বাংলাদেশি নিয়ে আক্রমণে মমতা, নরম সুরে বিজেপি

ভোট যত বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এগোচ্ছে, শরণার্থী ও অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্রমশ সুর নরম করছে বিজেপি। উল্টো দিকে, বিজেপি মানুষে-মানুষে বিভাজনের চেষ্টা করছে বলে সুর চড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন কয়েক আগেই শ্রীরামপুরের সভায় নরেন্দ্র মোদী বলে গিয়েছিলেন, “১৯৪৭ সালের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

ভোট যত বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এগোচ্ছে, শরণার্থী ও অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্রমশ সুর নরম করছে বিজেপি। উল্টো দিকে, বিজেপি মানুষে-মানুষে বিভাজনের চেষ্টা করছে বলে সুর চড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দিন কয়েক আগেই শ্রীরামপুরের সভায় নরেন্দ্র মোদী বলে গিয়েছিলেন, “১৯৪৭ সালের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন। ১৬ মে-র পরে তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।” শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে এক জনসভায় বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ কিন্তু বললেন, “কারও উপরে অত্যাচার হবে না। কিন্তু যাঁরা বিনা ভিসা-পাসপোর্টে এখানে এসেছেন, তাঁদের ওখানে (বাংলাদেশ) ফিরে যাওয়াই উচিত। আমরা তাঁদের চিহ্নিত করব।”

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে চলে আসা শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর নীতি নিয়ে চিরকালই চলেছে বিজেপি। এনডিএ জমানায় দিল্লি-মুম্বইয়ে এ রকম কিছু লোককে পাকড়াও করাও হয়েছিল। যদিও এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন ভাবে সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির। এ দিন খড়্গপুরে মমতা বলেন, “কেউ কেউ চান, বাংলায় বাংলায়, হিন্দু-মুসলিমে ভাগাভাগি হয়ে যাক। আমি জানি, আপনারা বঙ্গভঙ্গ চান না।” মেদিনীপুরে তিনি বলেন, “আমার কাছে নির্দিষ্ট খবর রয়েছে, দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। আমরা দাঙ্গা লাগাব না। দাঙ্গা লাগানো আমার উদ্দেশ্য নয়।”

Advertisement

আগামী ১২ মে রানাঘাট, বনগাঁ বা বসিরহাটের মতো সীমান্ত লাগোয়া কেন্দ্রগুলিতে ভোট। এ দিন কেশিয়াড়িতে রাজনাথ অবশ্য দাবি করেন, “হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদাভেদ করার পার্টি বিজেপি নয়। বিজেপি এই রাজনীতি করে না। আমরা মানুষকে সুবিচার দিই। মুসলমানরা ভারতের যে রাজ্যেই থাকুন না কেন, সুরক্ষিত থাকবেন।” কিন্তু পাশাপাশি তিনি এ-ও জানাতে ভোলেননি, যে হিন্দুরা বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদেরই বিজেপি শরণার্থীর চোখে দেখে। রাজনাথের কথায়, “হিন্দুরা যাঁরা এসেছেন, তাঁরা শরণার্থীই। অত্যাচারের জন্যই তাঁরা এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হন।” বারাসতে এক কর্মিসভায় বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অনন্তকুমারও বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীরা আমাদের ভাই। জিগর কা টুকরা। তাঁদের আমরা নাগরিক সম্মান দেব। কিন্তু যাঁরা এ দেশে উৎপাত করবে তাঁদের আমরা অসম, বাংলা এবং ভারতের বিভিন্ন কোনা থেকে খুঁজে ফের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেব।” বৃহস্পতিবারই পুরুলিয়ার রায়বাঘিনী ময়দানে মমতা বলেছিলেন, “দিল্লি-বোম্বেতে কাজ করলে ওরা (বিজেপি) আগে বাংলার ছেলেদের ট্রেনে তুলে পাঠিয়ে দিত। ভুলে গিয়েছেন? নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার আগেই বলছে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে পাঠিয়ে দেব।” এ দিন বারাসতের বিজেপি প্রার্থী, জাদুকর পিসি সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, বিজেপি আসলে শরণার্থী-প্রেমী। তাঁর কথায়, “মোদীজি যে শরণার্থীদের ভালবাসেন তার বড় উদাহরণ আমি নিজেই। আমি বাংলাদেশে থেকে আসা শরণার্থী। উনি যে শরণার্থীদের কতটা ভালবাসেন তা আমাকে টিকিট দিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন।”

বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে বলে মমতা যখন সুর চড়াচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রাদেশিকতার অভিযোগ এনেছে বিজেপি। শ্রীরামপুরে নরেন্দ্র মোদী কটাক্ষ করেছিলেন, “মমতাজি ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। বিহার, ওড়িশা থেকে গরিব মানুষ এই রাজ্যে কাজে এলে ওঁর রাগ হয়। হেনস্থা হন তাঁরা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে কেউ এলে উনি তাঁদের ‘আদর’ করে এই রাজ্যে রেখে দেন।”

এ দিন খড়্গপুরে মমতা পাল্টা বলেন, “বলে কিনা বাঙালি-অবাঙালি ভাগ করে দাও। আমি কাউকে ভাগ করব না। সবাই আমার ভাই। ভাগ তারাই করে যাদের চোখ-মুখ-কান নেই।” তাঁর সংযোজন, “পেপার টাইগার আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন