বিজেপির তোপ, কালো টাকা সাদা করছে তৃণমূল

সারদা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই বিব্রত তৃণমূল। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শুধু সারদাতেই শেষ হচ্ছে না! তৃণমূলের নির্বাচনী তহবিলে ‘ত্রিনেত্র কনসালটেন্সি’ নামে একটি সংস্থার অনুদানে গরমিলের অভিযোগ নিয়ে অতি সম্প্রতি সরব হয়েছে বিজেপি। সেই তালিকায় আরও একটি অভিযোগ যুক্ত হল রবিবার। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন জানান, নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, ‘ইউনিট কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি সংস্থা তাদের ১১ লক্ষ টাকা দিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

সারদা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই বিব্রত তৃণমূল। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শুধু সারদাতেই শেষ হচ্ছে না!

Advertisement

তৃণমূলের নির্বাচনী তহবিলে ‘ত্রিনেত্র কনসালটেন্সি’ নামে একটি সংস্থার অনুদানে গরমিলের অভিযোগ নিয়ে অতি সম্প্রতি সরব হয়েছে বিজেপি। সেই তালিকায় আরও একটি অভিযোগ যুক্ত হল রবিবার। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন জানান, নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, ‘ইউনিট কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি সংস্থা তাদের ১১ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। অথচ সেই সংস্থা ১৩ কোটি ৬১ লক্ষ ৭৮ হাজার ২২৬ টাকা লোকসানে চলছে! রাহুলবাবুর অভিযোগ, “এত টাকা লোকসানে চলা সংস্থা কেমন করে ১১ লক্ষ টাকা অনুদান দিল! তার মানে এখানেও কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হয়েছে।” ত্রিনেত্র-প্রশ্নে এ দিন রাহুলবাবুর দেওয়া নতুন তথ্য, “তৃণমূল নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ত্রিনেত্র এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের হরিশ মুখার্জি শাখা থেকে তাদের ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যাঙ্কের ওই শাখায় ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টই নেই!”

বস্তুত, বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদেরই অভিযোগ, সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যাওয়ার পরে নানা কায়দায় তৃণমূল এখন কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করছে! দলের আজীবন সদস্যপদের নামে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও আসলে সেই ব্যবস্থার অংশ। আবার নির্বাচনী তহবিলেও তারা একই ধরনের কাজ করেছে বলে অভিযোগ, যা এখন সামনে আসছে। নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলেরই পেশ করা তথ্য থেকে রাহুলবাবু যেমন এ দিন দেখিয়েছেন, ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে এক দিকে কর্মীদের চাঁদার পরিমাণ কমেছে এবং উল্টো দিকে, ছবি বিক্রি ও বাইরের অনুদান মারফত দলের আয় বেড়েছে। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে তৃণমূলের সদস্যদের থেকে গৃহীত চাঁদার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১০ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৮০ টাকা। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৯০৫ টাকায়। এখান থেকে রাহুলবাবুর বিশ্লেষণ, “দলের কর্মীরা ভাবতে শুরু করেছেন, আমরা আর কেন টাকা দেব? দল তো সারদার টাকাতেই ধনী!”

Advertisement

বিজেপি নেতৃত্বের ইঙ্গিত, ক্ষমতায় বসার পরে তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের উপরে নির্ভরতা কমেছে। নির্ভরতা বেড়েছে ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের উপর। ওই ধরনের ব্যবসায়ীদের কালো টাকায় পুষ্ট হয়েছে তৃণমূল। আর সেই সব টাকাই ছবি বিক্রি এবং বিভিন্ন সংস্থার অনুদান হিসাবে দেখাচ্ছে তারা। কোনও রাজনৈতিক দলকে ২০ হাজার টাকার উপরে অনুদান দিতে হলে তা চেকে দিতে হয়। রাহুলবাবু জানান, তৃণমূল ওই নিয়ম পরিবর্তনের দাবিও জানিয়েছে। দেশের আর কোনও দল এই দাবি করেনি। তৃণমূলের ওই দাবিতেও কালো টাকা- রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

রাহুলবাবু বলেন, “আমাদের সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তৃণমূলের এই সব দুর্নীতি এবং শিল্পায়নে এই সরকারের ব্যর্থতার কথা ২০ জানুয়ারি বর্ধমানের জনসভায় তুলবেন।”

রাহুলবাবুদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের এ সব দেখার কথা। তারা কিছু বলছে না আর একটি দল হইচই করছে!” তৃণমূল নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, যে দল এখনও নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুদানের সাম্প্রতিক হিসাবই পেশ করেনি, তারা অন্য দলের ভুল ধরলে সেই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে হবে কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন