পরিবারের পাশে থাকার শপথ নেওয়ার আর্জি জানান। ছাত্রীর মামাবাড়ি থেকে ফিরে নতুন করে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানান অশোকবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন