বাড়ির রান্নার গ্যাসে চলছে দোকানে রান্না

সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, গৃহস্থালির রান্নার গ্যাস (১৪ কেজি ২০০ গ্রাম) বাড়ি ছাড়া কোনও মতেই অন্যত্র ব্যবহার করা যায় না। বিয়েবাড়ি বা উৎসবেও নয়।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩২
Share:

অবৈধ: বাড়ির গ্যাসে চলছে দোকান। ঢাকা আছে সিলিন্ডার। —নিজস্ব চিত্র।

আগে ছিল একেবারে প্রকাশ্যে। এখন একটু আড়ালে।

Advertisement

রাস্তায় খোলাখুলি গৃহস্থালির ব্যবহারের গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে চলছে দোকান, হোটেল। নাগেরবাজার, দমদম রোড থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে বাঙুর অ্যাভিনিউ, লেকটাউনে গেলে দেখা যাবে, রাস্তার দু’পাশের চায়ের দোকান থেকে ভাতের হোটেলে অবৈধ ভাবে ওই গ্যাসেই চলছে রান্না। সবটাই পুলিশের চোখের সামনে।

সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, গৃহস্থালির রান্নার গ্যাস (১৪ কেজি ২০০ গ্রাম) বাড়ি ছাড়া কোনও মতেই অন্যত্র ব্যবহার করা যায় না। বিয়েবাড়ি বা উৎসবেও নয়। ওই সব ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডার (১৯ কেজি) ব্যবহারেরই নিয়ম। কিন্তু নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্যবসা চলছে গৃহস্থালির রান্নার গ্যাসেই। বছরখানেক আগে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ ও পুলিশ একসঙ্গে কয়েকটি জায়গায় হানা দেওয়ার পরে কিছু দিন বন্ধ ছিল সে সব। ফের শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ, এ বার কাপড় দিয়ে একটু আড়াল করে। দক্ষিণ দমদম পুর ভবনের ঠিক পাশের এক দোকানির কথায়, ‘‘বাড়িতে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া সোজা। দোকানেও মেলে। দামের চেয়েও ১০০-১৫০ টাকা বেশি দিয়ে তাই কিনি।’’

Advertisement

কিন্তু এই গ্যাস তো এ ভাবে বাজারে বিক্রির কথা নয়। সে জন্য বছরে পরিবার-পিছু গ্যাস সিলিন্ডার বরাদ্দের ব্যাপারে এখন কড়া কেন্দ্র। গ্যাস বিতরণের ক্ষেত্রে আধার কার্ডও বাধ্যতামূলক। তাহলে কী ভাবে মিলছে এই গ্যাস?

পুলিশ জানিয়েছে, যে সমস্ত গ্রাহকদের বছরে ১২টি গ্যাস সিলিন্ডার লাগে না, এমন পরিবারকে কিছু মুনাফা দিয়ে সিলিন্ডার কিনে নেয় কালোবাজারিরা। তাদের খোঁজে ভুয়ো গ্রাহকও থাকে। গ্যাস দেওয়ার ‘ডেলিভারি বয়’ এবং কিছু অসৎ ডিলারেরও এমন চক্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে। এখন গৃহস্থালি গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু দাম ৭৫৭ টাকা। এর পরে ভর্তুকিও মেলে। অন্য দিকে, বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম ১৩৪৭ টাকা। গৃহস্থালির গ্যাসই একটু বেশি দামে কিনে নেয় কালোবাজারিরা।

উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় রান্নার গ্যাসের এমন কালোবাজারি চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটার্স অ্যাসোসিয়েশন’। বিষয়টি নিয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগেও বারবার জানানো হয়েছে বলে দাবি সংস্থার সদস্যদের। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেন, ‘‘দমদম, লেকটাউন ছাড়াও রাজারহাট, সোদপুর, বারাসতের বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে খাবারের ছোট হোটেল, স্টলে গৃহস্থালির রান্নার গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। আমরাও কয়েক বার কালোবাজারিদের ধরিয়ে দিয়েছি। এতে গ্রাহকেরাই বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ লাগাতার নজরদারির অভাবেই এমনটা ঘটছে বলেও জানিয়েছেন দেবব্রতবাবু।

পুলিশ কী বলছে?

ওই এলাকাগুলি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ( জোন-২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘এ নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’

আবেদনের পরে অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও বাড়িতে সিলিন্ডার না মেলার অভিযোগ নতুন নয়। সিলিন্ডারের এই বেআইনি কারবার বন্ধে পুলিশ ঠিক মতো ব্যবস্থা না নেওয়াই যে গৃহস্থালির রান্নার গ্যাসের আকালের কারণ, তা মানছেন ডিলারদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন