ফের খুলছে ডানলপ, তবু কাটছে না সংশয়

বারবার চার বার। ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা খুলেছে আর বন্ধ হয়েছে। ২০০৮ সালে পুজোর মুখে শেষ বার বন্ধ হয়েছিল। এ বার সেই পুজোর মুখেই, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ফের খোলা হচ্ছে দরজা। কিন্তু ক’দিনের জন্য, তা নিয়ে শ্রমিকেরা যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন। খুব ভাল থেকে চরম খারাপ সব পরিস্থিতিই গঙ্গাপারের এই রবার কারখানার শ্রমিকেরা দেখেছেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

সাহাগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share:

বারবার চার বার।

Advertisement

১৯৯৮ থেকে ২০১৪ হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা খুলেছে আর বন্ধ হয়েছে। ২০০৮ সালে পুজোর মুখে শেষ বার বন্ধ হয়েছিল। এ বার সেই পুজোর মুখেই, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ফের খোলা হচ্ছে দরজা। কিন্তু ক’দিনের জন্য, তা নিয়ে শ্রমিকেরা যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন।

খুব ভাল থেকে চরম খারাপ সব পরিস্থিতিই গঙ্গাপারের এই রবার কারখানার শ্রমিকেরা দেখেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জেনেছেন, নানা জানা ও অজানা কারণে হারানো সুদিন ফিরে পাওয়া মোটেই সহজ নয়। সোমবার মেঘলা দুপুরে এক প্রবীণ শ্রমিক তাই রীতিমতো ধমকের সুরে বলে ওঠেন, “কারখানা নয়, বলুন দরজা খুলছে!”

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরেই ডানলপ খোলা নিয়ে সরকারি স্তরে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। সোমবার রাজ্যের শ্রম দফতরে মন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে ডানলপ কর্তৃপক্ষ এবং সিটু ও আইএনটিইউসি-সহ সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেখানে স্থির হয়, ২৫ তারিখ একটি অনুষ্ঠান করে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনার আংশিক মিটিয়ে দেওয়া হবে। পরে পর্যায়ক্রমে বাকিটা মেটানো হবে। শ্রমমন্ত্রী বলেন,“প্রথম কিস্তিতে ডানলপ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ৭৯ লক্ষ টাকা দেবেন।” যে জনা চল্লিশ শ্রমিক ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ জনের পরিবারকে বকেয়া টাকা দিতে প্রাথমিক ভাবে সম্মত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই প্রতিশ্রুতিতে পুজোর আগে কিছুটা স্বস্তি পেলেও হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানা চত্বরে শ্রমিকদের তেমন উৎসাহের ছবি কিন্তু চোখে পড়েনি। কয়েক দশকের পুরনো কর্মী রামেশ্বর সিংহ বলেন, “কারখানা বন্ধের পরে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাতে কালঘাম ছুটেছে। প্রথমেই চাই, বকেয়া পুরোপুরি মিটিয়ে দেওয়া হোক। তার পরে অন্য কথা। এত দিন পরে আংশিক নিয়ে কী হবে? ”

১৯৯৮ সালে ছাবারিয়া গোষ্ঠীর হাতে থাকাকালীন প্রথম বার ডানলপ কারখানার দরজা বন্ধ হয়। পরে রুইয়া গোষ্ঠীর হাতে এসে বন্ধ হয়েছে আরও তিন বার। বাম আমলে, ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ বার কারখানার দরজা খুলেছিল। কিন্তু বারবার এই খোলা-বন্ধের মাঝে উৎপাদন সে ভাবে চালু হয়নি। যন্ত্রপাতি সেই থেকেই অচল। জীবিকা হারিয়ে শ্রমিকেরা কেউ ছোটোখাটো কারখানায় কাজ করেছেন, কেউ বা ব্যবসা করার চেষ্টা করেছেন।

কারখানার হোসপাইপ বিভাগের এক কর্মী বলেন,“কারখানা খুললেও কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয় থাকাতেই অনেকে আর এখানে ফিরতে চান না। উৎপাদন কী দিয়ে হবে? কারখানার মধ্যে কি আর কিছু আছে? সবই চুরি হয়ে গিয়েছে!” ডানলপ কর্মী আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন,“আজ সকালেও দেখলাম মহিলারা মাথায় করে লোহার টুকরো নিয়ে যাচ্ছে। তামা-পেতল শেষ। এখন লোহা চুরি হচ্ছে।”

ট্রাক ডিভিশনের কর্মী গৌতম সিংহও বলেন, “যে যন্ত্রগুলিতে কাজ আমরা করতাম, চোরেরা চোখের সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে গেল। নতুন যন্ত্র না কিনলে কারখানা চালু হবে কী দিয়ে?” বস্তুত গোটা শ্রমিক মহল্লায় ঘুরপাক খাচ্ছে আরও এক সংশয়। এক প্রবীণ শ্রমিক নেতার কথায়, “ডানলপ যখন বন্ধ হয়েছিল, তার তুলনায় পরিস্থিতি-পরিবেশ বদলে গিয়েছে। বাজারে নতুন সব কোম্পানি। নতুন প্রযুক্তি। সেই লড়াইটাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।” সকলেই চাইছেন, দুর্দিন ঘুচুক। কিন্তু তার জন্য কর্তাদের যে সদিচ্ছা বা উদ্যোগ লাগে, তা নিয়ে সংশয়টাই কাটছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন