বাইক-বাহিনী রুখতে ব্যর্থ হলে কোপ ডিএম-এসপিদের ঘাড়েই

পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাইক-বাহিনীর দাপট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। তাই এ বার লোকসভার ভোটে প্রচারের শুরুতেই এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বাইক-বাহিনী যদি ভোট-প্রক্রিয়ার কোনও পর্যায়ে কোনও ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে এবং প্রশাসন যদি তা রুখতে ব্যর্থ হয়, সে-ক্ষেত্রে জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা জানিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাইক-বাহিনীর দাপট নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। তাই এ বার লোকসভার ভোটে প্রচারের শুরুতেই এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বাইক-বাহিনী যদি ভোট-প্রক্রিয়ার কোনও পর্যায়ে কোনও ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে এবং প্রশাসন যদি তা রুখতে ব্যর্থ হয়, সে-ক্ষেত্রে জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা জানিয়ে দিয়েছে। এবং সেই ব্যবস্থা মানে অভিযুক্ত ডিএম অথবা এসপি-কে বদলি পর্যন্ত করা হতে পারে, জানিয়ে দিয়েছেন কমিশনের এক কর্তা।

Advertisement

কমিশন সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাইক-বাহিনীর উৎপাত নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে অভিযোগ আসছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী অফিসার শৈবাল বর্মণ মঙ্গলবার এ বিষয়ে কমিশনের নির্দেশ জানিয়ে দেন। তাঁর কথায়, নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশিকা ডিএম এবং এসপি-দের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভোটের প্রচারে আড়ম্বর থাকলেও কোনও রকম সন্ত্রাসের পরিবেশ যাতে তৈরি না-হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে জেলা প্রশাসনকেই।

ভোটে বাইক-বাহিনীর দাপট নিয়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রায় সব জেলা থেকেই অভিযোগ আসছিল। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরের এক কর্তা জানান, অন্যান্য রাজ্যে ভোটের প্রচার পর্বে বাইক-বাহিনীর তেমন ভূমিকা থাকে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ওই বাহিনীই ‘নির্বাচনী সন্ত্রাস’-এর প্রতীক হয়ে উঠেছে বলে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছিল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে যথাযথ নিরাপত্তা চেয়ে কংগ্রেসের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে যে-মামলা করা হয়েছিল, সেখানেও বাইক-বাহিনীর হুমকির কথা বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তার ভিত্তিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দেয়, পঞ্চায়েতের ভোটের কোনও প্রচারে একটির বেশি মোটরবাইক ব্যবহার করা যাবে না। এবং সেটাও করতে হলে পুলিশের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। এত কিছুর পরেও অবশ্য পঞ্চায়েত ভোটে বাইক-বাহিনীর দাপট আটকাতে পারেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

এই অভিজ্ঞতা থেকে এ বার ভোটের প্রচারের গোড়া থেকেই কঠোর মনোভাব নিয়েছে কমিশন। অভিযোগ, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঝান্ডা লাগিয়ে বাইক-বাহিনী রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করেছে। মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরের কর্তারা বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নিয়মিত রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত জানান, এ বার ‘স্টার ক্যাম্পেনার’ বা তারকা প্রচারকদের মিছিল বা কনভয়ে গাড়ির সংখ্যার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রার্থীর মিছিলে বা প্রচারে মোটরবাইক-সহ যে-সব যানবাহন থাকবে, সেগুলোর নম্বর আগাম পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করতে হবে। সাধারণ ভাবে প্রচারের মিছিলে কোনও প্রার্থী বা দলকে একসঙ্গে ১০টির বেশি গাড়ি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে না। যানবাহনের সংখ্যা বেশি হলে ২০০ মিটারের ব্যবধান রাখতে হবে। অর্থাৎ ২০০ মিটার অন্তর ১০টি করে যানবাহন রাখা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন