বীরভূমে কেন্দ্রীয় দল, দ্বিমুখী বার্তা বিজেপির

সরকারি স্তরে রাজ্যের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস থাকবে। আবার রাজনৈতিক স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইও অব্যাহত থাকবে। বিজেপি-র এই দ্বিমুখী কৌশলই স্পষ্ট হয়ে গেল বৃহস্পতিবার বীরভূমের ইলামবাজারে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের ঘোষণায়। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং সাংসদ বলবীর পুঞ্জের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদল রবিবার যাবে ইলামবাজারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

সরকারি স্তরে রাজ্যের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস থাকবে। আবার রাজনৈতিক স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইও অব্যাহত থাকবে। বিজেপি-র এই দ্বিমুখী কৌশলই স্পষ্ট হয়ে গেল বৃহস্পতিবার বীরভূমের ইলামবাজারে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের ঘোষণায়। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং সাংসদ বলবীর পুঞ্জের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদল রবিবার যাবে ইলামবাজারে।

Advertisement

সন্দেশখালির মতো বীরভূমে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আগেই। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে বুধবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তারিফ করেছেন, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই প্রতিনিধিদলের নাম ঘোষণার মধ্যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে যাবতীয় সহযোগিতা করলেও পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক জমি দখলের ক্ষেত্রে কোনও রকম আপস করা হবে না এই কৌশলই এই পদক্ষেপের মধ্যে স্পষ্ট। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাজনৈতিক বিরোধ যা-ই থাক, নরেন্দ্র মোদী প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে উন্নয়নের কাজ করেন না। অন্যান্য রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গের জন্য যা যা করণীয়, দরাজ হাতে তা-ই করবেন প্রধানমন্ত্রী।”

কিন্তু একই সঙ্গে ওই শীর্ষ নেতার বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যে ভাবে বিজেপি কর্মীদের উপরে জুলুম করছে, তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। একটি-দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মেনে নিলেও ধারাবাহিক আক্রমণের ঘটনা সহ্য করা যায় না বলেই বিজেপি নেতারা মনে করছেন। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতারও বোঝা উচিত, তাঁর আমলে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। তাঁর দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে ধীরে ধীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের একটি প্রেক্ষাপটও তৈরি হচ্ছে। বিজেপি-র পক্ষ থেকে ঘনঘন কেন্দ্রীয় দল পাঠানো তারই ইঙ্গিত।

Advertisement

বলবীরের নেতৃত্বাধীন এ বারের প্রতিনিধিদলে থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, সাংসদ কীর্তি আজাদ ও দলের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি আব্দুল রশিদ। বীরভূমের ইলামবাজারে নিহত হয়েছেন বিজেপি কর্মী শেখ রহিম, আক্রান্ত হয়েছেন দলের সংখ্যালঘু কর্মীরাও। সেই কারণেই প্রতিনিধিদলে সংখ্যালঘু মোর্চার নেতা রশিদকে রাখা হয়েছে। এর আগে ইলামবাজারে ঘুরে এসেছে শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে রাজ্য বিজেপি-র প্রতিনিধিদল, কলকাতায় মিছিল করেছে সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য শাখা। এ বারের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল দিল্লি ফিরে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও সংখ্যালঘু কমিশনের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। প্রতিনিধিদলে থাকবেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। তিনি এ দিন জানিয়েছেন, সন্দেশখালিতে ঘুরে-যাওয়া কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলও আজ, শুক্রবারই রাজনাথের হাতে রিপোর্ট তুলে দেবে।

সিদ্ধার্থনাথ এ দিন বলেন, “উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি নেতারা খুন হচ্ছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা আরও শোচনীয়।” তাঁর মতে, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ সিংহের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতার হাতে সরকারের রাশ রয়েছে। তৃণমূলের মদতেই বিজেপি কর্মীদের উপরে লাগাতার আক্রমণ চলছে বলে দাবি করেছেন তিনি। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছে, তাকে পুঁজি করেই আসন্ন পুরভোটে ঝাঁপাতে চাইছে তারা। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য দু’বছর পরে বিধানসভা ভোট। সেই লক্ষ্যেই বাংলার উপরে বিশেষ নজর দিচ্ছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যের উন্নয়নে হাত বাড়ানোর বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ কিন্তু ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন।

মোদীর কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার আহ্বানের মতো পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূল-মুক্ত রাজ্য গড়ার ডাক দিয়ে ময়দানে নামছে বিজেপি। দলের নেতারা মনে করছেন, এ বারের ভোটে ‘রিগিং’ না হলে বিজেপি অনেক আসন ঝুলিতে পুরত। বিজেপি-র এই উত্থানই কপালে ভাঁজ ফেলছে তৃণমূল ও বামেদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন