অরিন্দম গিরি মাসুম আসিক মোল্লা অনিরুদ্ধ কর্মকার। ছবি: নিজস্ব চিত্র
কলাভবনের প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে ধৃত বিশ্বভারতীর তিন ছাত্রের জামিন নামঞ্জুর করে, তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল বোলপুর আদালত। আর এক অভিযুক্ত (যে বহিরাগত) অবশ্য এখনও অধরা।
ধৃত অনিরুদ্ধ কর্মকার ওরফে মিস্টার, মাসুম আসিক মোল্লা ওরফে আলিক এবং অরিন্দম গিরি ওরফে রাজুকে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ফের আদলতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন বোলপুরের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম সৌরভ নন্দী। এ দিন সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “বহিরাগত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা ও তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী অফিসার অশোক সিংহ মহাপাত্র তিন ছাত্রের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানিয়েছিলেন। বিচারক তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।”
বিশ্বভারতী-কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি)। যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে ইউজিসি। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে। পাঁচটি অধ্যাপক পদে নিয়োগে বেনিয়ম, মহিলা কর্মীর প্রতি লিঙ্গ বৈষ্যমেরও অভিযোগ উঠেছে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর সঙ্গে রয়েছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। চলতি মাসেই এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। তার পরে ফের এক ছাত্রীর উপর যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটায় উদ্বিগ্ন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা হল, নির্যাতিত ছাত্রীটি সব জানিয়ে কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন মঙ্গলবার। কিন্তু, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তা পুলিশকে জানানোর প্রয়োজনই মনে করেননি। সংবাদমাধ্যমে হইচই হওয়ায় শনিবার অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে (যাঁরা কলাভবনেরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র) সাসপেন্ড করা হয়। শনিবারই থানায় অভিযোগ করে বিশ্বভারতী।
কিন্তু, বিশ্বভারতীর এই ভূমিকায় বিস্মিত ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। ইউজিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে মনে হয়েছে, ওই ঘটনা চেপে দেওয়ার জন্য ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের উপর চাপ ছিল। এবং সেই চাপ দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই। সত্যিই এমন হয়ে থাকলে তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ বলে মনে করছে ইউজিসি। কেন বিশ্বভারতী অভিযুক্ত তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করল, তা নিয়েও স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে ইউজিসি সূত্রে জানানো হয়েছে। আগামী দিনে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন এ ধরনের কোনও ঘটনা আড়াল করার পথে না হাঁটে, তার জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা আনার কথাও ভাবছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
অন্য দিকে, তদন্তে নেমে পুলিশ এ দিন দফায় দফায় ধৃত তিন ছাত্রকে কখনও এক সঙ্গে, আবার কখনও আলাদা জেরা করেছে। ধৃত অনিরুদ্ধর বাড়ি মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানার গৌরীপুর গ্রামে। মুর্শিদাবাদেরই নবগ্রাম থানার পাঁচগ্রামের বাসিন্দা মাসুম আসিক মোল্লা। আর এক ধৃত অরিন্দম বেহালার হো চি মিন সরণির বাসিন্দা। বোলপুরের বাসিন্দা, চতুর্থ অভিযুক্তকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। আদালত চত্বরে এ দিন অরিন্দম অবশ্য দাবি করেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।”
বীরভূম জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কলাভবনের কিছু সিনিয়র ছাত্রছাত্রী ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন ঘটনা ধামাচাপা দিতে। তাঁদের এই ‘সক্রিয়তা’র পিছনে বিশ্বভারতীর কোনও মহলের ভূমিকা আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। ইতিমধ্যেই এমন জনা চারেক ছাত্রছাত্রীর নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলবেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
ভিন্ রাজ্যের নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে এ দিন কথা বলেছেন বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব। নির্যাতিতার পরিবার তাঁকে জানিয়েছে, তদন্তে সহায়তার জন্য ওই ছাত্রী শান্তিনিকেতন ফিরবেন। তবে সুস্থ হওয়ার পরে। ছাত্রীটির পরিবার সূত্রের খবর, আতঙ্কিত এবং অসুস্থ ওই ছাত্রীর মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে হলেও স্বাভাবিক হচ্ছে।