কপালে ভাঁজ। সামনে খোলা বুকিং রেজিস্টার পাখার হাওয়ায় এলোমেলো উড়ছে।
খোলা খাতার সামনে মালবাজারের এক রিসর্ট মালিকের আক্ষেপ“মশককুল এ বার ভাতে মারবে আমাদের!”
উদ্বেগটা তাঁর একার নয়, শিলিগুড়ি থেকে মালবাজার, হোটেল-রিসর্ট মালিকদের উদ্বেগটা এখন ডুয়ার্স জুড়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে।
ঘনঘন ফোন, মুহুর্মুহু বাতিল হচ্ছে বুকিং। জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের থাবায় বাস্তবিকই রুজিতে টান পড়তে চলেছে উত্তরের হোটেল ব্যবসায়ীদের।
অথচ ছবিটা গত বছরও ছিল একেবারেই উল্টো। ভরা বর্ষায় ঘন ঘন ফোন‘পুজোয় দুটো ঘর চাই দাদা!’ সেই চাহিদা এখন অতীত। বছর ঘুরতে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপে আতঙ্কের মেঘ জমেছে উত্তরের আকাশে। তার জেরেই বাতিল হয়ে যাচ্ছে বুকিং।
বর্ষায় তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ডুয়ার্সের জঙ্গল। তবে পুজোর বুকিং শুরু হয়ে যায় এই সময়েই। এ বার সে জায়গায় বুকিং বাতিল হওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব দিব্যেন্দু দেবের গলায় হতাশা, “ডুয়ার্স ঘোরার পরিকল্পনা শিকেয় তুলে দিচ্ছেন অধিকাংশ পর্যটক। এনসেফ্যালাইটিসের ভয়ে কে আর বর্ষার জঙ্গলে আসতে চায় বলুন!” তিনি জানান, জঙ্গলের ‘কোর’ এলাকায় প্রবেশ নিষেধ থাকলেও বর্ষার জঙ্গল অনেকেই পছন্দ করেন। তাই জুলাই-অগস্টের উত্তরবঙ্গেও মাঝারি মাপের একটা ভিড় লেগেই থাকে ওই সব হোটেল-রিসর্টে। এ বার সে সব উধাও।”
লাটাগুড়িতে ৪২টি বেসরকারি রিসর্ট রয়েছে। ডবল বেড এবং ডরমেটরি মিলিয়ে অন্তত ৬৮০টি ঘর। ১৪৬৭ জন পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভরা পুজোর মরসুমে ঠাসাঠাসি করে সংখ্যাটা আরও খানিক বেড়ে যায়। গত বছর, পুজোর দু’মাস আগে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি ঘর বুকিং হয়ে গিয়েছিল। আর এ বছর?
যে কটা ঘর বুকিং হয়েছিল গত কয়েক দিনে তার অধিকাংশই বাতিল হয়ে গিয়েছে।
লাটাগুড়ির অদূরেই মূর্তি। সেখানেও গোটা কুড়ি রিসর্ট রয়েছে। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন, গরুমারা ওয়েলফেয়ার ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, “এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে সত্যিই আমরা চিন্তিত। মূর্তির রিসর্টগুলিতে সুইমিং পুলেও দু’দিন অন্তর জলও পাল্টে ফেলা হয়। কিন্তু পর্যটকরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।” শিলিগুড়ির একটি প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের পক্ষে সন্দীপ সরকার বলেন, “অবস্থাটা বাস্তবিকই কঠিন। সাকুল্যে মাস দুয়েক দূরে পুজো। কয়েক দিন পরেই ট্রেনের টিকিট বুকিং শুরু হয়ে যাবে। ডুয়ার্সে পর্যটকদের ঢল নামার কথা। কিন্তু, হোটেল বুকিং বাতিলের জেরে পুজোর ব্যবসায় ইতিমধ্যেই প্রশ্ন চিহ্ন পড়ে গিয়েছে।”
উত্তরবঙ্গের এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে চিন্তিত কলকাতার পর্যটন সংস্থাগুলিও। একটি বহুজাতিক পর্যটন সংস্থার পক্ষে শিবশঙ্কর দত্ত বলেন, “পর্যটকেরা ঘোরার সময় কোনও ঝুঁকি নিতে চান না। তাই আর এ পথ মাড়াতে চাইছেন না তাঁরা।” অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম-এর কর্ণধার রাজ বসুর কথায়, “কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে মহামারি ঘোষণা করা হলে বাংলার বাইরে থেকে যাঁরা ডুয়ার্সে আসেন, তাঁরাও আর এ পথ মাড়াবেন না। সে ক্ষেত্রে পুজো কেন, শীতকালেও পর্যটন মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”